১৪৪ ধারা জারি, মামলা দায়ের, আটক ৭
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
কুমিল্লা শহরের একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার খবরে হাজীগঞ্জে হামলা-ভাঙচুর ও পুলিশের গুলিতে তিন কিশোরসহ ৪ জন নিহত ও ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার ঘটনায় ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) বিকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি হাজীগঞ্জের বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি সংবাদকর্মীদের এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন এবং এই কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল), হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক।
এই ঘটনায় মামলা দায়ের এবং হাজীগঞ্জ থেকে ৭ জনকে আটকসহ এবং কুমিল্লার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ৭৩ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান বলে জানান চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন।
তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন, বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফায়ার (গুলি) করতে পারে। এখানে যখন মানুষের সম্পদ ও জীবনের উপর আঘাত আসছে। তখন সঙ্গত কারণেই এবং আত্মরক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফায়ার করেছে। এরপরও এ বিষয়টির এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারী (নির্বাহী তদন্ত) হবে।
একই সময়ে চট্টগ্রামের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, শারদীয় উৎসব একটা সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসবে আমরা সবাই শরীক হই এবং একাত্মতা ঘোষণা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সবসময় বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তাই এই আনন্দ উপভোগ করতে যারাই বাঁধাগ্রস্ত করেছে, তারা যে একটা অপশক্তি, এতে কোন সন্দেহ নেই। এই অপশক্তি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। আমরা আশা করছি, এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।
তিনি বলেন, শত বছরের ঐতিহ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে কিন্তু এই অসাম্প্রদিকতার যাত্রা। মুসলিম লীগ কিন্তু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতো। পরবর্তীতে জাতির পিতা অসাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে আসছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ অনুসরণ করে আমরা অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠিত করবো। যারাই সাম্প্রদায়িক আচরণ করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।
এসময় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হাসান, পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) মো. সোহেল মাহমুদ, হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা হাজীগঞ্জ বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরকৃত পূজামন্ডপ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতঘর পরিদর্শন করেন।
এর আগে বুধবার দিবাগত রাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে জানান তিনি। এরপর থেকে হাজীগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি ও র্যাব-১১ এর সদস্যরা নিয়মিত টহল শুরু করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, কুমিল্লায় কোরআন অবমাননার খবরে বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়কে স্থানীয় তরুণ, যুব সমাজ ও বিক্ষুব্ধ মুসল্লিরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিঁউর আখড়া পূজামন্ডপ অতিক্রমকালে মিছিল থেকে কে বা কারা ইট-পাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ প্রতিরোধের চেষ্টা করে।
কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায় এবং পূজামন্ডপের গেট ভাঙচুরের চেষ্টা করায় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে করে পুলিশের গুলিতে তিন কিশোরসহ মোট ৪ জন নিহত ও ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের ১৭ জন সদস্যসহ স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনীমূড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪), একই গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে আলামিন (১৮) ও আব্বাস উদ্দিনের ছেলে শামিম হোসেন (১৭) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের শামছুল হকের ছেলে মো. বাবলু (৩৫)।
গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন- হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে মো. সবুজ (১৬), হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৫নং ওয়ার্ড মকিমাবাদ গ্রামের প্রিতম (২০), কচুয়া উপজেলার রহিমানগর এলাকার জুনাশর গ্রামের মো. সিদ্দিকের ছেলে মো. হারেস (২৩) এবং অজ্ঞাত মিলন।
১৪ অক্টোবর, ২০২১।
