জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

চাঁদপুরে কিশোর সংশোধন কেন্দ্র স্থাপন করা দরকার
…….জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান

স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুরে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, জেলা কৃষিপণ্য উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে জেলার চাহিদা পূরণ হবে। বোরো মৌসুমে সেচের অভাবে যেন চাষাবাদ ব্যাহত না হয়, সেজন্য তিনি চাঁদপুরের দু’টি সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানান।
তিনি আরো বলেন, কয়েকদিন আগে মতলব দক্ষিণ উপজেলাকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ইদানীং আবার উক্ত উপজেলায় মাদক বেচা কেনা বেড়ে গেছে। জেলা কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের জন্য জেলায় একটি কিশোর সংশোধন কেন্দ্র স্থাপনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসন থেকে পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসার পরিচালনায় পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সভায় জানান, ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারি মাসে জেলায় মামলা সংখ্যা কম। তবে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। শীতকালে বিয়ে বেশি হওয়ার ফলে ছেলে-মেয়েদের মাঝে যোগাযোগ বা সখ্যতা বৃদ্ধি পায়, ফলে এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধির একটি কারণও হতে পারে এটি। এছাড়া এ মাসে জেলায় দু’টি খুন ও একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন ফোরামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যে হুঁশিয়ারী দিয়েছেন, তা পুলিশ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে। আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। মার্চ মাস ও রোজাকে কেন্দ্র করে দেশে যে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ হবার আশঙ্কা রয়েছে, এ বিষয়ে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে বলে জানান। অবৈধ মজুতদারী ও অনৈতিক ব্যবসা রোধে ১৯৩৩ সালের নীতিহীন ব্যবসা আইন পুলিশ প্রয়োগ করবে বলে তিনি জানান।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বলেন, শহরে তীব্র যানজটের কারণে শিক্ষার্থীরা সময়মতো পরীক্ষা বা ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না। তিনি যানজট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলার বলেন, প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন কাজে কোনো ধরনের বাঁধা বা চাঁদাবাজী ও আইন-শৃঙ্খলা অবনতি যাতে না হয় সেজন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা ও অবৈধ মজুদদারী বিষয়ে জোর তদারকির আহবান জানান।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, ইদানীং উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এলাকায় চুরি বেড়ে গেছে। এতে উপজেলায় আসা সেবাগ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
চাঁদপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, বর্তমান সময়ে হাসাপাতালে বর্হিবিভাগ ও অভ্যন্তরীণ রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতাল ও প্যাথলজির দালালরা রোগীদের সাথে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে রোগীদের সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছেন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এসব দালালদের সাথে হাসপাতালের কিছু কর্মচারী জড়িত আছে। প্রয়োজনে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন এ বিষয়ে জানান, শুধুমাত্র ঘুমের ঔষধ মাদক নিরাময়ে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন রয়েছে। অন্য মাদকদ্রব্য ব্যবহারের অনুমোদন নাই।
জেলা প্রশাসক জেলার বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ‘অর্পণ’ এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জানান, এটি বেসরকারিভাবে পরিচালিত হলেও এর কোনে আইনী অনুমোদন নাই। মাদক সেবনকারীদের নিরাময়ের জন্য বেশকিছু মাদক ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো অনুমোদন নেয় নাই।
চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত বলেন, সরকার গঠনের পর এটাই জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির প্রথম সভা। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ দল এবং বিভিন্ন ফোরামে উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত, পণ্য অবৈধ গুদামজাত করা এবং চাঁদাবাজিসহ আইন-শৃঙ্খলা যাতে অবনতি না হয় সেজন্য যে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন, তা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান। এছাড়া শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে দিনের বেলায় শহরে কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংক লরী ও ট্রাক যাতে শহরে না ঢুকতে পারে এ বিষয়ে পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া মার্চ-এপ্রিল মাসে জাটকা নিধন অভিযান শুরুর আগে বর্তমানে জাটকা নিধন ও বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. রনজিত রায় চৌধুরীর কাছে আদালতে বিচারাধীন চোরাচালান ও মানব পাচার মামলাসমূহের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএসএম মোসা সভায় বলেন, জানুয়ারি মাসে জেলায় বিভিন্ন বিষয়ে ১০৪৯টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। সভায় জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় বিভিন্ন উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌর মেয়র ও জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪।