দরিদ্র পরিবার ও হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন শীতে কাবু
মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
পৌষের শুরুতেই সারা দেশের মতো চাঁদপুরেও শীত জেঁকে বসেছে। আর এই শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষসহ জেলার অসহায় দরিদ্র পরিবার ও হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন। সকাল-সন্ধ্যায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি-ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। যারা হাসপাতালে আসছেন, তাদের অধিকাংশই গরিব রোগী।
এছাড়া প্রতি বছরই শীতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন চরাঞ্চলবাসী। এবারো ব্যতিক্রম হয়নি। নদী ভাঙনের ধকল সামলে উঠতে না উঠতেই শীতে কাতর হয়ে পড়েছে তারা। সমতল এলাকা থেকে চরাঞ্চলে তুলনামূলকভাবে প্রতি বছরই শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। প্রচণ্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চরের মানুষের কষ্টের পাশাপাশি কাজকর্মও বন্ধ হয়ে যায়। ঠান্ডার কারণে কৃষিকাজ চরমভাবে ব্যাহত হয়ে থাকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা নামার পরপরই চরাঞ্চলের মানুষ রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ছেন। আবার খুব ভোরে উঠেই বেরিয়ে পড়ছেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু প্রচন্ড শীতে কাবু হয়ে পড়ছেন তারা। নারী, শিশু এবং বৃদ্ধরা একটু উষ্ণতা পেতে রোদের খোঁজে বের হন। রোদের দেখা না পেলে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন। বেশিরভাগ মানুষের নতুন শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ না থাকায় পুরাতন কাপড় ব্যবহার করছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছর ব্যবসায়ী, বেসরকারি চাকরিজীবী ও প্রবাসীসহ শ্রমজীবী মানুষরা কম-বেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। বিপাকে পড়েছিলেন মধ্যবিত্তরাও। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও দরিদ্র পরিবারের লোকজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বেশিরভাগ পরিবার সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ও ধার-দেনা করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। আর উদারহস্তে সামর্থবান লোকজন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
করোনায় সামর্থবানদের এই উদারহস্তে ব্যাপকহারে সহযোগিতার কারণে এই শীতে শীতবস্ত্র বিতরণের হার উল্লেখযোগ্য হারে কম দেখা যাচ্ছে। করোনায় নতুন করে শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ না থাকায় এবং শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি গরিব, অসহায়, শ্রমজীবী, ছিন্নমূল, হরিজন সম্পদ্রায়ের মানুষ ও শিশুরা খুব কষ্ট পাচ্ছে এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। টাকার অভাবে নেই পুরাতন শীতবস্ত্রের দোকানেও লোকজনের ভীড়।
এদিকে শীতে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগ। এমন কোন পরিবার নেই, যেখানে হাঁচি, সর্দি ও কাঁশিতে আক্রান্ত লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে দেখা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। যারা হাসপাতালে আসছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই গরিব রোগী। আর যারা হাসপাতালে আসতে পারছেন না তাদের ভরসা স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক।
চরাঞ্চলের মানুষের সাথে কথা হলে তাদের মধ্যে অনেকেই জানান, গ্রীষ্মকালে চরের লোকজন হাট-বাজার থেকে দেরি করে ফিরলেও এখন শীতের কারণে উল্টো হয়েছে। সন্ধ্যা নামার আগেই বাজার থেকে বাড়ি-ঘরে ফিরছেন লোকজন। এরপর তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে সবাই। বেলা উঠলেই কাজে যোগ দিচ্ছেন তারা। শীতের কারণে চর ও হরিজন সম্পদ্রায়ের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা বেশি কষ্টে রয়েছে।
সাধারণত প্রতিবছর সরকারি বা বেসরকারিভাবে যেসব শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়, সেগুলো দিয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। কিন্তু এবছর করোনায় সব পর্যায়ের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাপকহারে শীতবস্ত্র বিতরণের হার ক্ষীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বল্পমূল্যে শীতবস্ত্র বিক্রি করার সুযোগ তৈরি করলে চরাঞ্চলবাসীসহ নিম্নআয়ের মানুষ উপকৃত হবে।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস.এম সোয়েব আহমেদ চিশতী জানান, ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। তিনি বলেন, এই শীতে বাচ্চাদের যত্নের সাথে রাখতে হবে। যদি কোন বাচ্চার ঠান্ডাজনিত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত তাকে নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা কে.বি.এম জাকির হোসেন বলেন, চাঁদপুরের জন্য চলতি বছর ৪৪ হাজার ৭০০ কম্বল সরকারিভাবে বরাদ্দ পেয়েছি। যা আগামি সপ্তাহের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া কম্বল ক্রয়ের জন্য উপজেলা প্রতি ৬ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে ক্রয় করা হবে। এই কম্বল কেনার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।
২৩ ডিসেম্বর, ২০২০।