হাজীগঞ্জে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে ধানের চারা রোপণকে কেন্দ্র করে ঝগড়া-বিবাদ হয় বড় ভাই জাঙ্গাঙ্গীর হোসেন কবিরাজের সাথে। এই ঘটনায় প্রতিপক্ষের লোকজনের সাথে একাধিকবার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা ও মারধর। এতে প্রাণ গেল ছোট মো. সেলিম হোসেন কবিরাজের (৪৫)। তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে এবং মাথা ফেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নিহত মো. সেলিম হোসেনের দাফন সম্পন্ন হয়। তিনি উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের গৌড়েশ^র গ্রামের কবিরাজ বাড়ির মো. আবুল কালাম কালুর ছেলে। এদিন দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে গৌড়েশ^র গ্রামের পশ্চিম পাড়া মদীনাতুল জামে মসজিদের সামনে এই হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে ইয়াছিন হোসেন সবুজ একই গ্রামের কাজী বাড়ির মৃত আব্দুল ওহাবের ছেলে আলী আকবর কাজী ও আনিসুর রহমান কাজী, আনোয়ার হোসেন কাজীর ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন কাজী ও রাশেদ কাজী, আবু সুফিয়ানের ছেলে রাব্বী কাজী, আলী আজ্জমের ছেলে নুরুল ইসলাম কাজী ও আনিসুর রহমানের স্ত্রী রিনা বেগমসহ ৭ জন ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক জানান, নিহতের সেলিম কবিরাজের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় ৭ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের ছেলে ইয়াছিন হোসেন সবুজ। এর মধ্যে নামীয় আসামি নুরুল ইসলামকে আটক করে শুক্রবার বিকালে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিচারক তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান। মামলার তদন্ত চলমান ও অপর আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে নিহত সেলিমের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানের চারা রোপণের সময় কবিরাজ বাড়ির জাহাঙ্গীর কবিরাজের সাথে একই গ্রামের কাজী বাড়ির আজিজ কাজীর সাথে বিবাদের এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন সন্ধ্যায় আজিজের বড় ভাই চাঁন মিয়ার সাথে জাহাঙ্গীরের ভাতিজা ও সেলিমের ছেলে সবুজের সাথে মারামারি হয়। বিষয়টি জানার পর ইউপি সদস্য সমাধানের উদ্যোগ নেন।
এরপর শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয় মসজিদ মাঠে জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই সেলিমকে পিটিয়ে আহত করেন আজিজ কাজীর চাচা আকবর কাজীসহ তাদের পরিবারের অন্যান্য লোকজন। এসময় স্থানীয়রা ও সেলিমের পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেলিমকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে রেফার করেন এবং সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ওই সময়ে সেলিম হোসেনের মৃত্যুর খবর পেয়ে অভিযুক্ত আকবর কাজীসহ তাদের পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এসময় ঘটনাস্থল ও কাজী বাড়িতে অভিযুক্তসহ তাদের পরিবারের কাউকে না পাওয়ায় এবং আকবর কাজীর মুঠোফোন নম্বরটি (০১৭৯৩-১১৬৪০৫) বন্ধ থাকায় তার ও তার পরিবারের কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে নিহত সেলিমের ছোট ভাই ও ইউনিয়ন মৎস্যজীবী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নবীর জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার ভাই সেলিমকে পরিকল্পিতভাবে আকবার কাজী ও আজিজ কাজীসহ তাদের পরিবারের সকল সদস্য ও ভাড়াকরা লোকজনকে নিয়ে অতর্কিত হামলার পর পিটিয়ে হত্যা করে। অথচ ওই তুচ্ছ ঘটনার সাথে তার ভাই সেলিম জড়িত ছিলেন না বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, নিহত সেলিম হোসেন কবিরাজ পেশায় একজন অটোরিকশা চালক ছিলেন। এছাড়া তিনি কৃষি কাজসহ যখন যে কাজ পেতেন, সেই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার স্ত্রী, এক ছেলে ও ৩ মেয়েসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা রয়েছেন।
শনিবার বাদ আছর গৌড়েশ^র পশ্চিম পাড়া মদিনাতুল জামে মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত জানাযার আগে মরহুম সেলিম হোসেন কবিরাজের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম.এ রহিম পাটওয়ারী ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইমাম হোসেন লিটনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মরহুমের পরিবারের লোকজন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বিএনপির কেন্দ্রিয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপির সমন্বয়ক ইঞ্জি. মমিনুল হক, উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মো. ইমান হোসেনসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, মৎস্যজীবী ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫।