প্রজন্মের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গেঁথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে…….শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি
এস এম সোহেল
‘এসো মিলি মুক্তির মোহনায়’ এ স্লোগানে মাসব্যাপী ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধন হয়েছে। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে সকাল ১১টায় জাতীয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়ানোর মাধ্যমে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রধান উপদেষ্টা ডা. দীপু মনি এমপি।
বিজয় মেলা মঞ্চে উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রধান উপদেষ্টা ডা. দীপু মনি এমপি। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন ছিল আমাদের হাজার হাজার বছর। বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাত্র ৯ মাসে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে বিনিময়ে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেসময় দিনে গড়ে সাড়ে ১১ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। তবে এত রক্তের বিনিময়ে বিশ্বের কোন দেশ স্বাধীন হয়নি। আমি আশা করবো যেন চাঁদপুর মুক্ত দিবসে বিজয় মেলা উদ্বোধন করা হয়। ৩০ বছর মেলাটি পরিচালনা হয়েছে, তা কম কথা নয়।
তিনি আরো বলেন, ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর শত্রু মুক্ত হয়েছে। ১১টি সেক্টর কমাডারের মধ্যে চাঁদপুরে ২ জন সেক্টর কমান্ডার চাঁদপুরে রয়েছেন। দেশ মাকে বাঁচাতে জাতির জনকের ডাকে মুক্তিযোদ্ধারা ঘর ছেড়েছেন। কত ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, আমরা চাই নতুন প্রজন্ম তা জানুক। তরুণ প্রজন্মকে ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য আর রক্ত দিতে হবে না। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে আর রক্ত দিতে হবে না। সব নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গেঁথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের এতো উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের পথ থেকে আমরা বিচ্যুত হবো না। দন্ডিত আসামিদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবো। আপনাদের পাশে আছি থাকবো ইনশাল্লাহ।
সভাপতি ও স্বাগত বক্তব্যে চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এমএ ওয়াদুুদ বলেন, আমরা একত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সব ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, চাঁদপুর মুক্ত দিবসে বিজয় মেলার সূচনা হয়। তবে বিশেষ কারণে এবার একটু এগিয়ে আনা হয়েছে। আয়োজনের উদ্দেশ্য হল নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো। সোনার বাংলা ও অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। জাতীয় পতাকার সম্মান সমুন্নত রাখতে পারে সেই প্রজন্মকে আমরা চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে এই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানানো জরুরি। মুক্তিযোদ্ধারা যদি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পান্ডুলিপি করে যান, তাহলে নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের লিখা কথাগুলো পান্ডুলিপি আকারে প্রকাশ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটওয়ারী বলেন, ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতির অহংকার ও গৌরবের মাস। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিরা স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। তবে ভুলে গেলে চলবে না মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিয়েছেন, ট্রেনিং জমা দেননি।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মহাসচিব হারুন আল রশীদের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাড. মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মুক্তিযোদ্ধা ছানা উল্যাহ খান ও গীতা পাঠ করেন দীপান্বিতা দাস।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ মো. ইউসুফ গাজী, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ মাস্টার, চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন সাবু পাটওয়ারী, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাফিজ খান, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বরকন্দাজ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, বিজয় মেলার স্টিয়ারিং কসিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মহসীন পাঠান, চাঁদপুর আল আমিন একাডেমীর অধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, চাঁদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল কালাম শামছুল আলম চিশতী, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদত, শহীদ পাটওয়ারী, শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, আহসান উল্যাহ, মির্জা জাকির, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, দৈনিক ইল্শেপাড়ের প্রধান সম্পাদক রোটা. মাহবুবুর রহমান সুমন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক অজয় কুমার ভৌমিক, সাবেক শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, সদস্য অ্যাড. সাইয়্যেদুল ইসলাম বাবু, কেন্দ্রিয় যুবলীগের সদস্য অ্যাড. জাফর ইকবাল মুন্না, চাঁদপুর জেলা যুুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, মোহাম্মদ আলী মাঝি, চাঁদপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মো. সফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, মাসব্যাপী ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় দেড় শতাধিক স্টল স্থান পেয়েছে। যেখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। এছাড়া মেলায় আগতদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। মা ও শিশুদের জন্য বিশেষ ফিডিং রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া জনসাধারণের সুরক্ষায় পুলিশ বাহিনীসহ বিশেষ টিম উপস্থিত থাকবে এবং অপ্রীতিকর দুর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যন্ত্রাংশ রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
০৬ ডিসেম্বর, ২০২২।