প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
সাহেদ হোসেন দিপু
হাইমচরে দুর্গাপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মনির হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে একই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রানা পাটোয়ারী। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বখাটে কিশোর গ্যাং খ্যাত এ শিক্ষার্থীসহ তার সহপাঠী সকলকে আটক করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য বিক্ষোভ মিছিল করেছে দুর্গাপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় দুর্গাপুর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি আলগীবাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদে বিক্ষোভ করে।
‘সন্ত্রাস না, শিক্ষা শিক্ষা।’ ‘সন্ত্রাসীদের জায়গা স্কুলে হবে না।’ ‘বিচার চাই, বিচার চাই, সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।’ শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে হাইমচর উপজেলা সদর আলগীবাজার ও উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ। উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি ব্যবস্থার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীদের।
এসময় তিনি বলেন, তোমরা যেহেতু শ্লোগান দিয়েছো সন্ত্রাসীর জায়গা দুর্গাপুর স্কুলে হবে না, তোমাদের সাথে একমত হয়ে বলছি- আজ দিনের মধ্যে এ সন্ত্রাসীকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ হামলার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনার সঠিক তদন্ত করার জন্য ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হবে।
দুর্গাপুর স্কুল এন্ড কলেজ সূত্রে জানা যায়, উত্তর আলগী গ্রামের আলমগীর পাটোয়ারীর ছেলে রানা পাটোয়ারী এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষায় ৫ বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে এই রানা বহিরাগত কিশোরদের সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে আড্ডা দেয়া শুরু করে। কিছুদিন পর তার মা স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষককে রাজি করিয়ে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি করেন। স্কুলে ক্লাস না করে বহিরাগত ছেলেদের নিয়ে মাঠে আড্ডা ও সিগারেট খাওয়ার বিষয়টি শিক্ষক মনির হোসেন তাদের স্কুলের শিক্ষকদের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে লিখেন- রানা পাটোয়ারীকে পুনরায় স্কুলে ভর্তি করিয়ে স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করছে। ক্লাসের সময় স্কুল মাঠে আড্ডা দিচ্ছে। এর দায়ভার কে নিবে? এর পরই রাত ১২টায় মনির মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে হামলা করেন আলমগীর পাটোয়ারীর ছেলে রানা পাটোয়ারী, কমলাপুর গ্রামের আরাফাত, সিহাব হাওলাদার, পূর্বচর কৃষ্ণপুর গ্রামের সিফাতসহ আরও ১০/১৫ সদস্যের একটি কিশোর গ্যাং। দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে শিক্ষক মনির হোসেন হাইমচর থানায় ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে তারা পালিয়ে যায়। স্কুল শিক্ষকদের গ্রুপ তথ্য পেয়েই এমন ঘটনা ঘটেছে এবং প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিনকে নিয়ে সমালোচনা চলছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মনির হোসেন বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী রানা পাটোয়ারী ও বর্তমান অধ্যায়নরত কিছু শিক্ষার্থীসহ ৬ জন বহিরাগত লোক আমার বাড়িতে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ এবং হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে আমি থানা একটি জিডি করেছি। আমি প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের শাস্তি কামনা করছি।
দুর্গাপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন বলেন, শিক্ষক মনির হোসেন তার বাড়িতে হামলার বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছি থানায় একটি জিডি করার জন্য। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় গভর্নিং বডির সভাপতির নির্দেশক্রমে অভিযুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মান্নান শিকদার বলেন, আগেও বেশ কয়েকবার শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে হামলার শিকার হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবাদ করেছি। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্গাপুর হাই স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক হামলার শিকার হয়েছে। এ হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা চাই শুধু বহিষ্কারের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থেকে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
হাইমচর থানা অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন সুমন, দুর্গাপুর হাই স্কুলের শিক্ষক মনির হোসেন শিক্ষার্থী দ্বারা হামলার শিকার হওয়ার ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি হয়েছে।
এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কোন শিক্ষার্থী কিশোর গ্যাংয়ের সাথে জড়িত না হয় সে ব্যাপারে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে আমাদের কোন ছাড় নেই। এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করছি।
০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।