ফরিদগঞ্জে টিসিবির কার্ড বিতরণে অনিয়ম

সুবিদপুর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা ও নয়-ছয় চালবাজি

স্টাফ রিপোর্টার
রাষ্ট্র প্রধানরা দিনরাত পরিশ্রম করে জনগণের কল্যাণে কাজ করলেও কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের জন্য সেই কাজ ভেস্তে যাচ্ছে। এমনি এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন। চেয়ারম্যানের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। জনরোষের শিকার হয়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যরা। মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রতি মাসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার ওই ইউনিয়নের নিম্ন আয়ের তালিকাভুক্ত মানুষদের মাঝে টিসিবি পণ্য বিক্রয়ের তারিখ ধার্য করা হয়। ওই ইউনিয়নে ১১৭৫ জন গ্রাহকের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রয় করেছেন। প্রতিজন ইউপি সদস্য ১১০ তার নির্বাচিত এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ১২০টি টিসিবি কার্ড পেয়ে থাকেন। পণ্য বিক্রয়ের আগেরদিন স্ব-স্ব ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যদের মাঝে টিসিবি কার্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্বে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু এ মাসের টিসিবির কার্ড চেয়ারম্যানের কাছের কয়েকজন ইউপি সদস্যকে দেয়া হলেও আগের তুলনায় দিয়েছেন কম। দুই ওয়ার্ডের দুইজন ইউপি সদস্যকে একটি কার্ডও দেয়া হয়নি। এতে তালিকাভুক্ত টিসিবির গ্রাহকেরা কার্ড না পেয়ে ইউপি সদস্যের বাড়িতে গিয়ে তাদের বকাঝকা করেন। এদিকে আগের গ্রাহক অনেকে কার্ড না পেয়ে পরিষদে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করতেও দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন টিসিবি কার্ডের গ্রাহক বলেন, তারা আগে কার্ড পেতো, টিসিবির পণ্য ক্রয় করে কিছুটা হলেও তাদের পারিবারিক খরচের সহায়ক হতো। কিন্তু এ মাসে তাদের কার্ড দেয়া হয়নি। এতে ক্ষোভের পাশাপাশি তারা হতাশ হয়েছেন।
ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন দুলাল বলেন, আগে ১১০টি কার্ড পেতাম, তা তালিকানুযায়ী নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিতাম। কিন্তু এ মাসে আমাকে একটি কার্ডও দেয়া হয়নি, তাই আমি কাউকে কার্ড দিতে পারিনি। এতে সাধারণ মানুষজন আমার বাড়িতে এসে আমাকে বকাঝকা করেছে। আমি তিনবারের জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ বয়সে আমি জনরোষের শিকার হতে হয়েছে।
ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান বলেন, আমি আগে ১১৫টি টিসিবি কার্ড পেলেও এ মাসে আমাকে একটি কার্ডও দেয়া হয়নি। টিসিবির কার্ড নিয়ে পরিষদে নয়-ছয় চলছে। এতে আমাকেও জনরোষের শিকার হতে হয়েছে।
ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিমাসে আমাকে ১২০টি কার্ড দেয়া হয়। চেয়ারম্যান আমাকে কম দিতে চেয়েছে এতে আমি ক্ষীপ্ত হয়ে একটি কার্ডও গ্রহণ করিনি, পরে চেয়ারম্যান লোক দিয়ে আমার জন্য ১১৭টি কার্ড পাঠিয়েছে।
ইউপি সুমন বলেন, আমাকে কার্ড দেয়া হয়েছে, তবে আমি চেয়ারম্যানের জন্য তার সামনে ১০টি কার্ড রেখে গেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন ইউপি সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের কার্ড কম দিয়েছে। টিসিবির কার্ড নিয়ে তার চালবাজির শিকার হয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে আমাকে।
ইতোপূর্বেও তার বিরুদ্ধে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন স্থানীয় জাতীয় পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ হলেও তখনকার আওয়ামী নেতা ও পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যান খাজে আহমেদ ছাঁয়া কোন প্রতিকার পায়নি অভিযোগ করে বরং অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া সাবেক ইউপি সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রভাব খাটিয়ে বদলি করারও অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান বেলায়েতের বিরুদ্ধে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আমি টিসিবির কার্ড বিতরণ করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না, খোঁজখবর নিয়ে অনিয়ম হলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।