ফ্যাসিবাদী ও আ.পন্থী কাউকে নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না

হাজীগঞ্জে পথসভায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলমের পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি দুপুরে তিনি তার নিজ উপজেলায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ যাওয়ার পথে তিনি হাজীগঞ্জে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এসময় তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন রাজনেতিক দলের নেতবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গণতান্ত্রিক পট-পরিবর্তনের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা আমাদের সরকারের অঙ্গীকার। আমরা মনে করি, গত ১৬ বছর হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গুম, খুন, পঙ্গু, ধর্ষণ ও লুটতরাজ করা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, আলেম-ওলামা, ছাত্র-জনতা ও সব সংগঠনসহ আমরা সবাই মিলে দেশকে মুক্ত করেছি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যে ব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে গণহত্যা, নিপীড়ন-নির্বিচার ও লুটপাট চালিয়েছে এবং গুম-খুন ধর্ষণ করেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ছাড়া সামনে আগাতে চাই না। আমরা যদি ন্যূনতম সংস্কার না করে নির্বাচন করি তাহলে আওয়ামী দোষররা ওই সব প্রতিষ্ঠানে থেকে যাবে। তাহলে জনগণ বৈষম্য ও নিপীড়ন মুক্ত হতে পারবে না। সুতরাং সংস্কার কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে শীঘ্রই রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সাথে আলোচনা করে এবং সংস্কার গণতান্ত্রিকভাবে পট-পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি, হাজীগঞ্জে চারজন শাহাদাতবরণ করেছেন। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। যারা জীবিত আছেন, তাদের প্রতি নিরন্তর শুভ কামনা। তাদের সুস্থতা কামনা করছি। তারা সুস্থ হবেন এবং আমাদের সাথেই দেশ গড়ার কাজ করবেন।
মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের লড়াইটা মূলত গত ৫৩ বছরের একটি অস্থিতিশীল বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াই। একটি ফ্যাসীবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াই। যদি আওয়ামী লীগ আবার ফেরত আসে, তাহলে আবারো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে চারটি পত্রিকা ছাড়া সব মিডিয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছেন। নব্য দেশটির স্বাধীনতাকে ভুলণ্ঠিত করেছে। কয়েক হাজার বিরোধী নেতৃবৃন্দকে গুম করেছেন শেখ মুজিব। ওই সময়ের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ একই স্টাইলে বাংলাদেশে গুম-খুন করেছিলো।
আমরা শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার শাসন বাংলাদেশে আর চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশ বাংলাদেশপন্থীদের হাতে থাকবে। বাংলাদেশে আর দিল্লিপন্থীদের স্থান হবে না। আমরা বলেছি, বিএনপি-জামায়াত নির্বিশেষে যত রাজনৈতিক দল, ছাত্র, শ্রমিক, আলেম-ওলামা রয়েছেন তারাই বাংলাদেশে থাকবেন। এই বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি পজেটিভ কম্পিটিশনের ভিতর দিয়ে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বৈষম্যবিরোধী এবং ইনসাফমূলক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবে। যারা বাংলাদেশপন্থী তাদের মধ্যে নির্বাচন হবে। ফ্যাসিবাদী এবং আওয়ামীপন্থী কাউকে নির্বাচনে আসতে দেওয়া হবে না। আমাদের সরকারের যে অগ্রাধিকার হচ্ছে, খুনিদের বিচার করা, গুম-খুন ও ধর্ষণের বিচার করা এবং সংস্কার করা। অবশ্যই বাংলাদেশপন্থীদের অংশগ্রহণের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া হবে। গত ১৬ বছরে যেটা সম্ভব হয়নি, বর্তমান সরকার সেটা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। আমি হাজীগঞ্জবাসীকে আমাদের সাথে থেকে সব সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার আহ্বান জানাই।

২৭ জানুয়ারি, ২০২৫।