স্বপ্ন দেখার মধ্যেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি

চাঁদপুরে জাতীয় ভোটার দিবসে

এস এম সোহেল
‘ভোটার হব, ভোট দেব’ এ শ্লোগানে এই প্রথম সারাদেশের মতো চাঁদপুরে জাতীয় ভোটার দিবস পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জেলা নির্বাচন অফিসের আয়োজনে সার্কিট হাউজ থেকে শিক্ষমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি’র নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এসে হয়।
পরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে দিবসটির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভোটার দিবসটি কেন মার্চ মাসে করা হলো, কারণ এ মাসটির গুরুত্ব অনেক বেশি। আমাদের স্বাধীনতার যে মূল চেতনা ছিলো অসম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা। অসম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আমাদের নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সক্রিয় অংশগ্রহণের যে পদ্ধতি তা হলো একজন মানুষ ১৮ বছর হলে দেশের নাগরিক হবে। ভোটার কার্ডটির মধ্যে একজন নাগরিকের সব তথ্য থাকবে। ভোটার হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন সব নির্বাচনে। প্রার্থী ও ভোটার হওয়ার জন্য এবং নাগরিক দায়িত্ব কর্তব্য পালনে ভোটার হওয়া জরুরি। যখনই ভোটার হওয়ার বয়স হবে তখন সে ভোটার হবে। ভোটার হওয়া অনেক আনন্দের বিষয়।

