করোনা মোকাবেলায় চাঁদপুরে সচিবের মতবিনিময়

করোনা যুদ্ধে আমাদের বিজয়ী হতে হবে
……ত্রাণ সচিব শাহ কামাল

স্টাফ রিপোর্টার
করোনা ভাইরাসের এই সংকটময় সময়ে সরকারের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল।
তিনি শনিবার দুপুরে চাঁদপুর সার্কিট হাউসে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চাঁদপুর জেলায় গৃহীত কার্যক্রম তদারকি উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এই হুঁশিয়ারী দেন।
এ সময় তিনি বলেন, যারাই ত্রাণ নিয়ে অনিয়মে জড়িত হবে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন অবস্থাতেই এই অনিয়মকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না।
দেশে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য মজুদ রয়েছে। খাদ্যের অভাবে দেশের কোন জনগণকে না খেয়ে থাকতে হবে না। সভায় চাঁদপুরে ত্রাণ নিয়ে কোন অনিয়ম না হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকসহ এই পর্যন্ত দেশের ৩০% মানুষ সরকারি ত্রাণ পেয়েছে। আগামি কয়েকদিন পরে শবে কদর ও ঈদুল ফিতর। এই দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে যাতে করে কোন ধরনের স্বাস্থ্য বিধি লঙ্ঘন না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচিব বলেন, আপনাদের মধ্য থেকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে কথা এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার সব জেলা প্রশাসকদের সাথে কথা বলেছি। তাদের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলেছি এবং বিভাগীয় কমিশনারদের সাথে সভা করেছি। সেখানে আমরা বলেছি বিগত দিনে যেসব ঘূর্ণিঝড় আমরা মোকাবেলা করেছি সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবো এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসবো। আগামি ২০ মে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগেই জেলার সব কৃষকদের ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসতে হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী, এনএসআই’র যুগ্ম-পরিচালক মো. আজিজুল হক, সিভিল সার্জন ডা. মো. শাখাওয়াত উল্ল্যাহ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্ল্যাহ, হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা কে বি এম জাকির হোসেন, সাংবাদিক আলম পলাশ ও তালহা জোবায়ের।
সভায় ভার্চুয়াল (জুম এ্যাপস) এর মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ কুদ্দুস, হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মাঈনুদ্দিন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি, হাজীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ ফাতেমা, শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার, কচুয়া নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ন দাস শুভ, মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা হক।
শাহ কামাল আরো বলেন, করোনা যুদ্ধে সবাই অংশীদার। আমাদের এই যুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। আমাদের সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। তবে ভয় পেলে চলবে না। ঈদ উপলক্ষে সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এক থানার গাড়ি অন্য থানায় যেতে পারবে না।
তিনি চাঁদপুরে উপজেলাগুলোর চলমান অবস্থা বর্ননা দিতে গিয়ে বলেন, জেলার নিম্নাঞ্চল হচ্ছে হাইমচর। সেখানেও অনেক ভাল ত্রান দেয়া হয়েছে। হাজীগঞ্জ উপজেলায় ত্রান কমিটির সভা হয়নি। যার কারণে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য উঠে আসছে। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান দিয়ে কচুয়ায় ত্রান কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তবে এখন থেকে ২০১৮ সালের পরিসংখ্যা সংগ্রহ করে কাজ করবেন। সরকারসহ সবার সহযোগিতায় মতলব উত্তর উপজেলার লোকজন অধিক পরিমাণে ত্রান পেয়েছেন। আমার কাছে তথ্য আছে গত ৩ দিন আগে শাহরাস্তি উপজেলায় ত্রাণের পরিবহনের টাকা এসেছে। কিন্তু তা বিতরণ করা হয়নি। ফরিদগঞ্জে যানবাহন চলাচলে পুলিশকে আরো কঠোর হতে হবে। এই বিষয়ে পুলিশ সুপার ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন। মতলব দক্ষিণ উপজেলাসহ পৌরসভাগুলো ত্রাণ পরিবহনের জন্য টাকা পায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিবেন।
সচিব বলেন, খুব শীঘ্রই ‘কুইক রেসপন্স কার্ড’ দেয়া হবে। যার মধ্যে ৩টি ধাপ থাকবে। সামাজিক, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই ৩ ধাপের ত্রাণগুলোর তালিকা করে জেলা কমিটির সাথে সমন্বয় করে বিতরণ কার্যক্রম চালাতে হবে।
তিনি বলেন, যে কোন মৃত্যুই আমাদের ব্যাথিত করে। মৃত্যুর পর ভাইরাস থাকে না। মৃত ব্যক্তি যেই এলাকার চলমান বাসিন্দা সেখানেই দাফনের ব্যবস্থা করা হলে অনেক জটিলতা কমবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জানাযা বাড়িতে গিয়েই দিতে হবে এমন মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
শাহ্ কামাল বলেন, আগামি ৩০ মে পর্যন্ত সব যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ থাকবে। জেলা পুলিশকে কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারণ করতে হবে। সেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ছাবি রেখে অনুমতি দিল পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদেরকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। চাঁদপুরে লকডাউন সফল বাস্তবায়নে কাজ করবে পুলিশ। এসব কার্যক্রমে যেসব লোকজন অমান্য করতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনেক জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ হলেও জুন পর্যন্ত চাঁদপুরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলবে।

১৮ মে, ২০২০।