মতলব উত্তরে ১৭ বছর ধরে বিদ্যুৎ-রাস্তাহীন ৪ পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার
মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর গ্রামে ১৭ বছর ধরে বিদ্যুৎ ও চলাচলের রাস্তা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চারটি পরিবারের লোকজন। ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী এতদিন প্রভাব খাটিয়ে বাঁধা প্রদান করে রেখেছেন। এমনকি বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে আসলে বিদ্যুতের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে লাঞ্চিত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুতের মালামালও রাতের আঁধারে সরিয়ে ফেলেছেন এই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা।
সম্প্রতি এই ঘটনাটি প্রশাসনিক লেভেলে জানাজানি হলে গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করেন থানা পুলিশ। এখানে কোন ঝামেলা না থাকলেও একজন আওয়ামী লীগ নেতা ব্যক্তি স্বার্থে বিদ্যুৎ সংযোগে বাঁধা দিয়ে রেখেছেন বলে জানা যায়। এসময় ভুক্তভোগী পরিবারের ফতেপুর গ্রামের হাফেজ আলীর ছেলে আবুল হোসেন, হাজি আ. মতিন খানের ছেলে নাছির উদ্দিন, আবুল কাশেম লস্করের ছেলে মনছুর আহমেদ, ইব্রাহিম প্রধানের স্ত্রী মমতাজ বেগম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গত ২০০০ সালে ওই জায়গায় বসতবাড়ি নির্মাণ করে পরবর্তীতে ২০০৬ সালে বসবাস শুরু করি। এরপর থেকে বিদ্যুতের জন্য আবেদন করি। কিন্তু ওই সময় সরকার পরিবর্তন হওয়ার কারণে আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে আবারো বিদ্যুতের জন্য আবেদন করি। ওই সময় থেকে ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগে বাঁধা প্রদান করে আসছেন। ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একাধিক বহুবার আবেদন করে টাকা জমা দেই, কিন্তু বিদ্যুতের লোকজন খুঁটি ও মালামাল নিয়ে আসলে তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি রাতে আঁধারে মালামাল চুরি করে নিয়ে গেছে। এখনও দুইটি খুঁটি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, চেয়ারম্যানের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। কিন্তু তিনি কেন আমাদেরকে বিদ্যুৎ সংযোগে বাঁধা দিচ্ছেন, তা আমরা জানি না। আমাদের চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত দিচ্ছেন না। লোক দিয়ে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পেরেছি তিনি (চেয়ারম্যান) চান আমরা এখান থেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে দিয়ে চলে যাই। কিন্তু আমরা আমাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে কেন চলে যাব? যাইনি বিধায় আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ এবং চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে রাখছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলছে। ইউপি চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিস্বার্থে এই পরিবারগুলোকে কষ্ট দিচ্ছেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চেয়ারম্যান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায়নি।
মতলব উত্তর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের এজিএম মো. রায়হানুল ইসলাম বলেন, আসলে গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা একাধিকবার বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে যাই। কিন্তু আমাদের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমরা এ বিষয়ে কথা বললে আমাদেরও বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করেছে। সাবেক একজন এমপি তাদের বিদ্যুৎ দিতে বলেছেন, কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানের বাঁধার কারণে আমরা কাজ করতে পারিনি। তবে আর যদি কোন বাঁধা না থাকে তাহলে আমরা শ্রীঘ্রই ওই পরিবারগুলোকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবো।
এ ব্যাপারে ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী বলেন, এই জায়গাটায় আমরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে চাই। তাদের একাধিকবার বসতে বললেও তারা রাজি হয়নি। জায়গা লাগলে জায়গা দিবে, বিদ্যুৎ সংযোগে বাঁধা দিচ্ছেন কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে তো সব শেষ হয়ে গেল। এই কথা বলে তিনি এড়িয়ে যান।

১০ অক্টোবর, ২০২৪।