মতলব উত্তরে প্রথমবারের মতো ‘হানাদার মুক্ত দিবস’ পালন

মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করা সবার দায়িত্ব
-জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

মনিরুল ইসলাম মনির :
১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর মতলব হানাদার মুক্ত হয়েছিল। ওই সময়ই ৪ ডিসেম্বর মতলব মুক্ত দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষে এই প্রথমবারের মতো মতলব উত্তর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকালে মোহনপুর আলী আহমদ মিয়া বহুমুখী মহাবিদ্যালয় মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় ই-মেইল পত্রের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য প্রেরণ করেন। তাঁর বক্তব্যটি যুদ্ধকালীন সাব সেক্টর কমান্ডার ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল আলম রব পাঠ করেন।
মতলব মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার গোলাম মোস্তফা রতনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন যুদ্ধকালীন সাব সেক্টর কমান্ডার ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল আলম রব।
গ্রাম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ সরকারের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটোয়ারী, মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুর আহমদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আক্তার, ওসি মো. আনোয়ারুল হক, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য একেএম রিয়াজ উদ্দিন মানিক, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিয়া জাহাঙ্গীর, আলী আহমদ মিয়া বহুমুখী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ এটিএম ফেরদৌস আহমদ, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার, চাঁদপুর জেলা আ’লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক হানিফ পাটোয়ারী, মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক চৌধুরী বাবুল, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শরীফ চৌধুরী, মতলব উত্তর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোজাম্মেল হক, সমাজসেবক আইয়ুব আলী মোল্লা, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ উল্লাহ সরকার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রজন্মের কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব প্রমুখ। এসময় মতলব উত্তর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটোয়ারী বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির অহংকার। ১৯৭১ সালে নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলে আমরা একটি লাল সবুজ পতাকা পেতাম না। তাই জাতির এই সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানদের সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখতে হলে এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। এ দেশে বছরের পর বছর অনেক কিছুর পরিবর্তন হবে এবং অনেকেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত হবে। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি করতে পারবে না। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান করা আমাদের সবার দায়িত্ব। মতলব উত্তরের মানুষের কাছে আমি ঋণী, এ ঋণ শোক করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কিছু করা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তিনি যুদ্ধকালীন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি’র ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
যুদ্ধকালীন সাব সেক্টর কমান্ডার ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল আলম রব বলেন, শোষণ ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের জয়লাভের বড় হাতিয়ার ছিল দেশপ্রেম। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে লাল-সবুজ পতাকার জন্ম দিয়েছেন। দেশপ্রেম, আত্মবিশ্বাস ও আত্মশক্তিতে জেগে ওঠার এ এক বিরল ইতিহাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্যে সেই ঐক্য ও দেশপ্রেম অনেকটাই আজ ¤্রয়িমাণ। নৈতিক চেতনার উন্নতিতে আমাদের মনোযোগ কম। ফলে বেড়েছে বঞ্চনা, অন্যায় ও বৈষম্য। অবকাঠামোগত উন্নতি হচ্ছে ঠিক, কিন্তু মানুষের মানবিক অবস্থা নাজুক। সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি যে বিষয়গুলো প্রয়োজন, সেগুলো দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এটা দেশ ও জাতির জন্য খুব ভয়ানক।