আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতায় সন্তুষ্ট চাঁদপুরবাসী

কাল থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন

ইলশেপাড় রিপোর্ট
আগামিকাল বুধবার থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে আগামিকাল বুধবার থেকে অফিস ও গণপরিবহনসহ সবকিছু খুলে দেওয়া হচ্ছে। গত ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এদিকে চলমান লকডাউনে চাঁদপুরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মতৎপরতায় সন্তুষ্ট জেলাবাসী। আগের তুলনায় এবারের লকডাউনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিলো নজরকারা। জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ের তৎপরতার পাশাপাশি জেলা পুলিশ নিজস্ব তৎপরতা ছিলো সন্তোষজনক। পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদের সরাসরি দিকনির্দেশনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠ পর্যায়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে উৎসাহব্যাঞ্জক কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করেছেন। এছাড়া কর্মহীন ও অসহায় মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ শাহরাস্তি, হাইমচর ও কচুয়া উপজেলার ২শ’ করে ৬ শতাধিক অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
টানা লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদসহ পুলিশের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কনস্টেবলরা দিবা-রাত্রি কাজ করেছেন। জেলাজুড়ে চেকপোস্ট ও মোবাইল টিম ছাড়াও সাদা পোশাক ও ডিবি’র একাধিক টিম কাজ করেছে চলতি লকডাউনে। রাতের বেলাও নিয়মিত টিম পুরো জেলা চষে বেড়িয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতে সেনাসদস্যদের সাথেও তারা কাজ করেন।
চাঁদপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান লকডাউনে সারা জেলায় পুলিশের ৩১টি মোবাইল টিম, ২৮টি চেকপোস্টে প্রতিদিন ৩শ’ ৩৫ জন পুলিশের বিভিন্ন স্তরের সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। রাত-দিন বিরামহীন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) সোহেল মাহমুদ এখনো করোনার সাথে যুদ্ধ করছেন।
পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে আরো জানা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধের এই লকডাউনে জেলাব্যাপী পুলিশের তৎপরতায় সাধারণ মানুষকে সচেতনা বৃদ্ধিসহ ঘরমুখী করে রাখা সম্ভব হয়েছে। যার কারণে জনসংখ্যার তুলনায় এ জেলায় করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত ছিলো। এজন্য উপজেলাভিত্তিক পুলিশের তৎপরতাও ছিলো উল্লেখ করার মতো।
লকডাউন বাস্তবায়নে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় দিনে পুলিশের ৬টি মোবাইল টিম ও ৬টি চেকপোস্ট এবং ট্রাফিক পুলিশের ৬টি চেকপোস্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। রাতে নিয়মিত ৮টি টিম কাজ করে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়ান্দা পুলিশের (ডিবি) ৮টি টিম ও পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) ২টি টিম মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছে।
এছাড়া হাজীগঞ্জে চেকপোস্ট ৬টি ও টহল টিম ৩টি, ফরিদগঞ্জে চেকপোস্ট ৩টি ও টহল টিম ৪টি, হাইমচরে চেকপোস্ট ২টি ও টহল টিম ২টি, মতলব দক্ষিণে চেকপোস্ট ৩টি ও টহল টিম ২টি, মতলব উত্তরে চেকপোস্ট ২টি ও টহল টিম ৩টি, শাহরাস্তিতে চেকপোস্ট ৪টি ও টহল টিম ৪টি এবং কচুয়ায় চেকপোস্ট ৪টি ও ৩টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করে।
পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ ইল্শেপাড়কে জানান, বৈশ্বিক করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সাবেক পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমানসহ এ পর্যন্ত ২শ’ ৫২ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে যোগদান করছেন ২শ’ ২৬ জন সদস্য। পুলিশ সদস্যরা আন্তরিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে কর্তব্য পালন থেকে কোন সদস্যই অবহেলা করেনি বলে জেলা পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান।
পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ আরো জানান, জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এত কমসংখ্যক পুলিশ সদস্যদের নিয়ে আমারা দায়িত্ব পালন করছি। লকডাউনের পাশাপাশি জেলার নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতেও পুলিশের প্রত্যেক সদস্য শতভাগ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া সরকারি ও প্রশাসনিক অতি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ও সভাসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করছে জেলা পুলিশ। এছাড়া জেলার অনেক দরিদ্র মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছে জেলা পুলিশ।
তবে জেলা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বলা হয়েছে, আগামিকাল থেকে যেহেতু লকডাউন উঠে যাচ্ছে তাই জনজীবন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে আগের মতোই। কিন্তু করোনা মহামারীর ছোবল যেহেতু অব্যাহত আছে এজন্য সবাইকে নিজ নিজ পরিবেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি পুলিশকে আগের মতো সর্বাত্মক সহযোগিতা করলে একটি সুন্দর চাঁদপুর সবাই মিলে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
উল্লেখ্য, গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও চাঁদপুর জেলায় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে। চাঁদপুরকে করোনামুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে লকডাউনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতেও দেখা গেছে।
১০ আগস্ট, ২০২১।