একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা -বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর আন্তঃজেলা নাট্য আয়োজন

সৌম্য সালেক :
গত ১৮ অক্টোবর শেষ হলো বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর সপ্তাহব্যাপী আন্তঃজেলা নাট্যোৎসব। এ আয়োজনে আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ করেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি নাট্যদল। উৎসবের প্রথমদিন ছিলো বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর নিজস্ব প্রযোজনা ‘লালননামা’-এর প্রদর্শনী এবং শেষদিন ছিলো চাঁদপুরের সক্রিয় সাতটি নাট্যদলের সমন্বিত একটি কোলাজ নাট্য পরিবেশনা। বিভিন্ন দিক থেকে বর্ণচোরার এই নাট্য আয়োজনটি চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনের জন্যে একটি বড় ঘটনা। গত জুলাইতে ‘চাঁদপুর থিয়েটার ফোরাম’ সাতদিনব্যাপী একটি নাট্যায়োজন করেছিলো, যদিও সেখানে অংশ নিয়েছে কেবল জেলার দলগুলো। একটু গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যাবে, সম্প্রতি গঠিত ‘চাঁদপুর থিয়েটার ফোরাম’-এর প্রতিষ্ঠাই চাঁদপুরের নাট্য চর্চায় গতি সঞ্চার করেছে। গত চার বছরে চাঁদপুরের নাট্য চর্চায় বর্ণচোরার এ আয়োজনটি একমাত্র নাট্যোৎসব, যেখানে জেলার বাইরের পাঁচটি দল অংশগ্রহণ করেছে। এতে চাঁদপুরের নাট্যামোদী দর্শক যেমন ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশনা দেখার সুযোগ পেয়েছে তেমনি বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীও তাদের ৪৪ বছরের নাট্যযাত্রাকে আরও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে। বাইরের পাঁচটি দলের আবাসন, আপ্যায়ন-আতিথেয়তাসহ একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ তারা দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে পেরেছে, এজন্যে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর কর্তা-কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই অবশ্যই অভিবাদন পাবেন।
নাটক হলো শিল্পের প্রায় সকল ধারাগুলোর সমন্বিত শিল্পমাধ্যম। গীত-বাদ্য-নৃত্য-কাব্য-কথকতা কোনোটাই নাটকের অংশ-বহির্ভূত নয়; এজন্যে একটি সফল নাট্যনির্মাণে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে নির্দেশক ও কুশীলবদের পারঙ্গম হতে হয়। একটি বিষয়ে বিচ্যুতি দেখা দিলে সার্বিক পটভূমিতে এর সংযুক্তি বা পরম্পরা নষ্ট হয়, এজন্যে নাট্যনির্মাণ অন্যান্য শিল্প প্রয়াসের চেয়ে দুরূহ এবং সময়সাপেক্ষ। শিল্পের অধিকাংশ মাধ্যম একক প্রচেষ্টা লব্ধ, কিন্তু নাটক অবিকল্পভাবে একটি যৌথ প্রয়াস। তাই মঞ্চে প্রদর্শিত নাটকে ব্যক্তির সক্ষমতার চেয়ে সমষ্টির স্বতঃস্ফূর্ততা জরুরি।
