নানা অপরাধে অভিযুক্ত
স্টাফ রিপোর্টার
কাজী মতিন মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের আবুল হোসেন কাজীর ছেলে। রাজনৈতিক মতাদর্শে এক সময় ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, পরে যুবদলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ান ইলেভেনের পর সরকার পরিবর্তনের কারণে খোলস পাল্টে বনে যান যুবলীগ নেতা। তিনি সর্বশেষ মোহনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইদানিং শোনা যাচ্ছে- তিনি আবার যুবদল বা বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টা করছেন।
তবে কাজী মতিনের বিষয়ে রয়েছে নানা অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা। এরমধ্যে ডাকাতি, হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামিও ছিলেন। ৫ আগস্টের পর চাঁদপুর ছাড়াও তিনি ও তার ভাই চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান নারায়নগঞ্জে শেখ হাসিনাসহ হত্যা মামলার আসামি।
গত ৩০ ডিসেম্বর কাজী মতিন এক মামলায় (জিআর ১৪১/২১) ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসেবে চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক হন। এরপর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরের আলোচিত বালুখেকো ও গণপিটুনিতে নিহত সেলিম খানের সহযোগী ও বালুমহালের ক্যাশিয়ার ছিলেন এই কাজী মতিন। ৫ আগস্টের পরে অন্তর্বর্তী সরকারের এই সময়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে সেলিম খানের ড্রেজিং কাজে ব্যবহৃত নৌযান ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের একাধিকবার চেষ্টা করেন। প্রশাসন তার এসব বিষয় টের পেয়ে একসাথে বেশ কয়েকটি ড্রেজার জব্দ করেন। ওই সময় কাজী মতিন তার এসব ড্রেজার ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌ-পুলিশের কাছে একাধিকবার তদ্বির করেন। তার এই বিষয়টিও জানাজানি হয়।
কাজী মতিন তার পরিবারের হয়ে মতলব উত্তর ও চাঁদপুর সদর এলাকায় বালু দস্যু হিসেবে প্রভাব বিস্তার করেন। সম্প্রতি সময়ে বেশ বড় আকারে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের পরিকল্পনা করেন। এই কাজে তিনি প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে ম্যানেজ করে নানা চেষ্টা তদ্বির চালিয়েছেন।
তিনি নানা অপরাধমূলক কাজ আড়াল করার জন্য রাজনৈতিক দলের পরিচয় বহন করতেন। এই ব্যাক্তি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রথমে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, পরবর্তীতে উপজেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক, ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সর্বশেষ ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। তিনি শুধুমাত্র রাজনৈতিক পরিচয়ই নয়, তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় অপরাধমূলক কাজ করেন।
মতলব উত্তর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী শরীফ বলেন, কাজী মতিন মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এটি হচ্ছে সর্বশেষ কমিটি। এরপর আর নতুন কমিটি হয়নি।
কাজী মতিনের এসব কাজের নেপথ্যে শক্তি হিসেবে ছিলেন তার আপন বড় ভাই ও মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান। এছাড়া ৫ আগস্টের পর বিএনপির এক নেতাকে তার এই কাজে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করছেন।
কাজী মতিন ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন পর্যন্ত নানাভাবে মতলব উত্তর ও সদরে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন। গত ২০ আগস্ট কাজী মতিনের বড় ভাই চেয়ারম্যান কাজী মিজানুর রহমান এর বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেস সাজ্জাদ নামে আইডি থেকে তথ্য ও ছবি প্রকাশ করা হয়। ওই পোস্টে কাজী মিজানের সভার বক্তব্যের ছবি দিয়ে লেখা হয় ‘স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দালাল, লঞ্চের মুড়ি বিক্রেতা, একাধিক মামলার আসামি, চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সাথে কিভাবে মিটিং করে, মতলব উত্তর থানার ওসি, মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, প্রত্যেকের পদত্যাগ দাবি করছি, প্রত্যেকের যত অবৈধ সম্পদ আছে দুদককে অনুরোধ করবো- খুঁজে বের করার জন্য।
২১ জানুয়ারি, ২০২৫।