হাজীগঞ্জে জামিনে এসে খুন করে মিশুক চালক আরমানকে

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
গত ১ অক্টোবর যাত্রী বেশে আরমান হোসেনের মিশুক (অটোরিকশা) ভাড়া নেন সবুজ হোসেন মিন্টু (২৫) ও শুকুর আলম (২৮)। কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর আরমান যখন বুঝতে পারে তার মিশুকটি চুরির উদ্দেশে নিয়ে আসা হয়েছে, তখন সে ডাক-চিৎকার দেয়। তার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা ছুটে এসে সবুজ ও শুকুর আলমকে আটক করে পুলিশে দেয়।
এ ঘটনায় কচুয়া থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এতে ক্ষিপ্ত হয় সবুজ ও শুকুর আলম। সম্প্রতি তারা জামিনে বের হয়ে এসে গত ৩০ অক্টোবর দিবাগত রাতে আরমানের মিশুকটি আবারো ভাড়া নেন। এরপর তাকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে বালুর স্তূপের নিচে পুঁতে রাখে এবং মিশুকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার এক সপ্তাহ পর গত ৬ নভেম্বর সোমবার পঁচা-দুর্গন্ধের একটি গলিত লাশের সন্ধান মিলে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দোয়ালিয়া গ্রামের আমগাছ তলা নামক এলাকায়। খবর পেয়ে নিখোঁজ বাবা মোতালেব ও মা পাখি বেগমসহ পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে আসে এবং জুতা ও পরনের প্যান্ট দেখে এমরান হোসেনের পরিচয় সনাক্ত করে।
পরে পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন, ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ ও চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে আরমানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। সে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৪নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের মেস্তুরি বাড়ির মো. আব্দুল মোতালেবের দ্বিতীয় ঘরের বড় ছেলে। কিশোর আরমান হোসেন (১৫) অটোরিকশা চালিয়ে বাবা-মা ও ছোট দুই ভাইসহ জীবিকা নির্বাহ করতো।
এ ঘটনায় ওই দিন হাজীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা পিবিআই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আগে অটো চুরির চেষ্টার ঘটনায় আটক সবুজ হোসেন ও শুকুর আলমকে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আটক করলে তারা পিবিআইয়ের কাছে আরমানকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে আটকদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করে। আটক সবুজ হোসেন মিন্টু হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের কাঁঠালি গ্রামের শাহআলমের ছেলে এবং শুকুর আলম সদর ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। তারা সম্পর্কে শালা-দুলাভাই।
এ ব্যাপারে পিবিআই পুলিশ সুপার মো. মোস্তফা কামাল রাশেদ জানান, যাত্রী সেজে আলম ও সবুজ নামের দুইজন আরমানের অটোরিকশায় উঠে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আরমানকে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে যাবে। পরবর্তীতে তারা নির্জন যায়গায় এসে ইট দিয়ে আঘাত করে আরমানকে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে যায়। গত ৩০ নভেম্বর থেকে আরমান নিখোঁজ ছিল এবং ৬ নভেম্বর হাজীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দোয়ালিয়া এলাকায় বালুর স্তূপ থেকে আরমানের জামা ও জুতা দেখে তার বাবা মরদেহ সনাক্ত করে।
তিনি আরো জানান, আটক আলম ও সবুজ নামের দুইজনের নামে কচুয়া থানায় অটোরিকশা চুরির মামলা রয়েছে। আগের মামলা ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের আটক করা হয়। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর দুপুরে মিশুক নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় আরমান হোসেন। এরপর আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের বিভিন্ন ও সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে গত বুধবার (১ নভেম্বর) হাজীগঞ্জ থানায় নিখোঁজ ডায়রি (নং-৪৫) করেন তার বাবা আব্দুল মোতালেব।
গত সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দোয়ালিয়া পূর্বপাড়া আমগাছ তলায় নামক স্থানে সড়কের পাশে বালুর স্তূপের নিচ থেকে আরমান হোসেনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে হত্যাকারীদের দ্রুত আটকের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হত্যাকাণ্ডের শিকার আরমানের বাবা আব্দুল মোতালেবসহ পরিবারের সদস্যরা। তারা হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি জানান।

০৯ নভেম্বর, ২০২৩।