চিকিৎসার নানা অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠতে সরকার দৃঢ়তার সাথে কাজ করছে
……….শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি
স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে বহু প্রতিক্ষিত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের উদ্বোধন করা হয়েছে। বুধবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় ভার্চুয়ালের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি।
এ সময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে ২১ হাজারেরও বেশি মানুষকে আমরা হারিয়েছি। এখনো যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ আছেন আমরা তাদের জন্য দোয়া করি এবং যারা মারা গেছেন তাদের জন্যও মাগফেরাত কামনা করছি। এই করোনাকালীন মহাদুর্যোগ যখন চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের সাপ্লাই ছিল না। তখন আমরা প্রথমে ৩০টি বেড দিয়ে হাই-ফ্লো অক্সিজেন প্লান্ট চালু করি। তারপর ধীরে ধীরে চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় আমরা এই লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের উদ্যোগ নেই।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এই লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্টটি বসানোয় কাজ করেছে স্পেক্ট্রা কোম্পানী, অর্থায়ন করছে ইউনাইটেড ন্যাশন ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ইমার্জেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) এবং বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া আবুল খায়ের গ্রুপ ও সারা বাংলাদেশের সাথে চাঁদপুরেও আমাদের অক্সিজেন সেবা দিয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। একই সাথে এটি বাস্তবায়নের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, যেকোন দেশেই মহাদুর্যোগে প্রস্তুতি না থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া খুব কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবুও আমরা বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যার কারণেই এই দুর্যোগে যতটা সম্ভব মোকাবেলা করতে পেরেছি। চাঁদপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আমরা যতটুকু সাধ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা করতে পেরেছি সে তুলনায় পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে এতটা ব্যবস্থা হয়নি। আমরা বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছি।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের সব দেশেই করোনা অতিমারির একটি হিমশিম অবস্থা চলছে। কারণ চিকিৎসার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, তার একটি স্বাভাবিক ব্যবস্থা থাকে। আর এই অতিমারিতে ব্যাপক হার সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, সেই রকম অবস্থা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি থাকা সম্ভব না। এত বড় ব্যবস্থার জন্য কোন দেশই প্রস্তুতি থাকে না, আমাদের দেশেও নয়। কারণ আমাদেরও চিকিৎসা বিভাগে নানা সীমাবদ্ধতা ও অপ্রতুলতা রয়েছে। আর এই অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠার জন্য শেখ হাসিনার সরকার দৃঢ়তার সাথে কাজ করছে। সরকারের পাশাপাশি যারা ধর্ণাঢ্য ব্যাক্তি রয়েছেন, তারা এলাকাভিত্তিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা উচিৎ।
শোকের মাসে বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, চাঁদপুর সদর হাসপাতালে অক্সিজেনের সর্বোচ্চ সাপোর্ট দেয়া হবে। সে ব্যবস্থা রোগীদের জন্য করা হয়েছে। এটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেয়া যাবে না। কেননা, অক্সিজেন সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকে যায়। তবে উপজেলা কমপ্লেক্সের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন দেয়ার ব্যাপারেও প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরো বলেন, অক্সিজেনের জন্য হয়তো যেই ৫০টি মিটার সদর হাসপাতালে রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। তাই আগামি ৪-৫ দিনের মধ্যেই আরও ১শ’ মিটার সরবরাহ করা হবে। সেজন্যও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আশা করি এতে চাঁদপুরবাসীর অক্সিজেন সঙ্কট হবে না।
তিনি বলেন, এই করোনাকালীন সময়ে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এলাকাভিত্তিকভাবেও বিভিন্ন শিল্পপতি, বিত্তবান ও পেশাজীবীরা এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। আমাদের দলের সাধারণ কর্মীরা ও সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এজন্যই আমরা পেরেছি, আমরা পারবো। এই করোনাকালে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগসহ যারা এই কঠিন সময়ে অবদান রেখেছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ, সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্পাদক অ্যাড. মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ও জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুন্নবী মাসুম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপির চাঁদপুর প্রতিনিধি অ্যাড. সাইফুদ্দিন বাবু, চাঁদপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান টুটুল, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. দিদারুল আলম প্রমুখ।
চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য বিভাগ নিয়ে আলোচনা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আনুষ্ঠানিকভাবে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে স্থাপনকৃত লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মূল প্ল্যান্টে তৈরি হবে ৬ হাজার লিটারের অক্সিজেন গ্যাস। যা অক্সিজেনে রূপান্তর হয়ে ৫১ লাখ ৬০ হাজার মিলিলিটারে দাঁড়াবে। তবে প্ল্যান্টটি উদ্বোধনের আগেই পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের সময় হাসপাতালের অনেক রোগী সেখান থেকে অক্সিজেন পাওয়া শুরু করেছেন। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চাঁদপুরে অক্সিজেন সঙ্কট থাকলেও প্ল্যান্টটি চালু হওয়ায় সবার মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।
ইউনিসেফের অর্থায়নে ও সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা সরকারি জেনারেল হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ গত প্রায় ৩ মাস আগে শুরু হয়। দু’সপ্তাহ আগে কাজ শেষ হলেও লিকুইড অক্সিজেনের অভাবে চালু করা যায়নি।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, অক্সিজেন মিটারসহ ভিতরে আরো কিছু আনুষঙ্গিক কাজ বাকি রয়েছে। মিটার আসলে বা লাইন ক্লিয়ারসহ সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সব রোগীরা লিকুইড অক্সিজেন পাবে। তবে উদ্বোধনের দিন থেকেই অক্সিজেন পাচ্ছে অনেক রোগী। পর্যায়ক্রমে হাসপাতালে ভর্তি সব রোগীই এই সুবিধা পাবে।
০৪ আগস্ট, ২০২১।