চাঁদপুর জেলায় দুর্নীতি বেশ কম : –দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ


এস এম সোহেল
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। এটা সম্ভবও না। তবে সবাই আন্তরিক হলে দুনীতি কমিয়ে আনা সম্ভব। একটি জেলার ডিসি-এসপি যদি ভালো হন তাহলে সেখানে দুর্নীতি কমে আসবে। আমরা সবাই জানি দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি যতো এগিয়ে যাবে, দুর্নীতিও পিছু নেবে। কারণ, দুর্নীতি হচ্ছে উন্নয়নের ভাই-বোন। এটা হচ্ছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংজ্ঞা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা পর্যায়ের কর্মকতাদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, অনেক মামলা হয়েছে। অনেক আটক হয়েছে। অনেককে ডাকা হয়েছে। আমরা কাজ করে দেখিয়েছি। সমাজে একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এমনটা চাই না। আমরা মামলা করতে চাই না। কারণ, মামলার যে কি পরিণতি তা আমরা জানি। কিন্তু কতোটা টেকসই হয়েছে তা কী বলতে পারি। যতোটা উন্নয়ন হয়েছে সেটা ধরে রাখাই বড় উন্নয়ন।
তিনি বলেন, পুলিশকে দেখলে আমরা ভয় পাই। এটি কাটানোর জন্য পুলিশকে জনবান্ধব হতে হবে। পুলিশ অনেক সময় আসামি ধরতে মানুষের বাড়ি যায়। কিন্তু আমরা কী ওই পুলিশ হতে পারি না- যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের খোঁজ-খবর নেবেন। তার মেয়েটা ভালো আছে কী না। কেউ তাকে টিজ করে কি না?
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, শতভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসে। এটা বড় ধরনের উন্নয়ন। যা বিশ্বের রোল মডেল। কিন্তু কতোজন শিক্ষার্থী ড্রপ আউট হলো, ক্লাসে ঠিকমতো পড়ানো হয় কি না। তা মনিটরিং না হলে এ উন্নয়নের দাম নেই।
তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে বলেন, সারাদেশে আমাদের এতো অফিসের দরকার নেই। আমি চাই, এই অফিস যতটা কমবে ততই ভালো। এ প্রসঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এখনো আমার কমিশনে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। আর অফিস বাড়ালে অভিযোগ আরও বাড়তে পারে। তবে এখনো ১৬টি অফিস নতুন করার প্রস্তাব রয়েছে। ভেবে-চিন্তে সেগুলো করা হবে।
দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তাদের আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, দুদকের হাত অনেক লম্বা। এ ক্ষেত্রে আইনও অনেক কঠোর। তাই মামলা না হলেই যে আটক করা যাবে না এমন কথা দুদকের আইনে নেই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আপনার মায়ের গলা থেকে চেইন ছিনতাই হচ্ছে, চুরি হচ্ছে তখন কি আপনি চোরকে ছেড়ে দেবেন?
ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি জেলায় জেলায় হয়, কিন্তু চাঁদপুর জেলায় দুর্নীতি বেশ কম। আমি চাই, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে আগেই যেন চাঁদপুর জেলাকে দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করতে পারি। এটি আমার জন্য গর্বের। কারণ চাঁদপুর আমার জন্মভূমি। এ জন্য সারাদেশেই জেলাভিত্তিক একটি দুর্নীতি প্রতিরোধ বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহা-পরিচালক সরোয়ার মাহমুদ, চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, বিএম হান্নান, সাংবাদিক আলম পলাশ।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মঈনুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ জামাল হোসেন, চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, শিক্ষা অফিসার সফিউদ্দিন, জেলা মৎস্য অফিসার আসাদুল বাকী, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম মুজিবুর রহমানসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকতা, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকরা।
বিকেলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।