বিপাকে কোমলমতী শিক্ষার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের আলগী পোলের গোড়া (স্বাধীন বাংলা বাজার) বাজার থেকে আলগী পকিস্তান বাজার ও সকদি পাঁচগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের শেষ সীমানা রেললাইন পর্যন্ত এ দু’টি রাস্তা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। এ দু’টি রাস্তা দীর্ঘ কয়েক বছর আগে পাকা করা হলেও পরবর্তীতে নতুন করে সংস্কার না করায় রাস্তা দিয়ে চালাচল করা অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী দু’টি রাস্তা দিয়েই ভয়ে যানবাহনে চলাচল করতে চায় না। রাস্তা দিয়ে হেটে যেতেই মানুষের কষ্ট হয়। দুটি রাস্তার প্রায় ৪ কিলোমিটার ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রায় কয়েক হাজার এলাকবাসী। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার সংস্কার না করা ও বড় বড় নিষিদ্ধ ট্রাক্টর (ট্রাক) বিভিন্ন মালামাল নিয়ে চলাচল করায় এ রাস্তগুলোর বেহাল দশা হয়েছে বলেই এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন।
এ দু’টি রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন ছোট সুন্দর আমজাদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়, ছোটসুন্দর আল-আমিন ছিদ্দীকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, পল্লী শিশু একাডেমী, সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন, সানরাইজ কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। এ সময় দুই তিনজন শিক্ষার্থী একসাথে হাটলেই রাস্তার বালু উড়ে গিয়ে তাদের পোষাক ধূলা বালুতে নষ্ট হয়ে যায় এবং বৃষ্টির সময় কাদা মাটি দিয়ে হটতে গিয়েও পরছে বিপাকে। কিন্ডার গার্টেনগুলোর শিশু শিক্ষার্থীরা ভ্যানে বা সিএনজিতে করে আসা যাওয়া করতেও মারাত্মক ঝুঁকিতে পরতে হয়। এমনকি রাস্তা ভাঙ্গাচোরা হওয়ায় অনেকেই পা ফচ্কে পড়ে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে বলেও এলাকাবাসী থেকে জানা যায়।
এলাকাবাসীর মধ্যে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাস্তার এমন বেহাল দশার দৃশ্য তুলে ধরে বিভিন্ন মতামত ও কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেলেও এ যেন কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুটি রাস্তারই কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় রাস্তার কংকর গুলোও নেই। আর এইসব স্থানগুলোতে বড় বড় গর্তে পরিনত হয়েছে। এসব রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করতে গিয়ে প্রায় পা ফচ্কে বা যানবাহন থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় এলাকার কিছু যুব সমাজ নিজ উদ্যোগে রাস্তায় পানি দিয়ে ধূলা-বালু থেকে পথযাত্রীদের রক্ষা করার চেষ্টা করে। সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের কিছু অংশের এলাকাবাসীর (সকদি পাঁচগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের শেষ সীমানা রেল লাইন পর্যন্ত) এই একটি মাত্র পথ হওয়ায় মানুষের চলাচল করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আর অপরদিকে দক্ষিণ আলগী ও সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের কিছু অংশের এলাকাবাসীর আলগী পোলের গোড়া (স্বাধীন বাংলা বাজার) বাজার থেকে আলগী পকিস্তান বাজারের এ পথটি ছাড়াও বিকল্প পথ বগার গুদারা হয়ে ছোট সুন্দরের রাস্তাটি থাকলেও তাও একেবারেই নাজুক। সে রাস্তাটিও বহু বছর আগে পাকা করার পর থেকে আর কোন সংস্কার না করায় সে রাস্তাটিও ভেঙ্গেচুড়ে গিয়েছে। সেখান দিয়েও যাতায়াত করতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
এলাকাবাসী অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ রাস্তাগুলো দীর্ঘ কয়েক বছর আগে বছর আগে পাকা করার পর থেকে এ পর্যন্ত আর কোন সংস্কার করা হয়নি তাই রাস্তাগুলোতে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। এছাড়া এ রাস্তাগুলো দিয়ে প্রতিনিয়তই বড় বড় ট্রাক চলাচল করে। এসব ট্রাকে করে ইট-বালুসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করার কারণেও রাস্তাগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমাদের এলাকায় রোধ হলেও সমস্যা আবার বৃষ্টি হলেও সমস্যা। কয়েকদিন খরা (রোদ) থাকলে বালুর জন্য রাস্তা দিয়ে হাটা যায় না। আবার একটু বৃষ্টি হলেই পেঁক কাদায়ও হাটা যায় না। আমরা সবময়ই এ সমস্ত দূর্ভোগের মধ্যে বসবাস করছি। দেশে এতো উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আমাদের এ দুর্ভোগ ও দুর্দশার কথা কেউ যেন বুঝতে চায় না। প্রায় কয়েক হাজার মানুষ এ দুটি গ্রামে বসবাস করে আসছে। অথচ আমাদের কথা কেউ চিন্তাও করে না। আমরা আশা করছি আমাদের এমপি আমাদের এই এলাকারই মেয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আমাদের এ দুর্ভোগ থেকে অচিরেই রক্ষা করবেন।
সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, রাস্তা পাকা করার পর থেকে এ পর্যন্ত আর কোন সংস্কার না করায় আজ রাস্তার এ বেহাল দশা। সকদি পাঁচগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে সকদি পাঁচগাঁও গ্রামের শেষ সীমানা রেললাইন পর্যন্ত সড়ক ভেঙে এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে যে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, হাটাও দায়। এই সড়কটি এই এলাকার একমাত্র সড়ক। তাই এটি সংস্কার করা খুবই জরুরী।
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার এ দুটি সড়কই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সড়কগুলোতে খানাখন্দে বেহাল হওয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ এলাকাবাসী আসা-যাওয়া করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। খারাপ রাস্তার কারণে আমরা যানবাহন নিয়ে বাড়ি ঘরে আসা যাওয়া করতে পারছি না। তাই এ রাস্তাগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
আলগী গ্রামের মির্জা সাদ্দাম জানান, আমি নিজ উদ্যোগে প্রায় সময় বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে রাস্তায় পানি দিয়েছি। যাতে করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পথচারীরা ধূলা-বালু থেকে রক্ষা পায়। এ ধুলা বালুর কারনে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে আমাদের খুবই অসুবিধা হচ্ছে।
ইউপি সদস্য বিশু মজুমদার জানান, রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষের চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে তা জানি। দুটি রাস্তাই সংস্কার কাজের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত রাস্তাগুলো মেরামতের কাজ করা হবে।
এলাকাবাসী স্থানীয় সাংসদ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যাতে করে দ্রুত এ রাস্তাগুলো মেরামত করে এলাকাবাসীকে সীমহীন দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করে।