মাইকেল মধুসূদনের হাত ধরে আধুনিক বাংলা নাটকের সূচনা থেকেই আমরা লক্ষ্য করি-বাংলা নাটক বিচিত্র বর্ণিল ও বিষয় সীমাবর্জিত। সাহিত্যের অন্যান্য ধারার তুলনায় নাট্য রচনা কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও নাট্যচর্চা ও নাটক বিভিন্ন সময়ে এদেশে সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। নাটকের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, এ মাধ্যমে সহজেই লোকের কাছে বক্তব্য বা ভাষ্য পৌঁছানো সম্ভব। নাটক কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি একই সাথে সমাজ সচেতনতা কিংবা অসঙ্গতি বা কুসংস্কার বিমোচনেরও বাকমঞ্চ। আমরা বর্ণচোরার সপ্তাহব্যাপী নাট্য আয়োজনে বিচিত্র কাহিনী ও ভাষ্যের কিছু নাটক দেখার অবকাশ পেয়েছি এবং সেইসূত্রে এই রচনায় নাট্য প্রযোজনাগুলোর বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে চাই।
লালননামা : ‘লালননামা’ জিয়াউল আহসান টিটো নির্দেশিত বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ নাট্য প্রযোজনা। চলতি বছরের মে মাসে নতুনভাবে নাটকটি মঞ্চে আনে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী এবং নতুন কুশীলবদের নিয়ে নবনির্মাণে দলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরীর দীর্ঘদিনের শ্রম দেখেছি, যার ফলস্বরূপ একটি ভাবনিষ্ঠ জীবনবোধের মঞ্চায়ন দেখে চাঁদপুরবাসী ঋদ্ধ হয়েছে। এই নাটকটিতে লালনের জীবনকাহিনী বর্ণনার চেয়ে তাঁর ভাব ও দর্শনের দিকটিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা লালনের বেড়ে ওঠা সংক্রান্ত প্রাথমিক যে ঘটনাটি জানি, অর্থাৎ তিনি এক কবিরাজের আস্তাবল থেকে ঘোড়া নিয়ে রাতব্যাপী নদীর তীরে চড়ে বেড়ান এবং ভোর হবার আগেভাগেই সেটি মনিবের ঘোড়াশালে ফেরৎ দিয়ে আসেন। এভাবে একদিন এমনটি করতে গিয়ে প্রহরীর কাছে ধরা পড়েন। নাটকে এই ঘটনাটিসহ তাঁর জীবনবর্ণনার মধ্যে বেশ কিছু জায়গায় ঘাটতি এবং ঘটনার পরম্পরায় বিচ্যুতি লক্ষ্যণীয় হয়েছে। অবশ্য লালন ফকিরের জীবনও যে আমাদের সামনে খুব ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত আছে তা কিন্তু নয়। লালনের ব্যক্তিজীবন, তাঁর গীত-রচনা-ভাব ও দর্শনের চেয়ে মহার্ঘ্য নয়। এক্ষেত্রে ভাবনিষ্ঠা গুরুভক্তি এবং লালন-এর মানবধর্ম উপস্থাপনে এ নাটক চমৎকার পারঙ্গমতা দেখিয়েছে। নবনির্মাণের প্রথম কয়েকটি প্রযোজনার চেয়ে এবার খুব ভালো মঞ্চায়ন হয়েছে নাটকটির। ‘লালননামা’ বর্তমানে চাঁদপুরের যেসব নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক প্রযোজনা এবং বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর সাম্প্রতিক নাটকগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। নাটকটিতে কুশীলবদের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় এটিকে একটি সম্পূর্ণ থিয়েটার হিসেবে ইতোমধ্যে চাঁদপুরবাসীর কাছে পরিচয় করিয়েছে।
বার্থ ফ্যান্টাসি: বার্থ ফ্যান্টাসি এসএম সোলায়মান রচিত নাটক। তাঁর অন্যান্য নাটকের মতো এটিতেও দেশের রাজনৈতিক কলহ-অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্যকে স্যাটায়ার (বিদ্রƒপ) করা হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে মঞ্চস্থ এ নাটকটি সানাউল হকের নির্দেশনায় নারায়ণগঞ্জের ‘সংসপ্তক নাট্যদল’ কর্তৃক প্রদর্শিত হয়।
