ফরিদগঞ্জে টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যালয়ের মালামাল আত্মসাৎ

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো
ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের আওতাধীন কালির বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো দেয়াল ভেঙে মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিয়ে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার রুবির স্বামী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাইনুল ইসলাম রাছেলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিদ্যালয়েরই ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম পাটওয়ারী। যদিও ঠিকাদারের সহকারী দাবি করছেন, কাজের সুবিধার্থে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, সাম্প্রতিক ওই বিদ্যালয়টির নতুন করে একটি বাউন্ডারি দেয়ালের কাজ চালু হয়েছে। এর আগে ওই বিদ্যালয়টির আঙ্গিনায় পুরাতন একটি বাউন্ডারি দেয়াল ছিল। নতুন দেয়ালটি সম্পন্ন হওয়ার আগেই কোন রকম টেন্ডার ছাড়াই পুরাতন দেয়ালটি ভেঙে ইট ও লোহার তৈরি ফটক আত্মসাৎ করে একটি চক্র। বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে তারা ওই দেয়ালটির লুণ্ঠনকৃত মালামাল স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার রুবির স্বামী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাইনুল ইসলাম রাছেলের নবনির্মিত বাড়িতে দেখতে পায়। পরে বিষয়টি নিয়ে সরকারি মালামাল আত্মসাতের অভিযোগ করে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম পাটওয়ারী ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
থানায় লিখিত অভিযোগের সূত্র ধরে রোববার (১৯ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গেলে, স্কুলের পুরাতন দেয়ালটি বিক্রি ও ভাঙার বিষয়ে কোনো টেন্ডার প্রক্রিয়া না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) কামরুন্নাহার রুবি জানান, দেয়াল কারা ভেঙেছে আমি বলতে পারবো না। আপনার স্বামীর নবনির্মিত বাড়িতে দেয়ালের মালামাল পাওয়া গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিকাদারের লোকজন তাদের সুবিধার্থে সেখানে মালামাল রেখেছে হয়তো।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সোহেল বলেন, স্কুলের দেয়াল ভেঙে মালামাল নেয়ার বিষয়ে অভিযোগের পর শনিবার রাতে থানার এসআই মাহফুজুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর রাতেই আত্মসাৎকারী চক্রটি এক ট্রাক ইট স্কুলের পাশে এনে ফেলে রেখে যায়। সরকারের নিয়ম বহিভর্‚ত কাজে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবে বলে আশা করি।
এদিকে নতুন দেয়াল নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের সহকারী কামরুল ইসলাম দেয়াল ভাঙার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে বলেন, কাজের সুবিধার্থে মালামাল অন্যত্র রাখা হয়েছে।
ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় কালির বাজার কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম পাটওয়ারী বলেন, স্কুলের দেয়াল ভাঙার বিষয়টি প্রথমে আমি জানতাম না। পরে জানতে পেরেছি, নতুন দেয়ালটির কাজের সুবিধার্থে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুরাতন দেয়ালটি ভেঙেছে। যেহেতু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দেয়ালটি ভাঙা হয়নি, প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমি বলেছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম রাছেল বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
তবে মাইনুল ইসলাম রাছেলের শ্বশুর সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, মাইনুল ইসলাম রাছেল প্রতিহিংসার শিকার। তাকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জহিরুল ইসলাম বলেন, দেয়াল ভাঙার বিষয়ে কোন টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়নি। দেয়াল ভাঙার বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ওসি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, এসআই মাহফুজুল হককে তদন্তভার প্রদান করা হয়েছে। শনিবার রাতেই সে ঘটনাস্থলে গিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মন্ডল বলেন, সরকারের নিয়ম বহিভর্‚ত কোন ঘটনা সৃষ্টি হলে তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

২০ নভেম্বর, ২০২৩।