আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফ। সোমবার (১১ এপ্রিল) দেশটির পার্লামেন্টে ১৭৪ সদস্য তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে ভোট দিয়েছেন। খবর দ্য ডনের।
এর আগে, সোমবার বিকেলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়। তবে অনাস্থা ভোট প্রত্যাখ্যান করায় পার্লামেন্টে থেকে ওয়াকআউট করেন ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পিটিআইয়ের সদস্যরা। এরপর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ।
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল মূলত ২০২৩ সালের আগস্টে। কিন্তু তার আগেই অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। অতীতের ধারা অনুসরণ করে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতনও হয়েছে মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে পিটিআইয়ের ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মুহাম্মদ কোরেশি ও পিএমএল-এন শাহবাজ শরিফ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু সোমবার পার্লামেন্টে কোরেশি ঘোষণা দেন, তাদের দলের সবাই একসঙ্গে পদত্যাগ করবেন। এর পরপরই পার্লামেন্ট থেকে ওয়াক আউট করেন তারা।
ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি ‘বিবেকের বাধায়’ দায়িত্ব পালন করতে না পারায় এদিন অধিবেশন পরিচালনা করেন পিএমএল-এন নেতা আয়াজ সাদিক। চেয়ারে বসে তিনি ঘোষণা দেন, আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্ট কক্ষে প্রবেশের জন্য পাঁচ মিনিট ধরে ঘণ্টা বাজানো হবে। ঘণ্টা থামার পর সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না।
এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন সাদিক। কিন্তু এসময় ভুলক্রমে শাহবাজ শরিফের বদলে তার ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নাম উচ্চারণ করে ফেলেন তিনি। অবশ্য পরক্ষণেই তা সংশোধন করে বলেন, ক্ষমা চাচ্ছি শাহবাজ সাহেব, নওয়াজের নাম আমার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে।
এরপর তিনি শাহবাজের পক্ষের ভোটদানে ইচ্ছুকদের বাম পাশে ও কোরেশির পক্ষের লোকদের ডান পাশে গিয়ে ভোট দিতে বলেন। ভোট এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং এর ফলাফল জাতীয় পরিষদ সচিবের কাছে পৌঁছেছে।
কে এই শাহবাজ শরিফ : পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শাহবাজ শরিফ। গতকাল সোমবার (১১ এপ্রিল) দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য জাতীয় পরিষদের ডাকা অধিবেশনে ভোটাভুটির পর এ ঘোষণা আসে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) শাহ মাহমুদ কুরেশি। কিন্তু পিটিআই নির্বাচন বয়কট করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশটির ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন শাহবাজ।
তার পুরো নাম মিয়া মুহাম্মদ শাহবাজ শরিফ। তিনি পাকিস্তানের সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই ও দেশটির ঘরোয়া রাজনীতিতে বেশ পরিচিত মুখ। যদিও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি খুব একটা পরিচিত নন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।
তিন দফায় ১২ বছর ধরে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এই শাহবাজ। প্রদেশটির সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী মুখ্যমন্ত্রীও তিনি। প্রথমে ১৯৯৭-১৯৯৯ ও পরবর্তীতে দুই দফায় টানা ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর গ্রেফতার হন শাহবাজ ও পরবর্তীতে তাকে সৌদি আরবে নির্বাসিত করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
২০১৭ সালে প্রকাশিত পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নওয়াজ শরিফের নাম জড়ানোর পর শাহবাজ পিএমএল-এনের সভাপতি হন। এর মধ্য দিয়েই জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। কূটনৈতিক দিক থেকে শাহবাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক রাখার পক্ষে।
এর আগে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে দিনভর নানা নাটকীয়তার পর শনিবার (৯ এপ্রিল) দিনগত মধ্যরাতের পর অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান ইমরান খান।
১২ এপ্রিল, ২০২২।