নাটকটিতে দেখানো হয়েছে গর্ভবতী এক নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে, কিন্তু কিছুতেই গর্ভস্থ শিশুটিকে মায়ের পেট থেকে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। সে মনে করে যে, তার মায়ের পেটই বাংলাদেশে বসবাসের চেয়ে অধিক উপযোগী। সে ডাক্তারদের সাথে ব্যাপক তর্ক জুড়ে দেয়। এটি একটি রসাত্মক নাটক বলে মনে হলেও, এর মধ্যে দেশের বিবিধ অসংগতিকে সযতেœ তুলে আনা হয়েছে। নাটকটি দেখে চাঁদপুরবাসী খুব পুলকিত হয়েছে বলে লক্ষ্য করেছি। এ নাটকে অভিনয়ের কিছু বিচ্যুতি দৃশ্যমান হলেও তা ঘটনা বর্ণনায় প্রভাব ফেলতে পারে না।
কঞ্জুস : ‘কঞ্জুস’ বাংলাদেশে প্রদর্শিত সকল নাটকের মধ্যে সর্বাধিক মঞ্চস্থ নাটক। চাঁদপুরে ছিলো নাটকটির ৬৯৯তম মঞ্চায়ন। লিয়াকত আলী লাকী নির্দেশিত লোকনাট্যদলের এই নাটকটিতে চাঁদপুরের মঞ্চে নিয়ে আসা জেলার নাট্যাঙ্গনের জন্যে এক বিরাট ঘটনা।
‘কঞ্জুস’ বিখ্যাত ফরাসি নাট্যকার মলিয়রের কমেডি। মাত্রাধিক হাস্যরসের মাধ্যমেও যে সুন্দর বক্তব্য পরিবেশন করা যায় তার প্রমাণ ‘কঞ্জুস’। ‘কঞ্জুস’ নাটক প্রদর্শনের ব্যাপারে লোকনাট্যদলের কুশীলববৃন্দ এতোই পারঙ্গম যে, এ বিষয়ে সমালোচনার অবকাশ নেই। নাটকটিতে পুরাণ ঢাকার কথ্যভাষাকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি অত্যন্ত গতিশীলভাবে এগিয়েছে। এ দুটি কারণে নাটকটি যারা প্রথম দেখেছেন তারা কিছু সংলাপ বুঝতে পারে নি, তবে নাটকের ঘটনা এবং কুশীলবদের কসরত তাদের সেই অপূর্ণতাকে দারুণভাবে সম্পূর্ণতা দিতে সক্ষম হয়েছে। আলোক প্রক্ষেপণ, কুশীলবদের স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয়সহ লোকনাট্যদলের ‘কঞ্জুস’ চাঁদপুরের নাট্যামোদী দর্শকসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণে দারুণভাবে সফল হয়েছে।
কবি : শামীম হাসান-এর নির্দেশনায় ‘অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়’ উৎসবের চতুর্থ দিন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ‘কবি’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে। আমরা যারা তারাশঙ্করের ‘কবি’ পড়েছি তারা অরিন্দম-এর প্রযোজনাটি দেখার ব্যাপারে বেশ উৎসাহী ছিলাম। কারণ ‘কবি’তে আমরা পেয়েছি হারিয়ে যাওয়া কবিয়ালদের জীবনচিত্র এবং এক প্রেমিক কবির বিচূর্ণ হৃদয়ের আর্তি। নাটকটিতে এসে আমরা প্রথমদিকে কিছু গল্পানুগ বাস্তবতা দেখলেও ধীরে ধীরে যেনো বিচ্যুত হয়েছি, তবু শেষ অবধি ঘটনার পরম্পরা উদ্ধারে সক্ষম হলেও বাসন্তির মৃত্যুতে যে বেদনা আমাদের স্পর্শ করেছিলো, নাটকটি শেষে তেমন বোধ হয় নি। আর দর্শকসাধারণ নাটকটি ভালো বুঝতে পারে নি। বিশেষত যাঁরা তারাশঙ্করের উপন্যাসটা আগে পড়েননি। তবু সাহিত্যনির্ভর এই প্রযোজনাটি উৎসবের শ্রীবৃদ্ধি করেছে বলা যায়।
সাজনাতলার মেলা: জাহাঙ্গীর আলম ঢালীর নির্দেশনায় মুন্সীগঞ্জের ‘হিরণ কিরণ থিয়েটার’ ১৬ অক্টোবর ‘সাজনাতলার মেলা’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে। বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর উৎসবে প্রদর্শিত ছয়টি নাটকের মধ্যে তুলনামূলক এটি দুর্বল নাটক। নাটক শেষে এর নাট্যকার বলেছেন-গল্পটি তিনি ভারতীয় টিভি চ্যানেল সনি-৮-এর একটি অপরাধ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান থেকে নিয়েছেন। এটি কোনো নেতিবাচক বিষয় নয়, আর নাটকের গল্পটিও মন্দ ছিলো না। কারণ, এতে দেখা যায়, কেবল কুসংস্কারের ফলে একটি জনগোষ্ঠীর মেয়েরা যুগ যুগ ধরে নিগৃহীত হচ্ছে। কথা হচ্ছে, নাটকটি শেষে আমরা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে কোনো সামাজিক বিপ্লব কিংবা বক্তব্য খুঁজে পাই নি। কেবল ঘটনা বর্ণনা করলেই নাটক হবে না, কিছু বক্তব্য থাকতে হবে কিংবা পরিবর্তনের ইঙ্গিত থাকতে হবে। বাংলা সিনেমার মতো এই নাটকেও পুলিশকে নোংরাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা একেবারেই কাম্য নয়। কারণ, পুলিশ বাহিনীও এদেশের শান্তি রক্ষণে ভূমিকা রাখছে।
সর্বোপরি মনে করি, কেবল নাটক রচনার দুর্বলতার কারণেই ‘সাজনাতলার মেলা’ একটি সুন্দর প্রযোজনা হয়ে উঠতে পারে নি। নাটকটি যদি কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সাপেক্ষে মঞ্চে আনা যায়, তবে এটি ভালো প্রযোজনা হবে। এ নাটকের কুশীলবদের যেহেতু নাটকের প্রতি আন্তরিকতা আছে, সুতরাং ‘হিরণ কিরণ থিয়েটার’ ভবিষ্যতে আমাদের ভালো নাটক উপহার দিতে পারে।
কমলা সুন্দরীর কিস্সা : এটি নেত্রকোণা অঞ্চলে প্রচলিত লোক কাহিনীনির্ভর একটি চমৎকার নাট্য প্রযোজনা। বাপ্পা চৌধুরীর নির্দেশনায় চট্টগ্রামের ‘গণায়ন নাট্য সম্প্রদায়’ কর্তৃক উৎসবের ষষ্ঠদিন ‘কমলা সুন্দরীর কিস্সা’ মঞ্চস্থ হয়। কমলা সুন্দরী গ্রামবাংলায় প্রচারিত-প্রচলিত একটি লোককাহিনী, এটি নিয়ে অতীতে নাটক ও চলচ্চিত্র হয়েছে। তবে কমলা সুন্দরীর প্রচলিত কাহিনীর সাথে এই নাটকের কাহিনীর কিছু পার্থক্য রয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে নাটক শেষে নির্দেশক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। সে যাই হোক, গল্প বর্ণনা যেখানে মুখ্য, সেখানে ভিন্নতা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। ‘কমলা সুন্দরীর কিস্সা’ সপ্তাহব্যাপী মঞ্চস্থ নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ লোকনাটক। এ নাটকে যে বিষয়টি সবচেয়ে আকর্ষণ করেছে তা হলো, পাত্র-পাত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় এবং গীতি-নৃত্যের নৈপুণ্য। অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সেদিন জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে দর্শকসাধারণের মাঝে নাটকের কুশীলবগণ অভিনয়ের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। আমার বিশ্বাস, অচিরেই নাটকটি দেশের নাট্যবোদ্ধাগণের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হবে।
