মনিরুল ইসলাম মনির
প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা। শুষ্কতায় বাতাসে বাড়ছে দূষণ, ধূলিকণা। কমছে আর্দ্রতা। আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মানবজীবনে। ডেঙ্গুর প্রকোপ একটু কমলেও নির্মূল হয়নি এখনো। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে জ্বর, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা। হাসপাতালে ছোটা রোগীদের মধ্যে বয়স্ক রোগীই বেশি। শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগের পাশাপাশি হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগ নিয়েও ছুটছে হাসপাতালে।
এখনও কাটেনি পুরোপুরিভাবে গরমের রেশ, এরই মধ্যে সকাল-সন্ধ্যায় বইছে হালকা শীতের আমেজ। শীতের আগমনি বার্তায় ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে আবহাওয়া। দিনে রোদের প্রখরতা থাকলেও সকালে ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে মৌসুমি জ্বরসহ এ সময় শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, সাইনোসাইটিস, টনসিলাইটিস, অ্যাজমা, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকে সাধারণ সর্দি-কাঁশি, ঠান্ডা-জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত কয়েকদিনে সরকারি হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরকম সময়ে শিশু ও বৃদ্ধদের সুস্থ রাখার জন্য ধুলোবালি ও ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন ডা. ইসমাঈল হোসেন। তিনি বলেন, শীতের শুরুতে প্রতিবারই ঠান্ডাজনিত সমস্যার রোগী বাড়ে। সামনে শীত বাড়লে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। এই মুহূর্তে বেশিরভাগ বয়স্ক রোগী পাচ্ছি। যারা দীর্ঘদিন নানা অসুখে ভুগছেন। অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাদের মৌসুমি রোগবালাই বেশি হচ্ছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে যাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হচ্ছে, যারা বয়স্ক, যাদের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, শ্বাসকষ্ট বেশি থাকে তাদের ভর্তি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. হাসিবুল ইসলাম বলেন, শীতকাল এলে নানা ধরনের ঠান্ডাজনিত রোগ হয়। এর মধ্যে বয়স্ক, শিশু ও দীর্ঘদিন রোগে ভোগা মানুষ বেশি অসুখে ভোগে। এছাড়া যাদের শ্বাসজনিত রোগ অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ আছে তাদের শীতকালে সমস্যা বাড়ে।
তিনি বলেন, বাতাসের সঙ্গে অক্সিজেন শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়। আর এ বাতাসের সঙ্গে রোগ-জীবাণু, ধুলাবালি ঢুকে শ্বাসনালীর সংক্রমণ করে। বিশেষ করে এ সমস্যাগুলো শীতকালে বেশি হওয়ার কারণ তখন ফুসফুসের শ্বাসনালীতে আর্দ্রতা কমে যায়। এতে ফুসফুসে ইনফেকশন, নিউমোনিয়া, ব্রংকিউলাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের রোগ বাড়ে।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, দেশে পরিপূর্ণ শীত জেঁকে না বসলেও সকাল-সন্ধ্যা শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এ সময়ে বয়স্ক ও শিশু উভয়ের ক্ষেত্রে শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ শিশু বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। দিন দিন শীত বাড়বে, শিশুদের শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত গরম কাপড়সহ হাত-পায়ে মোজা পরিয়ে রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না। গোসলসহ সব ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে।
০৭ নভেম্বর, ২০২৩।