হাজীগঞ্জে সওজের ভূমি থেকে অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদ

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান



মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে স্কুল শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের ঘটনায় প্রশাসনের দেয়া আশ্বাসের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সড়ক ও জনপথের ভূমিতে জোরপূর্বক দখলে রাখা অবৈধ কয়েকটি দোকানঘর উচ্ছেদ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সরকারি এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষীয় ভূমি ও ইমারত (দখল পুনরুদ্ধার) আদেশ ১৯৭০ এর আওতায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে মঙ্গলবার সকালে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া।
এর আগে গত রোববার পৌরসভাধীন বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভূমি এবং বিদ্যালয়ের সম্মুখে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভূমি জোরপূর্বক দখলে রাখা এবং বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে সোয়া দুই ঘণ্টা কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এতে করে কয়েক শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীসহ পথচারীদের।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বৈশাখী বড়ুয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) আফজাল হোসেন, থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।
এরপর দখলে রাখা ভূমির উপরে থাকা দোকানঘরটি তাৎখনিক সিলগালাসহ তিন দিনের (৭২ ঘণ্টা) মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস পেয়ে সড়ক থেকে সড়ক থেকে সরে যায় শিক্ষার্থীরা এবং সোমবার দিনের মধ্যে মালামাল নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিয়ে দোকানঘরটি খালি করার জন্য লিখিত নোটিশ দেয়া হয় ভাড়াটিয়া ও দখলদার আবুল খায়ের মজুমদারকে।
নোটিশ পেয়ে কিছু মালামাল সরিয়ে নেয়া হলেও কয়েক বান্ডিল রড থেকে যায়। পরে মঙ্গলবার সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বৈশাখী বড়ুয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সরকারি এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষীয় ভূমি ও ইমারত (দখল পুনরুদ্ধার) আদেশ ১৯৭০ এর বিধি অনুযায়ী দোকানঘরটি উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত এবং দোকানে থাকা মালামাল জব্দ করেন। এ সময় সওজের ভূমিতে থাকা কয়েকটি অস্থায়ী চা দোকানও উচ্ছেদ করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো মো. লোকমান হোসেন, পৌর ভুমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মহাদেব বাবু, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার মারুফ আহমেদ, কার্য-সহকারী আব্দুস সালাম, এসআই সাধন চন্দ্র নাথ, এএসআই নাজিম উদ্দিন, জিয়াউল হক ও মোজাম্মেল হকসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বলাখাল জেএন উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কারিগরি কলেজের নিজস্ব মালিকানাধীন টিনশেড বিল্ডিংটি ২০০৫ সালে লিখিত চুক্তিনামায় ভাড়া নেন স্থানীয় ব্যবসায়ী আবুল খায়ের মজুমদার। এরপর ২০১৪ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত তিনি ভাড়ার টাকা পরিশোধ করছেন না। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে চারতলা ভিত বিশিষ্ট একতলা নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দেয় সরকার।
ওই ভবন নির্মাণের জন্য স্কুলের পুরাতন দোতলা ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এবং টিনশেড দোকানঘরটি ছেড়ে দেয়ার জন্য ভাড়াটিয়া আবুল খায়ের মজুমদারকে বার-বার চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তিনি পাওনা ভাড়াকৃত টাকা পরিশোধ না করে জোরপূর্বক স্কুলের টিনশেড ভবনটি দখল করে আছেন। যার ফলে একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজটি ফেরত যাওয়ার উপক্রম হয়।
পরবর্তীতে বিষয়টি সমাধানে না আসায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গত রোববার সকালে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু মানববন্ধন প্রস্তুতির শুরুতেই বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শিক্ষক সরোয়ার হোসেনের গায়ে হাত তোলেন বিল্লাল হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক। এতে করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এরপর তারা (শিক্ষার্থীরা) উত্তেজিত হয়ে মানববন্ধনের পরিবর্তে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে।