যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা
হাজীগঞ্জ ব্যুরো
হাজীগঞ্জে রেলওয়ের জলাভূমিতে মাছ চাষের জন্য লাইসেন্স প্রদান নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ঘটনায় যে কোন মুহূর্তে দুই গ্রামের মানুষের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয়রা। তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন স্থানীয় ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, হাজীগঞ্জের রেল স্টেশন সংলগ্ন ২.২৪ একর জলাভূমিতে ব্যক্তিগত মৎস্য চাষের জন্য হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মাতৈন গ্রামের হাজি বাড়ির মৃত আফিল উদ্দিনের ছেলে হাজি মো. খোরশেদ আলমকে ১৪২৮ বাংলা সনের (১ এপ্রিল ২০২১) থেকে ১৪৩০ সাল পর্যন্ত তিন বছরের লাইসেন্স প্রদান করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু উল্লেখিত জলাভূমি বিধি অনুযায়ী প্রদান না করার অভিযোগ আনেন বর্তমানে দখলকৃত এবং পূর্বের লাইসেন্সপ্রাপ্ত আবু তাহেরের পরিবারসহ স্থানীয় ও এলাকাবাসী। আবু তাহের মৃত্যুবরণ করায় বর্তমানে তার স্ত্রী ছফুরা বেগম ও তার দেবর আব্দুল মান্নানসহ তাদের পরিবার বিষয়টির দেখাশুনা করছেন। তারা বাংলা ১৪১৮ সন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত লাইসেন্স নবায়নের মাধ্যমে মাছ চাষ করে আসছেন।
বর্তমানে ওই জলাভূমিতে তাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। কিন্তু তাদের নোটিশ না দিয়ে এবং জলাভূমি বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স প্রদান না করে মঙ্গলবার দুপুরে রেলওয়ের লাকসাম অঞ্চলের কানুনগো মো. কাউছার হামিদ উক্ত জলাভূমিটি নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত খোরশেদ আলমকে বুঝিয়ে দিতে আসলে বর্তমানে দখলকৃত মৃত আবু তাহেরের পরিবার ও খোরশেদ আলম এবং স্থানীয়দের মাঝে বাদানুবাদের সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এসময় দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কর্তৃপক্ষ হাজীগঞ্জ থানাকে অবহিত করেন। এরপর হাজীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার (উপ-পরিদর্শক) সৈয়দ মোশারফ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ ও বিবাদমান দুই পক্ষ সাথে কথা বলে একটি সাময়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহআলম উপস্থিত ছিলেন।
রেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, পূর্বে দখলসূত্রে লাইসেন্স প্রদান করা হলেও বর্তমানে রেল কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়ম অনুযায়ী রেলের ভূমি বা জলাশয় ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি কেউ লাইসেন্স নিতে চায়, তাহলে রেলের সম্পত্তির সাথে তার জমি (ভূমি) থাকলে অগ্রাধীকার দেওয়া হবে, নতুবা টেন্ডার প্রক্রিয়া মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান করা হবে।
বিধি অনুযায়ী হাজীগঞ্জের জলাভূমি যিনি দখলে আছেন তার জমির সাথে এই জলাভূমি। নিয়ম অনুযায়ী তিনিই লাইসেন্স পাওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে যিনি লাইসেন্স নিয়েছেন, জলাভূমির সাথে তার কোন জমি নেই বলে বর্তমানে দখলকৃত, স্থানীয় ও এলাকাবাসীর অভিযোগ। এই ঘটনায় দুই পক্ষসহ ও দুই পক্ষের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং যা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নিতে পরে বলে স্থানীয়দের আশংকা।
এ বিষয়ে আব্দুল মান্নান জানান, ১৪২৬ সালে জলাভূমির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এর আগে এই জলাভূমিটি পূণরায় লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আমরা রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট অফিস (লাকসাম) ও কর্মকর্তা (কানুনগো) মো. কাউছার হামিদের সাথে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করি। যতবার যোগাযোগ করি তিনি ততবারই নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই জলাভূমি প্রদান করা হবে বলে তিনি আমাদের জানান।
আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, তিনি (কানুনগো) আমাদের না জানিয়ে এবং টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই গোপনে খোরশেদ আলমকে জলাভূমির লাইসেন্স দিয়ে আজ তিনি জলাভূমি বুঝিয়ে দিতে আসেন। অথচ এই জলাভূমিতে আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ রয়েছে। তার এমন সিদ্ধান্তে আমরা পথে বসার উপক্রম হয়েছি। তাই এই অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে তিনি ন্যায়বিচার কামনা করেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, বর্তমানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তির (খোরশেদ আলম) জলাশয়ের পাশে কোন ভূমি নেই। আমাদের ভূমি রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের অগ্রাধিকার। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, এখনো বর্তমানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত খোরশেদ আলমকে জলাভূমি বুঝিয়ে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। অথচ তার ছেলেরা লোকজন নিয়ে এসে জলাশয়ে বিষ দিয়ে মাছ মারাসহ আমাদেরকে মারধরের হুমকি-ধমকি দেয়।
এ বিষয়ে বর্তমানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মো. খোরশেদ আলম বলেন, রেলওয়ের বিধি অনুযায়ী এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমরা লাইসেন্স পেয়েছি। তাই নিয়ম অনুযায়ী রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের এই জলাভূমি বুঝিয়ে দিবে।
খোরশেদ আলমে ছেলে সাদ্দাম হোসেন জানান, প্রপার ডকুমেন্ট (দালিলিক কাগজপত্র) দেখেই রেল কর্তৃপক্ষ তিন বছরের জন্য আমার বাবার নামে এই জলাভূমি ব্যবহারের লাইসেন্স দিয়েছে। অথচ তারা জোরপূর্বক এই জলাভূমি দখলে রাখতে চায়। আজ (মঙ্গলবার) রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের জলাভূমি বুঝিয়ে দিতে আসলে, তারা লোকজন নিয়ে এসে বাধাগ্রস্ত করে এবং আমাদের মারধরের হুমকি-ধমকি দেয়। তিনি এর সুবিচার চান।
হাজীগঞ্জ রেল স্টেশনের কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন জানান, এই জলাভূমি প্রদানে টেন্ডার হয়নি। তাই এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এদিকে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে রেলওয়ে লাকসাম অঞ্চলের কানুনগো মো. কাউছার হামিদ জানান, বিধি অনুযায়ী এবং সব কাগজপত্র দেখে খোরশেদ আলমকে লাইসেন্স দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ তাকে জলাভূমি বুঝিয়ে দিতে আসলে এখানে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সামাজিক ও মানবিক দিক বিবেচনা করে স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুলিশের উপস্থিতিতে বর্তমানে দখলকৃতদের ২০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ২০ দিনের মধ্যে তারা জলাভূমি থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাবে এবং জলাভূমির দখল ছেড়ে দিবে। এছাড়াও এই সময়ের মধ্যে দুই পক্ষই জলাভূমি সংলগ্ন তাদের জমির (ভূমি) কাগজপত্র নিয়ে (অফিসে) লাকসাম যাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে টেন্ডার হয়নি। জলাভূমি লাগোয়া (পাশে) খোরশেদ আলমের ব্যক্তিগত ভূমি থাকায় তাকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।
২০ অক্টোবর, ২০২১।