কল্যাণপুর ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

২ নারীসহ ৩ জনকে নির্যাতন ও জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখায়

স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাখায়াত হোসেন রনি পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে মডেল থানায় অভিযোগ দয়ের করা হয়েছে। গত ২১ মার্চ ইউনিয়নের শহরমালি দাসাদী গ্রামের বাসিন্দা মোকলেছ গাজীর ছেলে শ্রমিক মো. মফিজ গাজী। অভিযোগে কল্যাণপুর ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাখায়াত হোসেন রনি পাটওয়ারী, চেয়ারম্যানের সহকর্মী জিএম সফু গাজী ও কাউছার মোল্লার নাম উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, শ্রমিক মো. মফিজ গাজী সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের শহরমালি দাসাদী গ্রামে প্রায় ৫ বছর যাবত তার মা রাশিদা বেগম ও স্ত্রী তিন্নি বেগমসহ বসবাস করেছে। মফিজ গাজীর বড় ভাই হান্নান গাজী কোড়ালিয়া এলাকায় বসবাসরত অবস্থায় একই এলাকার তার আত্মীয় চাঁদপুর শহরের কোড়ালিয়ার চুমকি বেগমের সাথে টাকা-পয়সার লেনদেন ছিল। হান্নান গাজী দীর্ঘদিন যাবত সিএনজি চালিত স্কুটার চালক হিসেবে ঢাকায় অবস্থান করেছে। কোড়ালিয়ার চুমকি বেগম হান্নান গাজীকে এলাকায় না পেয়ে তার ছোট ভাই মো. মফিজ গাজীর বিরুদ্ধে চেয়ারম্যান রনি পাটওয়ারীর কাছে তার টাকা তুলে দেয়ার জন্য অভিযোগ করে।
তারই পেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় রনি পাটোয়ারী হান্নান গাজীর ছোট ভাই মফিজ গাজীকে ফোন করে তার বাড়িতে আসতে বলে। চেয়ারম্যানের কথা মত মফিজ তার মা রাশিদা বেগম ও স্ত্রী তিন্নি বেগমসহ আসে। আসার পরে হান্নান চুমকির কাছে থেকে নেওয়া টাকার জন্য মফিজ গাজীকে চাপ প্রয়োগ করে। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মফিজকে ইউনিয়ন পরিষদের ভিতরের রুমে নিয়ে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। পরে ৩টি স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষর দিতে বলে। সে স্বাক্ষর দিতে অপারগতা স্বীকার করলে চেয়ারম্যান রনি পাটওয়ারী মোটা কাঠের রুলার দিয়ে মফিজ গাজীকে বেদম মারধর করে। এসময় মফিজের মা ও স্ত্রী প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত করে চেয়ারম্যান রনি পাটোয়ারী। নির্যাতনের আঘাত সইতে না পেরে অবশেষে মফিজ গাজী খালি ৩শ’ টাকার স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে দেয় বলে জানান। পরে এলাকাবাসী গুরুতর আহত অবস্থায় মফিজ গাজীকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় আহত মফিজ গাজী স্ট্যাম্প উদ্ধার করা ও নির্যাতনের ঘটনার বিরুদ্বে বিচার চেয়ে চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন রনি পাটওয়ারীসহ ৩ জনের বিরুদে চাঁদপুর মডেল থানায় বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে আহত মফিজ গাজী জানান, বড় ভাইয়ের লেনদেনের বিষয়ে আমি জানি না। আমি মাকে নিয়ে সফরমালী দাসাদী গ্রামের আলাদাভাবে বসবাস করছি। রনি পাটওয়ারী খবর দিয়ে তার বাসায় নিয়ে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আটকে রেখে চেয়ারম্যান রনি পাটওয়ারী এবং সহকর্মী জিএম সফু গাজী ও কাউছার মোল্লা তিনজন মিলেই মারধর করে। আমার সামনে মা ও স্ত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রনি পাটওয়ারী জানান, টাকা লেনদেনের বিষয়ে দুই পক্ষকে সাথে নিয়ে সালিসি বৈঠক করি। যার কাছে টাকা পাবে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ভাইকে হাজির করার জন্য পাওনাদাররা তার কাছ থেকে অলিখিত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। আমি তখন উপস্থিত ছিলাম। তখন মফিজ আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। আমার সাথে বেয়াদবি করার কারণে ঘটনার সময় উপস্থিত সবাই মিলে তাকে পিটিয়েছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নাছিম উদ্দিন জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে ভিকটিম আমাকে জানায়। বৃহস্পতিবার রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।