বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো
ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সদরে ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় বর্ধিত সভা পন্ড হয়ে যায়। হামলা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্যের গাড়িতেও। এসময় পুলিশের ৩ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। সংঘর্ষের পর-পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ এবং হামলায় বর্ধিত সভাস্থল উপজেলা কেন্দ্রিয় সমবায় সমিতি চত্বর ভাঙচুরের শিকার হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বর্ধিত সভার আয়োজনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিবাদমান দু’পক্ষ এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় তারা দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্র এবং ইট-পাটকেল ছুড়ে বর্ধিত সভাস্থল ভাঙচুর করে। এই ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়ার গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত সাবেক এই সংসদ সদস্য নেতাকর্মীদের সহায়তায় নিরাপদে সরে যান।
সংঘর্ষে আহতরা হচ্ছেন- জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম রিপন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান, যুবলীগ নেতা আলম বাবুসহ উভয় পক্ষের অন্তঃত ১২ জন। আহতের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান জুয়েল জানান, হাসপাতালে ১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, উভয় পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে থানা পুলিশের সঙ্গে জেলা গোয়েন্দা ও দাঙ্গা পুলিশ অংশ নেয়। এই ঘটনায় সহকারী উপ-পরিদর্শক রবিউলসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহফুজুর হক বলেন, জেলা কমিটির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে, বিশৃঙ্খলা হয়েছে। সংঘর্ষের পরই বর্ধিত সভা পন্ড হয়ে যায়।
চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, আমি বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ পেয়ে সেখানে উপস্থিত হই। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আওয়ামী লীগ পরিচয়ে ১টি সন্ত্রাসী চক্র পুলিশের সহায়তায় আমার নিরীহ নেতাদের উপর হামলা চালিয়েছে। কিভাবে পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের উপর গুলি চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করেছে। আমি এ বিষয়ে তদন্ত দাবি করছি।
ঘটনা সম্পর্কে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের পাটোয়ারী বলেন, কতিপয় বহিরাগতদের সহায়তায় একটি পক্ষ এই হামলার সঙ্গে জড়িত।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বলেন, সংঘর্ষের কারণ আমার জানা নেই। তবে আজ (গতকাল মঙ্গলবার) বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সাবেক এমপি ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া জানান, যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আওয়ামী লীগের জন্য লজ্জাজনক ব্যাপার। এর চাইতে বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, কি কারণে এবং কেন এই সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. জিহাদুল কবির পিপিএম বলেন, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা চলছিলো। সভায় বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ওই কারণে তার সমর্থকরা সভাস্থলে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। পুলিশ উভয় পক্ষকে নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি নিক্ষেপ করে। বর্তমানে অবস্থা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এই বর্ধিত সভা আহ্বান করেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার। কিন্তু সভায় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।