এস এম সোহেল
অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস চাঁদপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহর ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে চাঁদপুর শহরের শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার বেদীতে শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির পক্ষে নেতৃবৃন্দ, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের পক্ষে জেলা প্রশাসকসহ মুক্তিযোদ্ধারা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পক্ষে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষে মেয়র অ্যাড. মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের পক্ষে সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত ও সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ার মাহবুবুর রহমান সুমন, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, জেলা যুবলীগ, জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এছাড়া চাঁদপুর সিআইডি, চাঁদপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানা, চাঁদপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টিগেশন (পিবিআই), চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চাঁদপুর সড়ক বিভাগ, চাঁদপুর এলজিইডি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর, চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস এণ্ড সিভিল ডিফেন্স, চাঁদপুর জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চাঁদপুর জেলা, চাঁদপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগসহ অন্যান্য সংগঠন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পরদিন ভোরে বিভিন্ন সংগঠন চাঁদপুর কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং শহরে প্রভাত ফেরী বের হয়। একুশের সেই দেহ-মন শিহরিত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ আকাশ-বাতাস মুখরিত করে সকলে খালি পায়ে প্রভাত ফেরীতে অংশ নেয়। আবারো সবার গন্তব্য হয় চাঁদপুর কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার। সবাই শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত এমনকি অনেকে নিজস্ব বাসা-বাড়িতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করে। একইভাবে বিভিন্ন উপজেলায়ও মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। জেলা সদরে উদযাপন হয় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আর উপজেলাগুলোতে উদযাপন হয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে।
চাঁদপুর শহরে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে আলোচনা সভা, বইমেলার সমাপনী, সাংস্কৃতিক ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ.এস.এম. মোসা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোস্তাফিজুর রহমান, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত ও বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পীযুষ কান্তি বড়ুয়া।
এসময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক অপর্ণা বৈদ্য, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইমরান শাহারীয়ার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শেখ এহসান উদ্দীন, আখতার জাহান সাথী, চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হেদায়েত উল্যাহ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাহজাহানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন আমাদের নিজস্ব ভাষার উন্নয়নে চেতনা গড়ে উঠে, অপরদিকে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়, বৈষম্যহীন বর্ণিল পৃথিবী গড়ে উঠে।
তিনি আরো বলেন, আমরা ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উদযাপন করছি। বিশ্বে প্রায় ৫ হাজার ভাষা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম বাংলা ভাষা। বিভিন্ন দেশের মানুষও বাংলা ভাষায় কথা বলেন। বিশ্বের একমাত্র জাতি আমরা যারা নিজের ভাষার জন্যে রক্ত দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে একই সাথে সপ্তাহব্যাপী মহান একুশে বইমেলার সমাপ্তি হয়। আলোচনা সভা শেষে মহান শহিদ দিবস ও বই মেলা উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা বিজয়ী ও মেলার স্টলগুলো মধ্যে সেরা স্টলগুলোকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সবশেষে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
এছাড়া মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদপুর জেলার সব স্কুল, কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষক/শিক্ষিকারা স্বল্পপরিসরে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দিবসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সঙ্গীত পরিবেশন সহকারে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রভাতফেরি বের করা হয়। ঐদিন শহীদের স্মরণে জেলার সব স্কুল-কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবনে সঠিক নিয়মে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হয়েছে।
সব স্কুল-কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পাঠ, স্মরচিত ছড়া ও কবিতা প্রতিযোগিতা এবং কলেজে সর্বসাধারণের জন্য ২১ সংক্রান্ত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার সব মসজিদে বাদ জোহর এবং মন্দির ও গীর্জায় শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা দোয়া কামনা করা হয়।
এছাড়া জেলা প্রশাসনের কর্মসূচির মধ্যে আরো ছিলো : চাঁদপুরের কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারের মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১১ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বই মেলা ও বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২০ ফেব্রুয়ারি জেলা শিশু একাডেমিতে শিশুদের নিয়ে চিত্রাংকন, সঙ্গতি ,আবৃত্তি, সুন্দর হাতের লেখা ও বাংলা বানান প্রতিযোগিতার। ২০-২১ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার উদ্যোগে শহরের নতুন বাজার সড়ক, অঙ্গীকার পাদদেশ, কেন্দ্রিয় শহিদ মিনার চত্বর, শপথ চত্বর, ইলিশ চত্বর, চিত্রলেখা মোড়, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সড়কে বাংলা বর্ণ্যামালা ও ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিতকরণ।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।