কোলাজ নাট্য প্রযোজনা : নাট্য উৎসবের শেষদিন ছিলো ‘চাঁদপুর থিয়েটার ফোরামে’র পরিবেশনায় সাতটি নাট্যদলের কোলাজ উপস্থাপনা। চাঁদপুর থিয়েটার ফোরামভুক্ত নাট্যদলগুলো হলো : বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী, অনন্যা নাট্যগোষ্ঠী, চাঁদপুর ড্রামা, বর্ণমালা থিয়েটার, অনুপম নাট্যগোষ্ঠী, স্বরলিপি নাট্যদল এবং মেঘনা থিয়েটার।
সাতটি নাট্যদলের কোলাজ প্রযোজনার বিষয়ে মন্তব্য করার আগে ‘কোলাজ’ বিষয়ে আমার ধারণা উপস্থাপন করছি। ‘কোলাজ’ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বিষয়, বক্তব্য বা থিমকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কবিতা, গীত বা নাটকের উদ্দিষ্ট অংশের সমন্বিত সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। আমরা আবৃত্তির ‘বৃন্দ পরিবেশনায়’ বিভিন্ন কবির কবিতাকে বিষয়নিষ্ঠভাবে গ্রন্থনা করে পরিবেশন করি, এটিই কোলাজ পরিবেশনা। গীতিনৃত্যালেখ্য রচনা এবং পরিবেশনায়ও একই পন্থা অবলম্বন করে ধারাবর্ণনা রচনা করা হয়। নাটকের ক্ষেত্রেও এমন কোলাজ পরিবেশনা হতে পারে, সেক্ষেত্রে বিষয়সূত্র মোতাবেক নাটক ও নাটকের প্রয়োজনীয় অংশ নির্বাচন পূর্বক অভিনয় সম্পন্ন হতে হবে, তাহলে এটিকে কোলাজ নাট্য পরিবেশনা বলা যাবে। নাটক যেহেতু সংলাপ ও গল্পনির্ভির, সেক্ষেত্রে একটি নাটকের সাথে অন্য নাটকের সম্পর্কবন্ধনের জন্যে একজন সূত্রধর তৈরি করে প্রয়োজনীয় সংলাপ সৃষ্টির মাধ্যমে নাট্যাংশগুলোর পরম্পরা রক্ষা করতে হবে। বড় বিষয় হচ্ছে, যেখানে নাট্যদল ও সাংস্কৃতিক দলগুলোর মধ্যে মিলনের ঐক্য নেই, সেখানে চাঁদপুরের সাতটি নাট্যদল একই সাথে প্রদর্শনী করছে, এটি সংস্কৃতি চর্চার সরলতা ও সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে।
বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর আন্তঃজেলা নাট্যোৎসব-২০১৭-এর মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার নাট্যদলগুলোর অংশগ্রহণে নাটকের যে মিথষ্ক্রিয়া তৈরি হয়েছে, তা চাঁদপুরের নাট্যচর্চায় গতি সঞ্চার করবে বলে মনে করেছি। গত চার বছরে চাঁদপুরবাসী এমন একটি নাট্যায়োজনের জন্যে উদ্গ্রীব ছিলো, যা পূর্ণ হয়েছে এই উৎসবের মাধ্যমে। আমরা বিভিন্ন সময় নাট্য প্রদর্শনীতে দর্শকের অভাব দেখিছি, কিন্তু বর্ণচোরার এই উৎসবে শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন ছিলো কানায় কানায় পূর্ণ। আন্তঃজেলার এ আয়োজন শেষে চাঁদপুরের নাট্যাঙ্গনে আমরা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করছি। এই ধারা আশা করি আরও সক্রিয় হবে এবং সেসব আগাম সমৃদ্ধির পেছনে মাইলফলক হিসেবে টিকে থাকবে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর মধ্য অক্টোরের এ নাট্যপ্রয়াস।
লেখক : জেলা কালচারাল অফিসার, চাঁদপুর।