মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ও পুকুরের পানিতে ডুবে ২ জন মারা গেছেন। এছাড়া দুর্ঘটনায় আরো ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলাখাল চৌধুরী বাড়ির সামনে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মো. ইমাম হোসেন (৩০) নামের এক যুবক এবং উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের মজুমদার বাড়ির পুকুরের পানিতে ডুবে ইফফা (২) নামের এক শিশু মারা যায়।
নিহত শিশু ইফফা ওই বাড়ির মো. ইমাম হোসেনের একমাত্র মেয়ে। অপরদিকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ইমাম হোসেন শাহরাস্তি উপজেলা টামটা উত্তর ইউনিয়নের বলশিদ গ্রামের আবুল হাশেমের ছেলে। গুরুতর আহত বলশিদ গ্রামের মোস্তফা কামালের ছেলে মো. ইউনুস হোসেন (২৩) ও একই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মো. রাছেল হোসেন (৩৫), ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোল্লা গ্রামের বশির উল্যাহর ছেলে মো. মাকসুদ হোসেন (২৬)।
অপর গুরুতর আহত হাজীগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের সহিদ উল্যাহর ছেলে ইমরান শাহ (২১) ও একই গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে নজরুল ইসলাম (২১) এবং পৌরসভাধীন বলাখাল এলাকার শামসুল হকের ছেলে আবু তাহের (৬৫)। গুরুতর আহতদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এদিন বিকালে বলাখাল গ্রামের বকাউল বাড়ির বৃদ্ধ আবু তাহের বলাখাল চৌধুরী বাড়ির সামনে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় হাজীগঞ্জমুখী দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেল তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে হার্টব্রেক করে। কিন্তু মোটরসাইকেলটি তাৎখনিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে।
একই সময়ে পেছন দিক থেকে আসা হাজীগঞ্জমুখী অপর একটি দ্রুতগামী মোটরসাইকেল সামনের দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে করে ঘটনাস্থলেই মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী মো. ইমাম হোসেন এবং গুরুতর আহত হন পথিক বৃদ্ধ আবু তাহের ও অপর দুইটি মোটর সাইকেলের আরোহী মো. ইউনুস হোসেন, মো. রাছেল, মো. মাকসুদ হোসেন, ইমরান শাহ ও মো. নজরুল ইসলাম।
এসময় সড়কে বেশকিছু যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং সড়ক থেকে দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল দুইটি সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। পরে মোটরসাইকেল দুইটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ইমাম হোসেনের মরদেহ থানা হেফাজতে নিয়ে আসে।
এদিকে খবর পেয়ে নিহত ইমাম হোসেন এবং আহতের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। এ সময় তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। নিহত ইমাম হোসেনের চাচা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার ভাতিজার ৩ বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। অপরদিকে গুরুতর আহত মো. রাছেল মৃত্যুশয্যায়। তার বাবা জানান, তার দুই বছরের একটি শিশু সন্তান রয়েছে।
এছাড়া একই সময়ে হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের মজুমদার বাড়ির পুকুরের পানিতে ডুবে ইফফা মারা যান। সে ওই বাড়ির মো. ইমাম হোসেনের একমাত্র মেয়ে। নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এ দিন বিকালে ইফফা নিজ ঘরেই খেলাধুলা করছিল। কিছুক্ষণ পর তাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা খুঁজতে বের হন। পরে তাকে পুকুরের পানিতে ভাসতে দেখে পরিবারের লোকজন দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগের দিন শনিবার দুপুরে উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পালিশারা গ্রামের মিজি বাড়ির পুকুরের পানিতে ডুবে তাহিয়া নামের এক বছরের শিশু মারা যায়। সে ওই বাড়ির মো. ইসমাঈল হোসেনের ছোট মেয়ে। এ দিন রাতেই তাকে নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস.এম শোয়েব আহমেদ চিশতী জানান, দুর্ঘটনায় নিহত মো. ইমাম হোসনে ও পানিতে ডুবে নিহত ইফফাকে আমরা হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। এছাড়া দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ৬ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, খবর পেয়ে দুর্ঘটনা কবলিত মোটরসাইকেল দুইটি উদ্ধার এবং নিহত মোটরসাইকেল আরোহি ইমাম হোসেন ও পানিতে ডুবে নিহত ইফফার মরদেহ থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১।