হাজীগঞ্জের হোটেলের দুধে ডিটারজেন্ট ও ইউরিয়ার উপস্থিতি

পোড়া তেল ব্যবহার ও শ্রমিকের হাতে জীবাণু

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে খাবার হোটেল ও মসলার দোকান থেকে সংগ্রহকৃত নমুনায় নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের ল্যাবটেস্টে (ল্যাবে পরীক্ষা) পোড়া তেল ব্যবহার এবং ভেজাল দুধ ও জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ একাধিক হোটেল ও মসলার দোকানে ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিভাগীয় (চট্টগ্রাম) কার্যালয়ের ল্যাব টেকনেশিয়ান মো. মাঈনুল হাসান।
জানা গেছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সব জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের আয়োজনে অন স্পট র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরিতে (ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার) হাজীগঞ্জ বাজারস্থ পাঁচটি খাবার হোটেল ও চারটি মসলার দোকানে খাদ্যসহ বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে তিনটি হোটেলে ভেজাল দুধ ও পোড়া তেল ব্যবহার এবং একটি হোটেলে জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এর মধ্যে আল-মদিনা হোটেলে তরল দুধে ইউরিয়া ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ হোটেলে প্রায় একমণ তরল দুধ ছিলো, তা সম্পূর্ণ ভেজাল বলে প্রতিয়মান হয়। আর খাওয়া দাওয়া হোটেলে পোড়া তেলের ব্যবহার এবং শেরাটন হোটেল বয়দের (শ্রমিক) হাতে জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অপরদিকে গাউছিয়া হাইওয়ে ও প্রিন্স হোটেল এবং মসলার দোকানগুলোতে হলুদ ও মরিচ পরীক্ষায় ভেজাল বা অনিয়ম পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্যানেটারি পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মো. সামছুল ইসলাম রমিজ বলেন, আল-মদিনা হোটেলের দুধে ডিটারজেন্ট আর ইউরিয়া পাওয়া গেছে। যা ভেজাল দুধ হিসেবে চিহ্নিত। শেরাটন হোটেল বয়দের হাতে একশ’র মাত্রা ছাড়িয়ে পাঁচশ’র বেশি ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এছাড়া খাওয়া-দাওয়া হোটেলে ব্যবহৃত পোড়া তেলে বিষাক্তের মাত্রা ১শ’ ছাড়িয়ে ৫শ’ মাত্রা পাওয়া গেছে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিভাগীয় (চট্টগ্রাম) কার্যালয়ের ল্যাব টেকনেশিয়ান মো. মাঈনুল হাসান সংবাদকর্মীদের জানান, আমরা যে তিনটি হোটেলে বড় ধরনের অনিয়ম পেয়েছি তার রিপোর্ট চট্টগ্রাম অফিস থেকে চাঁদপুর জেলা অফিসে পাঠাবো, সেই আলোকে জেলা অফিস ব্যবস্থা নিবে। এসময় তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ এ পরীক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকবে এবং যে কেনো সময়, যে কোনো হাট-বাজারে পরীক্ষা হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় বিভাগীয় পর্যায়ে খাদ্যের নমুনা পরীক্ষার জন্য মোবাইল (ভ্রাম্যমাণ) ল্যাব কার্যক্রম শুরু করে। এই ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরিতে দুধে ডিটারজেন্ট, স্টার্চ, ইউরিয়ার উপস্থিতি, ঘিতে বনস্পতি/হাইড্রোজিনেটেড এডিবল ফ্যাটের উপস্থিতি, হলুদের গুঁড়ায় লেড ক্রোমেটের উপস্থিতি, মরিচের গুঁড়ায় ইটের গুঁড়ার উপস্থিতি, গোল মরিচে পেঁপে বীজ মেশানো, নারিকেল তেলে ভেজাল, শাক-সবজি ফলমূলে রঙ দেয়া ও বালাইনাশকের মাত্রা নির্ণয়, মধুতে চিনির মিশ্রণ, পাউরুটিতে ক্ষতিকর পটাশিয়াম ব্রোমেটের উপস্থিতি, খাদ্যে অননুমোদিত কৃত্রিম রঙের উপস্থিতি, খাদ্যে ক্ষতিকর ভারী ধাতুর উপস্থিতি ও জীবাণু শনাক্তসহ আরও অনেক পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।