ফরিদগঞ্জে ট্রাক্টরের আধিপত্যে পরিবেশ ধ্বংস

রুহুল আমিন খাঁন স্বপন
ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও অলিতে-গলিতে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে নিষিদ্ধ ট্রলি ও ট্রাক্টর। উপজেলার ছোট-বড় সব সড়কে সকাল থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত বেপরোয়াভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন।
লাইসেন্স, সিগনাল লাইট ও হর্ন ছাড়াই এগুলো রাস্তায় চলাচল করছে। এ সুযোগে অনেক অদক্ষ ও কিশোর বয়সের ছেলেরা চালাচ্ছে এসব গাড়ি। যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাসহ রাস্তায় যানজট, কালো ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ হচ্ছে। এছাড়া এসব যানবাহনের কারণে গ্রামগঞ্জের কাঁচা-পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। ট্রাক্টর চলাচলের কারণে বছর না ঘুরতেই পাকা রাস্তাগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি।
অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে যানজটের পাশাপাশি প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাক্টর শুধুমাত্র চাষাবাদের জন্য বৈধ থাকলেও এখন অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে ভারী কাজ করানোর জন্য মাটি খেকুরা এসব যান ব্যবহার করেন।
অন্যদিকে ফসলি জমির মাটি নিয়ে আসার কাজে ব্যবহৃত হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি। অভিযোগ রয়েছে, কৃষি জমির মাটি ক্রয়-বিক্রয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র জড়িত। কৃষি জমির মাটি কেটে ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে ফেলতেও কোনো দ্বিধা করছেন না এই চক্র। অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি বিক্রি এবং জমির বিক্রিত মাটি তুলে আনতে গিয়ে ট্রাক্টর পাশের জমিগুলোরও বেহাল দশা করছে।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাঁধা না থাকায় উপজেলায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা চলছে এ অবৈধ পরিবহন। এসবের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া এসব পরিবহনের বিকট শব্দের কারণে ঘটছে শব্দ দূষণও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব যান তৈরি হয় মূলত হালচাষের জন্য। দেশে অসাধু লোকজন হালচাষের ট্রাক্টরে বডি লাগিয়ে পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ বাংলাদেশ মোটরযান আইনে পাকা রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের তালিকায় এসব পরিবহনের কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকার শুধু কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য এসব যান আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিভিন্ন ইটভাটার মালিক এবং মাটি ও বালু বিক্রির সিন্ডিকেটরা হাল চাষের ট্রাক্টরগুলোতে অবৈধ ট্রলি লাগিয়ে সড়কের উপর ছেড়ে দেয়। তাদের ইট, বালু ও মাটি পরিবহন করে এ ট্রাক্টরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ২শ’ অবৈধ ট্রাক্টর বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে অবাধে চলাচল করছে। বিকট শব্দে রাতের বেলাও ঘুমানো দায়। ফলে পথচারীসহ জনসাধারণকে সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। সড়কে চলাচলের অনুপযোগী এসব পরিবহনের কারণে কমছে রাস্তার স্থায়িত্ব।
অপরদিকে সামান্য বৃষ্টি হলেই ট্রাক্টর থেকে পড়ে যাওয়া মাটি পিচ্ছিল হয়ে রাস্তা মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। বালু পরিবহনের সময় ওপর দিকটা খোলা থাকায় বালু উড়ে এসে পথচারীদের চোখে পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে।
এদিকে ২০১৭ সালে চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার প্রায় ২ বছর ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ রাখেন। পরবর্তীতে তিনি বদলী হওয়ার পরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পুনরায় চলছে ফরিদগঞ্জ উপজেলাসহ চাঁদপুর জেলায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, এসব পরিবহন বেপরোয়া চলাচলের কারণে রাস্তায় প্রচণ্ড ধূলাবালি ওড়ে। স্কুলগামী শিশুসহ বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশি আশঙ্কা থাকে।
পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান, এইসব ট্রাক্টরের চলাচলে আমরা খুব অসুবিধায় আছি। ট্রাক্টরের বিকট শব্দে চলাচলের ফলে রাতেও ঘুমাতে কষ্ট হয়। আমাদের কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমি বাঁচাতে হলে ট্রাক্টর বন্ধ করা জরুরি। আমরা চাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এগুলো বন্ধ হোক।
সচেতন মহল মনে করেন এসব নিষিদ্ধ গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। তা নাহলে দিনদিন এসব যানবাহনের প্রভাবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং আমার কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা ইউএনও সুলতানা রাজিয়া জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। অবৈধ ট্রাক্টরসহ জোরপূর্বক মাটি বিক্রিকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অচিরেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

১৩ জানুয়ারি, ২০২৫।