তিনি আরো বলেন, স্বপ্ন না দেখলে আজ আমরা এই অবস্থানে থাকতাম না। জাতির জনক স্বপ্ন দেখিয়েছেন, শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়ন করছেন। ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম একজন খ্যাতিমান দার্শনিক। তিনি বলেছেন, স্বপ্ন সেটি নয় যেটি তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটি যেটি তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। তেমন একটি স্বপ্ন হচ্ছে আমার জাতীয় পরিচয়পত্র। স্বপ্ন দেখার মধ্যেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল তৈরি হচ্ছে, এই স্বপ্নটি দেখতে হয়েছে। স্বপ্ন না দেখলে নদীর নিচে টানেল হতো না। পদ্মা সেতু করবো সেই স্বপ্ন দেখেছি বলে সেটা করতে পেরেছি। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রয়েছি। দিবসটির সাফল্য কামনা করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, পৃথিবীতে অনেক উন্নত দেশ আছে সবাই কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রটি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে একটি অগ্রসরমান জাতি এবং ভবিষ্যতমুখী একটি জাতি সেটি প্রমাণ করে। জাতীয় পরিচয়পত্র একজন মানুষের বহুকিছুর অধিকার দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে আমরা গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় আমরা আছি। সেখানে প্রতিদিন আমরা চেষ্টা করছি আরো কিভাবে এ প্রক্রিয়াকে উন্নত করা যায়। সেখানে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এই অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র অর্থবহ হবে। অংশগ্রহণের পথ তৈরি করে দেয় ভোটার হওয়ার মধ্য দিয়ে। যাদের বয়স ১৮ হবে তারা সবাই ভোটার হবেন এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আমার ভোট আমি দিব, জেনে বুঝে তাকে দেব- এটি যেন হয়। স্বাধীনতার মাসের প্রথম দিনে ভোটার দিবস এটি আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, আপনারা সবাই দোয়া করবেন আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কন্যা যে দায়িত্ব দিয়েছে তা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি। বাংলাদেশকে শিক্ষার ক্ষেত্রে গত ১০ বছরের যে বিশাল অর্জন তা যেন আরো ভালো করতে পারি।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, ভোটার দিবস উপলক্ষে অত্যন্ত বর্ণিল একটি র‌্যালি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি আসার কারণে আমাদের যতটুকু আলো ছিলো সেই আলো অনেক অনেক গুণ বেড়ে গেছে। মন্ত্রী মহোদয়কে মানুষ এতো ভালোবাসে যেই শুনেছে সেই কোন দাওয়াতের প্রয়োজন হয়নি, ছুটে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, ভোটার দিবস গণতন্ত্রের একটি হিসেবে মার্চের প্রথম দিন বেছে নেয়া হয়েছে। আমাদের অত্যন্ত গর্বের ও ঐতিহাসিক মাস মার্চ। সেই মাসে সব দিবস গুরুত্বপূর্ণ। এই ভোটার দিবসে গণতন্ত্রের উত্তরণ হবে, মানুষ সত্যিকার অর্থে ভোট প্রয়োগ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে সে এগিয়ে যাওয়া আরো বেগবান হবে। জাতীয় ভোটার দিবস স্বার্থক ও সুন্দর হোক এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখুক- এই কামনা করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার বলেন, আমি চাঁদপুরে নতুন আসিনি, আমি আগেও এসেছি। আমি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি আপাকে খুব বেশি ভালোবাসি। ছাত্র রাজনীতি করে বড় হয়েছি এবং জ্ঞানী গুণীদের সাথে মিশতে আমার প্রচন্ড লোভ হয়। সেই লোভ থেকে দীপু আপার সাথে মিশা। আপাকে খুব ভালোবাসি, আপা সেই ভালোবাসার একটা জায়গা করে দিয়েছেন। সেজন্য সুযোগ পেলে চলে আসি চাঁদপুর।
তিনি আরো বলেন, আমার জেলা বরিশাল, কিন্তু আমার মনে হয় চাঁদপুরের জন্য আমার বেশি টান। সবাই দীপু আপার নেতৃত্বে নৌকার জয়গান গাইবেন এবং শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন।
পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভোটার দিবস এই প্রথম হচ্ছে এবং প্রতি বছর হবে। আমরা জানি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ভোটের গুরুত্ব অনেক বেশি। নির্বাচনের আওয়ামী লীগের ইস্তেহারের মধ্যে অন্যতম ছিলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স। ভোটার আইডি কাডের সাথে দুর্নীতির একটা গভীর সংযোগ রয়েছে। ব্যাংকের একাউন্ট খুলতে গেলে ভোটার আইডি কার্ড খুবই জরুরি। প্রত্যেকটা কাজে এখন ভোটার আইডি কার্ড লাগে। কেউ যদি কোন স্থানে দুর্ঘটনায় পড়ে থাকে তাহলে আঙ্গুলের ছাপে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে। আগামি ৫ বছরের মধ্যে কেউ আর অপরাধ করে লুকিয়ে থাকতে পারবে না। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেলাম। আমার বিশ্বাস অচিরেই স্বপ্নের সোনার বাংলার দেখা পাচ্ছি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। অনেক মূল্য দিয়ে কিনা এই স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে যা যা করণীয় তাই করেছেন শেখ হাসিনা। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো সমান্তরালভাবে পূরণ করছেন শেখ হাসিনা। স্মার্ট কার্ড ১২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এদেশের নাগরিকের কোন পরিচয় ছিলো না। শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণ করে সবাইকে পরিচয়পত্র তুলে দিয়েছেন। আগে ৫ বছর পর পর ভোটার তালিকা করা হতো। আর এখন ১৮ বছর পূর্ণ হলে ভোটার হতে পারবে। আজকে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। নাগরিক সেবা মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে প্রযুক্তির কারণে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে। এটাই হোক আমাদের সবার প্রত্যাশা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, ভোটার দিবস প্রথম হচ্ছে। এ ভোটার দিবসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো দেশ। মানুষের মাঝে ভোটের অধিকার ফিয়েছে দিতে এই ভোটার দিবস। আমাদের ভোটার অধিকার প্রয়োগ করে আমাদের পছন্দমতো সরকার গঠন করি এবং ধারাবাহিকতা আমরা রাখি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমার পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা নির্বাচন অফিসার মো. হেলাল উদ্দিন খান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. একেএম মাহবুবুর রহমান, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আলহাজ অ্যাড. শেখ জহিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, অ্যাড. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, সাংগঠনিক সম্পাদক আইয়ুব আলী বেপারী, জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাসিম উদ্দিন, সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার একেএম সাইফুল হক, সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন, বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেন, চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার সাহা, গণি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন, আক্কাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোফরান হোসেন, শহীদ জাবেদ পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক, পুরাণ বাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণেশ দাশ, পুরাণ বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।