হাজীগঞ্জে ভাঙচুরকৃত পূজামন্ডপ হুইপ স্বপনের পরিদর্শন

অপশক্তি ও বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার খবরে হাজীগঞ্জে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের গুলিতে ৩ কিশোরসহ ৪ জন নিহতের ঘটনায় হাজীগঞ্জে ভাঙচুরকৃত পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) বিকালে তিনি প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতৃবৃন্দদের সাথে নিয়ে এই পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য একটি অপশক্তি কাজ করছে। তারা উস্কানি দিয়ে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার হীন উদ্দেশ্যে এই অপকর্মটি করেছে। কোন সুস্থ’ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি, সে ধর্মেই বিশ্বাস করুক, তিনি কখনো অন্য ধর্মের উপর আঘাত হানতে পারে না। সবসময় উশৃঙ্খল ও ধর্মান্ধ এবং সমাজ বিরোধীরাই অন্য ধর্মের উপর আঘাত হেনে সমাজকে কলুষিত করতে চায়।
অপশক্তির কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ তিনি আরো বলেন, যে সমস্ত উশৃঙ্খল ব্যক্তিরা এই অপশক্তির প্ররোচনা প্ররোচিত হয়ে এখানে (হাজীগঞ্জ) এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। অপশক্তি ও বিশৃঙ্খলার সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। যে কোন মূল্যের বিনিময়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের ধৌত বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি আমরা রক্ষা করবো।
একই সময়ে চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শারদীয় উৎসব একটা সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসবে আমরা সবাই শরীক হই এবং একাত্মতা ঘোষণা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সবসময় বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাই এই আনন্দ উপভোগ করতে যারাই বাঁধাগ্রস্ত করেছে, তারা যে একটা অপশক্তি, এতে কোন সন্দেহ নেই। এই অপশক্তি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
তিনি বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে কিন্তু এই অসাম্প্রদায়িকতার যাত্রা। মুসলিম লীগ কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতো। পরবর্তীতে জাতির পিতা অসাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে আসছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ অনুসরণ করে আমরা অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠিত করবো। যারাই সাম্প্রদায়িক আচরণ করবে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
৪ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিআইজি আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফায়ার (গুলি) করতে পারে। এখানে যখন মানুষের সম্পদ ও জীবনের উপর আঘাত আসছে, তখন সঙ্গত কারণেই এবং আত্মরক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফায়ার করেছে। এরপরও এই বিষয়টির এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারি (নির্বাহী তদন্ত) হবে।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের এবং হাজীগঞ্জে ৭ জনকে আটকসহ এবং কুমিল্লার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ৭৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এরপর চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা বলেন, এই ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন এবং এই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল), হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক।
এসময় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হাসান, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, হাজীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) মো. সোহেল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. নাছির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মাইনুদ্দিন ও পৌরসভা মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপনসহ, হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার খবরে বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে স্থানীয় তরুণ, যুব সমাজ ও বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিঁউর আখড়া পূজামন্ডপ অতিক্রমকালে মিছিল থেকে কে বা কারা ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। এ সময় পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করে।
কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পূজামন্ডপের গেট ভাঙচুরের চেষ্টা করায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে করে পুলিশের গুলিতে তিন কিশোরসহ মোট ৪ জন নিহত ও ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের ১৭ জন সদস্যসহ স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪), একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আলামিন (১৮) ও আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামিম হোসেন (১৭) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মো. বাবলু (৩৫)।
গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে মো. সবুজ (১৬), হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের প্রিতম (২০), কচুয়া উপজেলার রহিমানগর এলাকার জুনাশর গ্রামের মো. সিদ্দিকের ছেলে মো. হারেস (২৩) এবং অজ্ঞাত মিলন।

১৪ অক্টোবর, ২০২১।