চাঁদপুরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ

মাদক ও তামাক ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করে ছেলেমেয়েরা আসক্ত হয়ে পড়ে……….অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম

স্টাফ রিপোর্টার
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণটি অনুষ্ঠিত হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
প্রশিক্ষণে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য) কাজী জেবুন্নেছা বেগম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ৫৫ হাজার বর্গমাইলের দেশ। তাই দেশকে বাঁচাতে হবে। সরকার কাউকে বাদ দিয়ে কিছু করবে না। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা রাখার দায়িত্ব সরকারের। সরকার ২০০৫ সালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে আইন করেছে। ২০১৩ ও ২০২২ সালে আইন সংশোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তামাকজাত পণ্যের কারণে কারো যেন মৃত্যু না হয় কথাটি বলেছেন। বিশ্বের আর অন্য কোন রাষ্ট্রের প্রধানরা এখন পর্যন্ত তা বলেননি। তিনি সবসময় দেশের মানুষের কথা ভাবেন ও চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, করোনার কারণে কার্যক্রম কিছুটা ক্ষতি হয়েছে, তবে আমরা বসে ছিলাম না। তামাকের কারনে আমাদের স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এটা জীবন মরণের সাথে সম্পর্ক। তা আগে আমাদের বুঝতে হবে। একজন চিকিৎসকের কাছে আমরা আসি জীবনের শেষ প্রান্তে। তখন আর করার কিছুই থাকে না। জীবনের গতিটা আধুনিকতার কারণে আমরা নষ্ট করে ফেলছি। মাদক ও তামাক ছেলেমেয়েরা ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করছে। পরে তারা আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদেরকে এর কুফল সম্পর্কে জানাতে ও বুঝাতে হবে। তবে আমাদের সবার মনে রাখতে হবে বিষ তো বিষই। পোঁকা-মাকড় এর কাছে যায় না। আর মানুষ বিষ জেনেও তা গ্রহণ করে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমাদের সুষম খাবার গ্রহণ না করার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা জাঙ্ক ফুড গ্রহণ করছি। আগে খেলার মাঠ ছিল, পার্ক ছিল বসার স্থান ছিল, এখন সেখানে বসে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে ছেলে-মেয়েরা। আইন কঠিন আছে তবে তা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সিগারেটের সিঙ্গেল শলাকা বিক্রি করা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। সিগারেট পরিবেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে থাকে। সবাই হাতে হাত মিলে কাজ করলে সব কাজই সম্ভব। মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম বাড়াতে হবে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় স্কুল-কলেজের অনেক ধূমপায়ী তৈরি হচ্ছে। এদেরকে এর কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। রাষ্ট্রের সব অপশক্তিগুলোকে দমন করতে হবে। বাত না খেলে মানুষ মারা যায় না, তবে সিগারেট বেশি খেলে মৃত্যু অনিবার্য।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সাজেদুল ইসলাম, সির্ভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইমতিয়াজ হোসেনের পরিচালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন রশিদ, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম, চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস উত্তরের উপ-পরিচালক সাহিদুল ইসলাম, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইমদাদুল ইসলাম, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. বেলায়েত হোসেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ এস এম মোসা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, মতলব দক্ষিণ নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান শোভন, জেলা সমাজসেবা কর্মর্তা রজত সুভ্র সরকার, জেলা ক্রীড়া অফিসার তরিকুল ইসলামসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানরা।
প্রশিক্ষণের শুরুতেই চাঁদপুর জেলা সির্ভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. হুমায়ন ইসলাম সাকিব তামাক নিয়ন্ত্রণে ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করেন।
বক্তারা বলেন, জর্দা, গুল ও সিগারেট সবই তামাকজাত পণ্য। যারা তামাক সেবনের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাকারী তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। একজন ধূমপায়ীর কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। সব পণ্যের গুণাগুণ আছে, কিন্তু তামাকের ক্ষতি ছাড়া কোন গুণ নেই। প্রতিটি অফিস-আদালতকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করতে হবে। তাহলে অন্যরা উৎসাহী হবেন। লাইসেন্স ছাড়া কেউ তামাকজাত পণ্য বিক্রয় করতে পারবে না। আমরা নিজেরা ধূমপান করবো না, অন্যকে ধূমপান না করতে নিরুৎসাহিত করবো। তাহলেই আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে।

২২ জানুয়ারি, ২০২৩।