চাঁদপুরে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে ছড়াচ্ছে করোনা

ইলশেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসছে পারস্পরিক সামাজিক যোগাযোগ ও দৈনন্দিন কার্যক্রম। মানা হচ্ছে না কোন ধরনের লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব। হাটে-বাজারে, পথে-ঘাটে, ঘরে-বাইরে এমনকি সড়কের ক্ষুদ্র যানবাহনে মানুষের উপচেপড়া চাপের কারণে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে গত ৩ দিন জেলা প্রশাসনের অভিযানে কিছুটা দমেছে জনসমাগম। কিন্তু সন্ধ্যার পর চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় কিশোর-যুবকদের আড্ডা। যা চলে রাত ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত। ঐসময় তারা কাউকেই মানতে চায় না। এমনকি এলাকার লোকজন তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করলেও তারা দুর্ব্যবহার করে।
প্রায় দু’মাস যাবত করোনা সংক্রমন শুরুর পর থেকে প্রথম দু’একদিন চাঁদপুরের জনগণ কিছুটা ঘরে থাকলেও এরপরই শুরু হয় স্বাভাবিক চলাফেরা। কিন্তু সম্প্রতি দোকান খোলার সরকারি সিদ্ধান্তের পর মানুষজন হুমড়ি খেড়ে পড়তে থাকে দোকানগুলোর দিকে। এদিকে জেলা প্রশাসক দোকান বন্ধের বিজ্ঞপ্তি দিলে আর লোকজন সেমুখো হতে না পারলেও বিকল্প পথ ধরে। আর তখনই চাঁদপুরে হু-হু করে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। মৃত্যু না থাকলেও আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেকটা হুমকির মুখে চাঁদপুরের জনজীবন।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্তের পর থেকেই সরকারিভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ ও উপস্থিতি। যা ছিল কার্যত লকডাউন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগ দেয় সেনাবাহিনী।
পরিস্থিতির সাথে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সাধারণ মানুষসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়ে যায় বিপাকে। শুরু হয় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা। তবে সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণ বিতরণ নিয়ে উঠে ব্যাপক বিতর্ক। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণকৃত ত্রাণের বেশিরভাগই হয়ে যায় হরিলুট। এমন পরিস্থিতিতে আলোচনা-সমালচনার মধ্যে দিয়ে কার্যত সীমিত হয়ে আসে ত্রাণ বিতরণের তৎপরতা।
বিপাকে পড়তে হয় নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ অস্বচ্ছল পরিবারগুলোর। তারা খাবরের জন্য হাহাকার করে পায়নি কোন সরকারি কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতা। ফলে এসব মানুষগুলো অনাহারে ও অর্ধাহরে দীর্ঘদিন ঘরবন্ধী থাকার পর কাজের জন্য ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে থাকে। যার কারণে পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের কার্যক্রম সীমিত পর্যায়ে নিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে এখন সবর্ত্রই জনসমাগম স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। যা এখন হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে। সচেতন মহল ও স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করছে, এই অবস্থার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়াবে করোনা সংক্রমন।
গতকাল বুধবার (১৩ মে) পর্যন্ত চাঁদপুরে করোনায় সংক্রমিত হয় মোট ৬০ জন। গতকালের রিপোর্টে একদিনেই আক্রান্ত হয় ১২ জন। যা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের কারণেই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করছে। তবে চিকিৎসকরা আরো যোগ করছেন সর্বসাধারণ করোনা উপসর্গের তথ্য গোপন করাকে। যা পরবর্তীতে পুরো চাঁদপুরকেই ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
চাঁদপুর জেলার করোনাভাইরাসে আক্রান্তরা হলেন- সদর উপজেলায় ৩৭ জন, ফরিদগঞ্জে ৭ জন, মতলব উত্তরে ৬ জন, হাজীগঞ্জে ৪ জন, হাইমচরে ২ জন, কচুয়ায় ২ এবং শাহরাস্তির উপজেলার ২ জন।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস জানায়, এ জেলা থেকে মোট ৯শ’ ১৯ জনের স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে করোনা সনাক্তের জন্য। ইতোমধ্যে রিপোর্ট এসেছে ৮শ’ ২১ জনের। যার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। এদের মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যায় ৪ জন। মৃতদের রিপোর্ট পজিটিভ ছিলো। আক্রান্ত ১৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে বলে সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় অনেকেই শরীরে করোনার উপসর্গ থাকার পরও তা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। যা খুবই আশঙ্কাজনক বিষয়। এতে করে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা এখন অনেকটাই নিশ্চিত।
সিভিল সার্জন অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কারো শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়া মাত্র সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করার জন্য। সবার বুঝা উচিৎ, করোনায় আক্রান্ত মানেই মৃত্যু নয়। তাছাড়া কেউ আক্রান্ত হলে এবং তা জানা গেলেই পরিবারের অন্যসব সদস্যদের সহজেই সুরক্ষা করা সম্ভব।

১৪ মে, ২০২০।