কৃষকের লাভের টাকা পথে-পথেই শেষ!

ফরিদগঞ্জে ধান সংগ্রহ অভিযান

নুরুন্নবী নোমান
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এবছর সরকার সর্বোচ্চ মণপ্রতি ১৪শ’ ৪০ টাকা মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার কারণে কৃষকরা খুশি। কিন্তু কৃষকদের লাভের টাকা পুরোটাই যাচ্ছে পথে পথে। লেবার ৩০ টাকা, কসর বাবদ বাড়তি ২ কেজি ধান বাদ, অফিস খরচ বাবদ ১ হাজার টাকা এবং সর্বশেষ ধানের টাকা নিতে এসে হয়রানি হওয়ায় কৌশলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। পতিত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের মতো ভয়াল সিন্ডিকেট না থাকলেও গোপন সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল খাদ্য অধিদপ্তরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ৬শ’ ৮৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে অনলাইনে আবেদনকৃত কৃষকদের মধ্য থেকে ২শ’ ৫২ জনকে নির্বাচিত করা হয়। সরকারিভাবে এবার বোরো ধান কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে কেজি প্রতি ৩৬ টাকা। বাজারে ধানের দামের তুলনায় বেশি হওয়ায় কৃষকরা খুশি।
কিন্তু কৃষকের এই আনন্দ হতাশায় পরিণত হচ্ছে, ধান বিক্রি করতে এসে পদে পদে খরচ দিতে গিয়ে লাভের দেখা না মিলায়। একজন কৃষক লটারির মাধ্যমে ৩ টন ধান (৭৫ মণ) ধান বিক্রি করতে গেলেও সরকারি মূল্যে দাম ১ লাখ ৭ হাজার ৭শ’ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও কৃষককে লেবার খরচ হিসেবে প্রতি মণে ৩০ টাকা দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ ৭৫ মণে ২ হাজার ২ শ’ ৫০ টাকা। খাদ্য অফিসে অলিখিত খরচ বাবদ টনপ্রতি ১ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। কসর হিসেবে প্রতি মণে ২ কেজি বেশি করে ধান দিতে হচ্ছে কৃষকদের। অর্থাৎ ৭৫ মণে ১৫০ কেজি। কেজি ৩৬ টাকা করে ১৫০ কেজি ধানের দাম ৫ হাজার ৪শ’ টাকার ধান বেশি দিতে হয় গুদামে। সবিমিলিয়ে সরকারি মূল্য মণ ১ হাজার ৪শ’ ৪০ টাকা হলে কৃষক সব খরচ বাদ দিয়ে পায় মাত্র ১ হাজার ২শ’ ৪০ টাকা। এরপর কৃষকদের বাড়ি থেকে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া বাবদ একটি বড় অংক গুণতে হচ্ছে। সবমিলে ধান বিক্রির লাভের অংশ চলে যাচ্ছে পথে পথে।
লটারির মাধ্যমে প্রথম হওয়া ফারুক খান জানান, আমার এক নামে ৩ টন ধান বিক্রি করতে গেলে প্রতি মণে লেবার খরচ ৩০ টাকা করে দিতে হয়েছে। অফিস খরচ বাবদ প্রতি টন ধান বাবদ ১ হাজার করে ৩ হাজার টাকা খরচ নিয়েছে।
আর এই টাকা সংগ্রহ করছেন খাদ্য গুদামের খাদ্য পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন নিজেই। অভিযোগ রয়েছে তিনি গোপন সিন্ডিকেটের সাথে মিল করে গোপনে অনেক কিছুই করছেন। অফিস খরচ নিচ্ছেন। ধানের আর্দ্রতা নিয়ে কৃষকদের হয়রানি করছেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে খাদ্য পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন তার বিরুদ্ধের আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, লেবার খরচ নেয়ার বিষয়টি সত্য। এছাড়া অন্য কোন কিছু নেই। কোন সিন্ডিকেট নেই। কিন্তু একটা গোপন ভিডিওতে দেখে তিনি বলেন, ‘আমি ঠিকাদারের কাছ থেকে খরচ নিয়ে নেবো।’
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, লেবার খরচ বাবদ মণ প্রতি ৩০ টাকা করে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এছাড়া বস্তার ওজন ও কসর বাবদ বাড়তি ১ কেজিসহ মোট ৪২ কেজি ওজন মাপা হচ্ছে। অফিস খরচ কথা বলে কোন রকম টাকা নেওয়ার কথা তিনি জানেন না বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া জানান, বিষয়টি মাত্র জেনেছেন এবং খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

০৩ জুন, ২০২৫।