ইলশেপাড়ে সংবাদ প্রকাশের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
চাঁদপুরের পাঠকপ্রিয় দৈনিক ‘ইলশেপাড়ে’ সংবাদ প্রকাশের পর হাজীগঞ্জে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে আবারো কৃষি জমি ধ্বংস করার অপরাধে অবৈধ এক ড্রেজার ব্যবসায়ীকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও জমির মালিককে নগদ ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুবিদপুর গ্রামে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তিনি ওই গ্রামের ড্রেজার ব্যবসায়ী মুনাব্বর মজুমদারকে কারাদন্ড এবং জমির মালিক মর্জিনা আক্তারকে অর্থদণ্ড প্রদান করেন। এর আগে এদিন দৈনিক ‘ইলশেপাড়’ পত্রিকায় ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পরও, হাজীগঞ্জে জেলা প্রশাসকের নাম ব্যবহার করে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে, মুনাব্বর মজুমদার ওই এলাকার চিহ্নিত ড্রেজার ব্যবসায়ী। তিনি ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ড্রেজারের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি তার ছেলে মো. ফরহাদ মজুমদারের মাধ্যমে সুবিদপুর গ্রামে মর্জিনা আক্তারের কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়টি দেখাশুনা করাতেন।
এমন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ১৫ জুলাই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনা আক্তার অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের অপরাধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে ফরহাদ মজুমদার ও জমির মালিক মর্জিনা আক্তারকে নগদ ৫০ হাজার করে দুই জনকে মোট ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
ওই সময় তিনি ড্রেজারটি জব্দ করে স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমানের জিম্মায় দেন। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ২/৩দিন পর জমির মালিক ও ড্রেজার ব্যবসায়ী সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে এবং জিম্মাদারকে না জানিয়ে আবারো ড্রেজার মেশিনটি চালু করে বালু উত্তোলন শুরু করে।
বিষয়টি স্থানীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরে পুলিশ নিয়ে মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার। তিনি আবারো ঘটনার সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় সব দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন অভিযুক্ত জমির মালিক মর্জিনা আক্তার ও ড্রেজার ব্যবসায়ী মুনাব্বর মজুমদার।
পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে মর্জিনা আক্তারকে নগদ এক লাখ টাকা ও মুনাব্বর মজুমদারকে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ড্রেজার মেশিনটি ধ্বংস করার নির্দেশনা প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া মর্জিনা আক্তার ও মুনাব্বর মজুমদার এবং ড্রেজারের জিম্মাদার ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান তাদের নিজ নিজ বক্তব্য লিখিতভাবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপস্থাপন করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালীন সময়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আলহাজ্ব সফিকুল ইসলাম মীর, হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. জয়নাল আবেদীন-১ সহ সঙ্গীয় ফোর্স, ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ও গ্রাম পুলিশের সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ বিষয়ে ড্রেজার ব্যবসায়ী মুনাব্বর মজুমদার বলেন, ডিসি (জেলা প্রশাসক) স্যারের কাছ থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি নিয়েছেন জমির মালিক মর্জিনা আক্তার। এ বিষয়টি তারা (মর্জিনা আক্তার ও তার ভাই রাজন) আমাকে জানিয়েছেন। তাই আমি ড্রেজার মেশিন চালু করি।
অপরদিকে মুনাব্বর মজুমদারের বক্তব্য অস্বীকার করে জমির মালিক মর্জিনা আক্তার বলেন, ড্রেজারের মাধ্যমে জমি থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আমি ডিসি স্যারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। তাই ড্রেজার ব্যবসায়ী মুনাব্বর মজুমদারকে বলেছি অনুমতি পেলে বালু উত্তোলন শুরু করবো। কিন্তু তিনি আমাকে ও আমার ভাইকে (রাজন) না জানিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেন।
ড্রেজারের জিম্মাদার ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ড্রেজারটি আমার জিম্মায় থাকলেও তারা (জমির মালিক ও ড্রেজার ব্যবসায়ী) আমাকে না জানিয়ে ড্রেজারটি আবারো চালু করে। তাই আমি লোক মারফত তাদের ড্রেজার বন্ধ রাখার জন্য বলেছি। কিন্তু তারা আমার কথা শুনেনি। বিশেষ অনুমতি (জেলা প্রশাসক) নিয়েই ড্রেজার চালাচ্ছেন বলে, তারা লোক মারফতে আমাকে জানায়। বিষয়টি আমি আমার চেয়ারম্যানকেও জানিয়েছিলাম।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার জানান, সরকারি আদেশ অমান্য করে পূূনরায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষি জমি ধ্বংস করার দোষ স্বীকার করায় ড্রেজার মালিককে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং তার ড্রেজারটি ভাঙ্গা হয়েছে।
এছাড়া জমির মালিক আগে জরিমানা দেয়ার পরও আবারো অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে কৃষি জমি থেকে বালু উত্তোলন করার অপরাধে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, এখন থেকে হাজীগঞ্জে অবৈধ ড্রেজার পরিচালনা হলে এর মালিকদের জেল ও জরিমানা দেয়া হবে।
১৮ আগস্ট, ২০২১।