হাজীগঞ্জে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে পূজামন্ডপ ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলায় জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাগর হোসেন (২৭) নামের এক ট্রাকচালক। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়িয়েছে।
নিহত সাগর হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের খন্দকার বাড়ির মোবারক হোসেনের ছোট ছেলে। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের নোয়াদ্দা গ্রামের সুমন মাঝির মেয়েকে বিয়ে করেন। তার এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি হাজীগঞ্জ বাজারের ডিগ্রি কলেজ রোড সংলগ্ন এলাকার একটি ভাড়া বাসায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।
এর আগে গত বুধবার রাতে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় সাগর পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধর করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার করা হলে সোমবার সকালে সাড়ে সাতটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ঘটনার দিন হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন এবং পরের দিন বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যায় এবং গুরুতর আহত হয় ৪ জন।
নিহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪), তাজুল ইসলামের ছেলে আলামিন (১৮) ও আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামিম হোসেন (১৩) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মো. বাবলু (৩৫)।
আহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে মো. সবুজ (১৬), হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের প্রিতম (২০), কচুয়া উপজেলার রহিমানগর এলাকার জুনাশর গ্রামের মো. সিদ্দিকের ছেলে মো. হারেস (২৩) এবং অজ্ঞাত মিলন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা শহরের দিঘিরপাড়ের একটি দুর্গাপূজার মণ্ডপে হনুমান মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে হাজীগঞ্জে তৌহিদি জনতা নামের একটি মিছিল হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের দিক থেকে হাজীগঞ্জ বাজারে দিকে আসে।
পরবর্তীতে মিছিলটি বাজার হাজীগঞ্জ বাজার দুইবার প্রদক্ষিণ করে পশ্চিম বাজারস্থ রাজা লক্ষ্মী নারায়ন জিউর আখড়ায় অবস্থিত পূজামন্ডপে সামনে আসলে মিছিল থেকে কে বা কারা পূজামন্ডপের গেটের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এতে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ মিছিলকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে মিছিলকারীরা।
এসময় মিছিলকারীরা পুলিশের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয় এবং পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। এদিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় এবং পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। এছাড়া মিছিলকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে ১৭ জন পুলিশসহ সাংবাদিক ও পথচারী আহত হয়েছেন।
২০ অক্টোবর, ২০২১।