মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে ১৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৭টি বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়মিত চলছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। বেশ কিছু বিদ্যালয়ের ভবন, পরিত্যক্ত ঘোষণা করার উপযুক্ত হলেও জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেখিয়ে বড় ধরনের সংস্কার বা মেরামত বাবদ অর্থ-বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়।
জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় বিদ্যালয়গুলোর পলেস্তার খসে পড়াসহ ভবনের দেয়াল, পিলার ও ভিমে ফাটল দেখা দিয়েছে। অনেক বিদ্যালয়ে পিলার ও বিম থেকে ইট-সুরকির ঢালাই খসে পড়ে ভেতরের রড দেখা যাচ্ছে। আবার ভারি বৃষ্টিপাত হলে অনেক বিদ্যালয়ের ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। এতে প্রতিনয়তই হতাহত হওয়ার আশংকায় থাকতে হচ্ছে ৫৭টি বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের।
অভিযোগ রয়েছে, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোর তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার-বার প্রেরণ করা হলেও এখনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার ফলে, দিন দিন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভবনগুলো। নিরুপায় হয়ে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদানে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা ও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ও শিক্ষকের মতে, নির্দিষ্ট সময়ে ভবনগুলোর ভালোভাবে মেরামত করলে এতটা জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হতো না। তাছাড়া এমন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কর্তৃপক্ষ এখনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করেননি এমন বিদ্যালয়ও রয়েছে। এতে যে কোনো সময় হতাহতের আশংকা রয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, উপজেলায় ১৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসের তালিকা অনুযায়ী ৫৭টি বিদ্যালয় জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। তার মধ্যে ৩৩টি বিদ্যালয়ে বড় ধরনের এবং ২৪টি বিদ্যালয়ে মধ্যম ধরনের সংস্কার কাজ বা মেরামত করতে হবে। গত ১০ জানুয়ারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ তালিকা পাঠানো হয়।
৩৩টি বড় ধরনের মেরামত/সংস্কার কাজের জন্য পাঠানো তালিকার মধ্যে পৌরসভায় ৭টি বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়গুলো হলো- হাজীগঞ্জ বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বলাখাল আর.জে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধেররা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টোরাগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ বলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাটরা-বিলওয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর-পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাজারগাঁও ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- পশ্চিম রাজারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব রাজারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাকিলা ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- গোগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লোধাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নে সিঁদলা-নওহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সদর ইউনিয়নের ৬টি বিদ্যালয় হলো- সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাতৈন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম মাতৈন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের ৫টি বিদ্যালয় হলো- রায়চোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ বড়কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়কুল বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়কুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মোল্লাডহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম জাকনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- বেলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টঙ্গিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব হরিপুর ও গর্ন্ধব্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গর্ন্ধব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- ভাউড়পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দেশগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের বিদ্যালয় দুটি হলো- ধড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গৌড়েশ^র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
২৪টি মধ্যম ধরনের মেরামত/সংস্কার কাজের জন্য পাঠানো তালিকার মধ্যে পৌরসভার বিদ্যালয় ২টি হলো- এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কংগাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রাজারগাঁও ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- আহমেদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর-পশ্চিম রাজারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাকিলা ইউনিয়নের স্বর্ণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নে ৪টি বিদ্যালয় হলো- পিরোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহব্বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদপুর নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাড়কি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৪টি বিদ্যালয় হলো- উত্তর মহব্বতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাকছিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাড়ামুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সদর ইউনিয়নের ৩টি বিদ্যালয় হলো- মৈশাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুহিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের বিদ্যালয় ২টি হলো- গোপালখোঁড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নাটেহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম বেলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গর্ন্ধব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের মৈশামূড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
গর্ন্ধব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বিদ্যালয় ৩টি হলো- পশ্চিম দেশগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ পাচৈ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের পশ্চিম পাতানিশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল সরকার জানান, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তালিকায় বিদ্যালয় প্রতি বড় ধরনের মেরামত/সংস্কার বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মধ্যম মেরামত/সংস্কার বাবদ ৩ লাখ টাকার চাহিদাপত্র প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী কর্মকর্তার কার্যালয়েও একই তথ্য দেয়া আছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।