শওকত আলী
চাঁদপুর জেলায় এ বছর কৃষক পাট চাষ করে করে বিগত বছরের তুলনায় তাদের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ। প্রকৃত মূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শত-শত কৃষক। তারা গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের মূল্য পাচ্ছে অর্ধেকের ও কম। এ বছর পাঠের জন্য উপযোগী সময়ে যে পরিমাণ বৃষ্টি হলে পাট উৎপাদনে জন্য তার চাহিদা অনুপাতে পানির প্রয়োজন ছিল, সে পরিমাণ পানি না পেয়ে এ পাটের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছে।
এভাবে পাট উৎপাদনে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, কিন্তু পাটের মূল্যও তারা পাচ্ছে না বলে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের বিরাজ করছে। কৃষকদের অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঠ পর্যায়ে এসে কৃষকদের খোঁজ-খবর ও সঠিক পরামর্শ পর্যন্ত তাদের দিচ্ছে না। তারা অফিসে বসে তাদের দায়সারা মনিটরিং করছে।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে সোমবার (৯ আগস্ট) এ প্রতিনিধি দেখতে পান শহরতলীর শাহ্মাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহাতলী এলাকায় একজন কৃষক পাট ধুয়ে পরিস্কারের কাজ করছেন। আর কৃষাণীরা সে পাট গাছ থেকে পাট ছাড়িয়ে পাট খড়ি বের করছে।
চাঁদপুরকে বলা হয়ে থাকে সব প্রকার ফসল উৎপাদনের সুনির্দিষ্ট ও সুফলা উর্বরযোগ্য মাটি ও সঠিক আবহাওয়ার অনুকূলের একটি নির্ভরযোগ্য স্থান। এখানে যে কোন ফসল ফলন ভাল হয়ে থাকে। এ চাঁদপুর জেলাটির চারদিকে রয়েছে নদীবেষ্টিত। যার ফলে এখানে মাটির উর্বরতা অনেক জেলার চাইতে বেশি।
এ জেলার কৃষি আবাদের জন্য জমিগুলো অত্যান্ত খুবই উর্বর। তবে জমিতে পানি কম থাকায় এ বছর পাটের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক কৃষক পাট শুকিয়ে বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। প্রতি বছরই পাট আবাদ করে লোকসান হওয়ার কারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন কৃষক। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পাট আবাদ আগামিতে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়বে। এ জেলায় কৃষি বিভাগেরও সঠিক তত্ত্বাবধান নেই বলে কৃষি বিভাগের প্রতি কৃষকদের ব্যাপক অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনালী আঁশ খ্যাত পাট আবাদে এক সময় চাঁদপুর জেলা দেশের মধ্যে উৎপাদনে এ জেলার অবস্থান ছিল প্রথম পর্যায়ে। পাট উৎপাদনের দিকে সবচেয়ে বেশি আবাদ হতো জেলা সদর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলায়। যার মধ্যে দেশী, তোষা, কেনাফ ও মেস্তা জাতের পাট রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি বছর জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। যা আগের বছরের তুলনায় দুইশ’ হেক্টর কম।
এ বছর দেখা গেছে, মৌসুমের এই সময়ে কৃষকরা দেরিতে আবাদকৃত পাট কাটায়, আঁশ ছাড়ানো, পানিতে পরিস্কার করা, রোদে শুকানো ও বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার অনেকেই ইতোমধ্যে পাট শুকিয়ে বাড়িতে এবং নিরাপদ স্থানে স্তূপ করে রেখেছেন। এসব কাজেই এখন তাদের ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে। পাট আবাদে যে পরিমাণ খরচ হয় এবং সঠিক মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কৃষকদের মধ্যে।
কৃষকরা বলছেন, পাটের মৌসুমে এবছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে। প্রতিমণ পাট উৎপাদনে খরচ হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে পাটের দাম ৪ হাজার থেকে নেমে প্রতিমণ পাটের দাম হয়েছে দুই হাজার টাকা। প্রতিবছর এভাবে লোকসান দিয়ে পাট আবাদ করা কৃষকের সম্ভব নয়। কৃষকদের এই দূরাবস্থার খোঁজ-খবর নিচ্ছে না বলে কৃষি বিভাগের প্রতি কৃষকও জমির মালিকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
চাঁদপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জালাল উদ্দিন বলেন, চাঁদপুর জেলায় এবছর ৪১০৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। পাট কাটা ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে। পাটের ফলন মোটামুটি ভালই হয়েছে। তবে লকডাউনের কারণে পাট বাজারজাত করণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকদের খোঁজ-খবর নেয়ার বিষয়ে যে অভিযোগ তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হতে পারে কারণ আমাদের মাঠ পর্যায়ের অনেক জনবল সংকট রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করি কৃষকদের সব সময় খোঁজ নেওয়া ও সঠিক পরামর্শ দেয়ার জন্য। এ বছর করোনার কারণে সব এলোমেল হয়ে গেছে।
১০ আগস্ট, ২০২১।
- Home
- চাঁদপুর
- চাঁদপুর সদর
- চাঁদপুরে কৃষকরা পাটের সঠিক মূল্য পাচ্ছে না