চাঁদপুরে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি!

তীব্র লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ

ইলশেপাড় রিপোর্ট
চাঁদপুরে বিদ্যুতের তীব্র লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরছে। রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময়েও চাঁদপুরে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং- জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিঘণ্টা পর-পর ঘণ্টারও বেশি সময় লোডশেডিং করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্যও পাওয়া যাচ্ছে না।
এছাড়া রাজধানী ঢাকায় যেখানে লোডশেডিংয়ের কোনো ছোঁয়া নেই সেখানে চাঁদপুর পৌর এলাকাসহ ৮ উপজেলায় লোডশেডিং- বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-প্রকৌশলীসহ সবার প্রতি সন্দেহ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা, নাকি গাফিলতি, না ইচ্ছে করেই চাঁদপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম- এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সারা দেশের মতো চাঁদপুর জেলায়ও যখন গরমের ভয়াবহ দাবদাহ পুড়ছে, ঠিক তখনি লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় হাঁসফাস করছে মানুষজন। দিন ও রাতের যখন-তখন লোডশেডিংয়ের কারণে সর্বসাধারণের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা এখন সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাসা-বাড়িতে বয়োবৃদ্ধসহ নারী ও শিশুদের জীবন অতিষ্ঠসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পরছে বলে জানা গেছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তো রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। একই সাথে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বাসা-বাড়িসহ অফিস-আদালতে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে পড়ছে বলে অনেকেই জানান।
এদিকে অভিযোগ উঠছে, চাঁদপুর জেলায় সুষ্ঠুভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড নামক প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির কর্মরত প্রকৌশলীদের গাফলতিকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো কর্মকর্তা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
অপরদিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গরমের তীব্রতায় চাঁদপুরের শ্রমজীবী মানুষসহ ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। আবার লোডশেডিংয়ের কারণে বাসা-বাড়িতেও অবস্থান করতে পারছেন না। চাঁদপুরে বিদ্যুতের তীব্র এই সঙ্কট এখন সর্বসাধারণের প্রধান ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভুুক্তভোগীরা বলছে, বিদ্যুৎ সঙ্কটরোধে বাসা-বাড়িতে আইপিএস বসিয়েও লাভ হচ্ছে না। কারণ, ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় আইপিএস’র ব্যাটারীও চার্জ হচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলে সৌর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও এখন সৌর প্যানেলেরও দাম হাতের নাগালের বাইরে। সব মিলিয়ে ত্রাহি অবস্থা। একই সাথে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের বিড়ম্বনা তো আছেই।
তবে চাঁদপুরের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) চাঁদপুর অফিস জানায়, চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ মেগওয়াট। তার বিপরীতে বর্তমানে জাতীয় গ্রীড হতে চাঁদপুর জেলায় সরবরাহ করা হয় মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ মেগওয়াট। চাহিদার বিপরীতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং বৃদ্ধির কারণ।
চাঁদপুর পিজিসিবি বলছে, ৬০ থেকে ৬৫ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুতের মাঝে বন্টন করা হয়। তার মাঝে ৩৭ শতাংশ পায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বাকি ৬৩ শতাংশ দেয়া হয় পল্লী বিদ্যুৎকে।
পিজিসিবির বক্তব্যমতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এই ৩৭ শতাংশ বিদ্যুৎ চাঁদপুর সদরের পৌর এলাকাসহ মতলব উপজেলা এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার কিছু ফিডারের মাধ্যমে বন্টন করা হয়। বাকি বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের গ্রাহকদের মাঝে সরবরাহ করে থাকে।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এজন্য তারা বলছে, বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুৎ জেনারেশন কম হচ্ছে, একই সাথে অধিকাংশ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না- ডলার সঙ্কটসহ তাদের কাঁচামালের সরবরাহ না থাকায়। যার কারণে রাতে ও দিনে চাঁদপুরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে সহসাই সঙ্কট থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা কম বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আবাসিক প্রকৌশলীর সাথে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। তবে তিনি জানান, এ বিষয়ে তাদের আলাদা জনসংযোগ পরিদপ্তর রয়েছে। সেখান থেকে সরাসরি প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া অফিস সময়ে তার অফিসে গিয়ে কথা বলা যাবে।

৩০ এপ্রিল, ২০২৪।