চাঁদপুরে অবৈধভাবে চলছে ৬০ ইটভাটা

শাহ্ আলম খান
চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায় বর্তমানে ১২৫টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে ৬০টি সরকারের নিয়মনীতি না মেনে অবৈধ প্রক্রিয়ায় ইট উৎপাদন করে পরিবেশকে ধ্বংস করছে। ইটভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতি না মেনে কাঠ, টায়ার, বিভিন্ন গার্মেন্টসের বর্জ্য ও ভুষি কালো তেল ও মবিল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। আর তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশকে দূষিত করে তুলছে। জনগণও এর মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে, নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টর গ্রামীণ জনপদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলছে। এতে মানুষের নিত্যদিন চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ইতোমধ্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের বলিয়ারপুর গ্রামের মনিরের ইটভাটা ও টুবগী এমএমবি ইটভাটার মালিক তাজুকে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করেন। তারা দু’জন জরিমানা না দিয়ে তাদের ইটভাটায় পোড়া তেল, মবিল, টায়ার ও গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে পরিবেশ চরমভাবে দূষণ করছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর ৫ বছর আগে এসব বাংলা ইটভাটাকে পরিবর্তন করে হাওয়াই ভাটা তৈরি করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা প্রশাসনের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে মনগড়াভাবে তাদের ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে।
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে যেখানে সেখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক ইটভাটা। নিয়মনীতি না মেনে গড়ে উঠা ওইসব ইটভাটার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। ওইসব অবৈধ ইটভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ এবং ফসলি জমি।
চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের ৮টি উপজেলায় ১২৫টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে হালনাগাদ ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ৪০টি ইটভাটার। বন্ধ রয়েছে ২৫টি। বাকি ৬০টি ইটভাটা নিয়মনীতি না মেনেই অবৈধভাবে ইট উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। তবে এর মধ্যে ১০/১৫টি ইটভাটার ছাড়পত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।
ওইসব ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাঠ, টায়ার, বিভিন্ন গার্মেন্টসের বর্জ্য ও ভুষি জ্বালিয়ে তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত করছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি ইটভাটার ধোঁয়ায় জমির ফসল এবং ফলদ গাছে ফল ধরাও হ্রাস পাচ্ছে।
চাঁদপুর পরিবেশ আন্দোলনের নেতা মো. নাছির চোকদার বলেন, ওইসব ইটভাটার ধোঁয়া বাতাসে মিশলে মানুষ শ্বাসকষ্টসহ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়। তাই অচিরেই এগুলো বন্ধ করা দরকার।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাদিম হোসেন বলেন, অবৈধভাবে গড়ে উঠা ওইসব ইটভাটার বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। চলতি বছরে ৫টি ইটভাটাকে জরিমানা করে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি ইটভাটা জরিমানার টাকা না দিয়ে তাদের ভাটা চালাচ্ছে। আবারো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।