সূর্যিমামা জাগার আগে জেগে উঠে হাজীগঞ্জ বাজার

ক্রেতাদের ব্যাপক উপস্থিতিতে জমজমাট বিকিকিনি

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
সূর্যিমামা জাগার আগে জেগে উঠে হাজীগঞ্জ বাজার। প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে শুরু করে সকাল ১১টা পর্যন্ত চলে একটানা ঈদের বাজার। লকডাউন অমান্য করে প্রতিনিয়ত চলছে ক্রেতা-সাধারণের ব্যাপক জনসমাগম ও জমজমাট বিকিকিনি। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। এই বিকিকিনিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, নেই ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব।
গতকাল বুধবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ উপলক্ষে কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের জমজমাট বিকিকিনি। দোকানীরা সেহরির পর-পরই তাদের দোকান খুলে বসেন। আর কেনাকাটা করতে গ্রাম থেকে দলে-দলে নারীরা আসেন হাজীগঞ্জ বাজারে। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। তাদের মাঝে নেই ন্যূনতম সচেতনতা। দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভীড়। নেই শারীরিক দূরত্ব ও জীবাণুনাশক কোন কার্যক্রম।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ফজর নামাজের পর থেকেই কাস্টমার পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাজারের অভিজাত দোকানগুলোসহ কাপড়িয়া পট্টি ও হাজীগঞ্জ বাজারের বড়-বড় মার্কেটের কাপড়ের দোকানগুলোতে এসব ভীড় জমতে থাকে। এছাড়া গরিবের মার্কেট খ্যাত হকার্স মার্কেটেও উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। করোনাভীতি কাটিয়ে দেদারছে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। তবে এ বিষয়ে কোনো দোকানী বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
কথা হয় একজন নারী ক্রেতার সাথে। তিনি বলেন, বাচ্চা-কাচ্চাদের মানানো যায় না। কষ্ট হলেও তাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে হয়। অপর এক নারী ক্রেতা জানান, মেয়ের শশুর বাড়িতে ঈদ সামগ্রী (জামা-কাপড় ও সেমাই, চিনি, আতপ চাল, বাদাম, কিসমিস, নারকেল ইত্যাদি) পাঠাতে হয়। তাই বাজারে এসেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে তারা বলেন, আল্লাহ ভরসা, কিছু হবে না।
অথচ দিন যত গড়াচ্ছে দেশে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমনে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকহারে ততই বাড়ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ছুটি। বন্ধ সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ। এই করোনা সংক্রমনে চাঁদপুর জেলাও পিছিয়ে নেই। এ পর্যন্ত ৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাজীগঞ্জে আক্রান্ত ৫ ও মৃত ১ জন।
মহামারী করোনার সংক্রমণ এড়াতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিকরণে নির্দেশনা দেয় সরকার এবং চাঁদপুর জেলায় প্রাণঘাতী এই করোনা ভাইরাসের সংক্রমন হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণে গত ১০ মে সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সব শপিং মল, বিপণী বিতান, মার্কেট, দোকান-পাট, ব্যবসা কেন্দ্র আবশ্যিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে সংক্রামক ঝুঁকি মোকাবেলায় গত ৯ এপিল চাঁদপুর জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের পাশাপাশি নিয়মিত চলছে প্রশাসনের অভিযান, সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশের টহল এবং জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সচেতনতামূলক কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং জরুরি কাজ ছাড়া বের না হওয়ার সরকারি নির্দেশ থাকলেও তা মানছে না হাজীগঞ্জবাসী।
সরকারি নির্দেশনা ও স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক লকডাউনের মাঝে গত কয়েকদিনে হাজীগঞ্জ বাজারসহ উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। খুলে গেছে বিপণী বিতান, মার্কেট ও দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চলছে রিকশা, অটোরিকশাসহ প্রায় সব ধরনের যানবাহন। হচ্ছে জনসমাগম এবং এই জনসমাগমের কারণে প্রতিনিয়ত সকালে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কে দেখা গেছে যানজট।

২১ মে, ২০২০।