হাজীগঞ্জে শাশুড়ি হত্যার দায়ে আটক পুত্রবধূ জেলহাজতে

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রাম থেকে মনরোমা সূত্রধর (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা নারীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাটি হত্যাকাণ্ড বলে স্বীকার করেছে পুত্রবধূ শিউলী রানী সূত্রধর। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকায় তাকে শনিবার (৩ এপ্রিল) আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে তিনি (পুত্রবধূ) হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে শুক্রবার পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
উল্লেখিত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে হত্যাকান্ডের শিকার মনরোমা সূত্রধরকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী দাহ সম্পন্ন করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকালে পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রামের সূত্রধর বাড়ি থকে মনরোমা সূত্রধরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার শরীরে আঘাতে চিহ্ন এবং শরীর রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল বলে জানা গেছে।
নিহত মনরোমা সূত্রধর ওই বাড়ির হরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধরের স্ত্রী। তার একমাত্র ছেলে গৌরাঙ্গ চন্দ্র্র সূত্রধর ওরফে বেচার স্ত্রী শিউলী রানী সূত্রধর শাশুড়িকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের বড় মেয়ে পুতুল রানী সূত্রধর তার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলী রানী সূত্রধরকে একমাত্র আসামি করে শুক্রবার হাজীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
থানা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে শাশুড়ির লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসার সময় নিহতের ছেলে গৌরাঙ্গ ও পুত্রবধূ শিউলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে শিউলী স্বীকার করে বলেন, প্রথম শাশুড়িকে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। শাশুড়ির মৃত্যুর অনেক পরে তার স্বামী গৌরাঙ্গ বাড়িতে আসে। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়ে গৌরাঙ্গকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, নিহত মনরোমার ছেলে গৌরাঙ্গ চন্দ্র সূত্রধর ওরফে বেচার স্ত্রী শিউলী রানীর সাথে কখনো বনিবনা হতো না। বউ-শাশুড়ির মাঝে সব সময় ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। বৃহস্পতিবার বিকালে আহত অবস্থায় বাড়ির পাশ থেকে মনরোমাকে উদ্ধার করে। এরপর সন্ধ্যায় তিনি মারা যান বলে নিহতের পরিবার, বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়রা জানতে পারেন। এ সময় নিহত মনরোমা সূত্রধরকে পুত্রবধূ শিউলী রানী হত্যা করেছেন বলে গুঞ্জন উঠে।
পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ সার্কেল) মো. সোহেল মাহমুদ ও হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর নিহতের সুরতহাল শেষে মরদেহ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে এবং পুত্রবধূ শিউলী রানীকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
নিহত নারী মনোরোমা সূত্রধরের মেয়ের জামাতা অভিলাষ চন্দ্র সূত্রধর জানান, তার শালা গৌরাঙ্গ সূত্রধরের স্ত্রী শিউলী রাণী সূত্রধরের বনিবনা হতো না। তার শাশুড়ি মনরোমাকে প্রায় মারধর করতো এবং ঠিকমত খাবার দিতো না শিউলী রানী সূত্রধর। যে কারণে থানায় একবার সাধারণ ডায়রিও করা হয়েছে। তার এবং স্থানীয়দের ধারণা নির্যাতনের কারণে মনোরোমা সূত্রধরের মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ জানান, শাশুড়িকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে পুত্রবধূ। এ ঘটনায় নিহতের বড় মেয়ে পুতুল রানী সূত্রধর তার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলী রানী সূত্রধরকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
০৪ এপ্রিল, ২০২১।