অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও জনবল সংকট
নারায়ন রবিদাস
ফরিদগঞ্জে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন রোগীর ভীড় বাড়ছে। এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে ৩৯টি কমিউিনিটি ক্লিনিক ও ৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ৭টি প্রাইভেট হাসপাতাল থাকার পরও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা রোগীর ভীড় সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা।
তারা জানান, ক্রমেই নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে প্রায় প্রতি ঘরেই সব বয়সী মানুষ জ¦র, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভীড় করছে।
অথচ চলতি বছরের ১ জুলাই এ হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও চিকিৎসক, সহকারী সিকিৎসক ও নার্সসহ সবগুলো পদে জনবল সংকটে রয়েছে। এতে করে বর্তমানে এ হাসপাতালটিতে বহিঃবির্ভাগ-আবাসিক ওয়ার্ডসহ সব বিভাগে রোগী সামলাতে চিকিৎসকদের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছে। এমনকি পরিচ্ছন্ন কর্মীর সংকট থাকার কারণে আবাসিক ওয়ার্ড বহিঃর্বিভাগসহ হাসপাতালটিতে ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র পড়ে থাকতেও দেখা যায়। এতে করে হাসপাতালটিতে সেবা নিতে আসা রোগীদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। হাসপাতালটিতে যে পরিমাণ রোগী আসে, রোগীদের চাহিদামতে চিকিৎসা সেবা দিতে হলে জনবলের শুন্যপদগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ হলে রোগীদের দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের ৩য় তলায় পুরুষ-নারী-শিশু ওয়ার্ডসহ সবগুলো ওয়ার্ডের শয্যাগুলো পরিপূর্ণ হয়ে ইতোমধ্যে বারান্দা, করিডোরেও রোগীদের সিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের সব স্থানে রোগীর ভীড় ছিল লক্ষ্য করার মত। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, ক্রমেই নারী ও শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ও মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারণে প্রায় প্রতি ঘরেই সববয়সী মানুষ জ¦র, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভীড় করছে। ডেঙ্গু, করোনা আক্রান্ত, প্রসূতিসহ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত রোগী। প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগে প্রায় চারশ’ এবং করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রায় আটশ’ জনকে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। চলতি মাসের শুরু থেকে রোগী বাড়ছে। হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সসহ বিভিন্ন বিভাগে জনবল কম থাকায় রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এসময় রূপসা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আবাসিক ওয়ার্ডের রোগী লিপি আক্তার জানান, তাকে ডাক্তার এক্স-রে ও ইসিজি পরীক্ষা দিয়েছে, তা বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করেছেন তিনি। একই কথা জানিয়েছেন পূর্ব বড়ালী গ্রাম থেকে সেবা নিতে আসা দিন মজুরের স্ত্রী রহিমা বেগম।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহাম্মেদ চৌধুরী জানান, ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন নরমাল ডেলিভারি ও সিজার করানো হয়। বিভিন্ন রোগের রক্ত, প্রশ্রাব, পায়খানা, ডেঙ্গু ও করোনাসহ যক্ষা রোগীদের পরীক্ষা করানো হয়। রোগীর চাপ অনেকটা বেড়েছে। হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি। ১০ জন কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও, ২০ জন নারী ডাক্তারের স্থলে রয়েছেন ৮ জন। এদের মধ্যে বরাবরই একাধিকজন থাকে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। নার্স, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নকর্মীর সংখ্যাও অনেক কম। বহুবার চাহিদাপত্র দিয়েছি, কিন্তু পাইনি। ল্যাব অপারেটর তিনজনের মধ্যে আছে একজন, দীর্ঘ বহু বছর যাবৎ পড়ে আছে আধুনিক এক্স-রে মেশিন, নেই রেডিওগ্রাফার। একটি ইসিজি মেশিন থাকলেও তা নষ্ট হয়ে নামেমাত্র রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দুইজন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে এতোবড় হাসপাতালের রোগীদের সামাল দেয়া কঠিন। সকাল নয়টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অন্যান্য ডাক্তাররা দায়িত্ব পালন করে চলে যান। কখনও-কখনও ইমার্জেন্সিতে এত বেশি রোগীর চাপ থাকে যে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার কুলিয়ে উঠতে পারেন না। ফলে হাসপাতালের অবকাঠামোর উন্নয়ন হলেও জনবল সংকটের কারণে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
১৭ অক্টোবর, ২০২১।