স্টাফ রিপোর্টার
চাঁদপুর তরপুরচন্ডী ষোলঘর পাকা মসজিদ এলাকায় (শেখ বাড়ি) বৈধতা না থাকলেও জোড়পূর্বক ভূমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত নুরুল হক শেখের সন্তানরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে জোরপূর্বক স্থাপনা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে গত ১ নভেম্বর ভূক্তভোগীরা চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি আবেদন করলে বিচারক সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য পত্র দেন (স্মারক নং ২৩৪০, তারিখ: ০১/১১/২০১৮)। মামলা নং-১০৩১ (১৪৫ ধারা) ২০১৮। কিন্তু গত ২৬ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয় বলে বি.এস ২০৪৫ রেকর্ড মূলে মালিক মো. সিরাজুল হক শেখ জানান। প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটনপূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন করে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে বিচারের আওতায় আনার জন্য আবেদন জানিয়েছেন বাদী পক্ষ।
তারপর বিবাদী পক্ষ আইনকে তোয়াক্কা না করে বিবাদী শাহাদাত হোসেন ফরহাদ গং আবারো জোরপূর্বক বাদী সামছুল হকের দখলীয় সম্পত্তি উচ্ছেদ করতে গেলে এলাকায় আরো উত্তেজনা বেড়ে যায়। এ অবস্থায় জমির মালিকের অন্যান্য শরীকরাও যৌথভাবে মো. সামছুল হক শেখ আমমোক্তার নামে মো. রেজাউল হক ২০ নভেম্বর একই আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছেন। যার স্মারক নং ২৫০১, তারিখ: ২০/১১/২০১৮ইং (মামলা নং ১০৮৩)। আবেদনকারীরা আশা করছেন বিচারক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে সত্য উদঘাটনপূর্বক জায়গা জমি সীমানা নির্ধারণ করার পর সমঝোতার মাধ্যমে কাজ করুক। সে আদেশ মোতাবেক নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার ব্যবস্থা নিবেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।
বাদী পক্ষরা অভিযোগ করেছেন, মরহুম নুরুল হক শেখের ছেলে শাহাদাত হোসেন ফরহাদ (৩৯), আব্দুল গনি পারভেজ (৩৬) ও তার বোন ফরিদা হোসাইন (৪৫) সহ তারা বিভিন্ন অফিসে অর্থের বিনিময়ে তার জেঠাদের জায়গা-সম্পত্তি ভুয়া দলিল ও খারিজ করে জোরপূর্বক দখল করে বিক্রি করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে মামলা মোকদ্দমা করা হলেও এমনকি তারা সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু হওয়ার কারণে ভুয়া খারিজও বাতিল করা হয়েছে। বিবাদী পক্ষের কয়েকটি অনিয়ম তুলে ধরা হলো। এর মধ্যে নালিশী ভূমিতে বিবাদীদের কোন বৈধ মালিকতা ও দখলীয় নাই। প্রতিপক্ষগণ দলে বলে বলিয়ান ভূমি দস্যু লাঠিয়াল শ্রেণির লোক হওয়ায় ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে যা ০.০৭০০ শতাংশ খারিজ করে নেয়। যার খতিয়ান নং- ২৩৭৩ আবার ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ১৫০০ শতাংশ খারিজ করে নেয়, যার খতিয়ান নং- ৩৬২৩ ও জোত নং- ৩৬২৭। যা পরে ভুয়া কাগজপত্র প্রমাণিত হওয়ায় সম্পন্ন খারিজ খতিয়ানটি বাতিলের আদেশ প্রদান করেন সহকারী ভূমি কমিশনার। একই সাথে বিবাদী পিতা মৃত. নূরুল হক শেখ মোকদ্দমা নং ৮৩/২০১৫-১৬ইং নামজারী জমা খারিজ অবৈধভাবে করলে ১৫ শতাংশ খারিজটি বাতিল করে দেয় সহকারী কমিশনার (ভূমি), চাঁদপুর সদর। একই সাথে বিগত ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বিএস ২০৪৫নং খতিয়ানের শরীকদের মধ্যে রেজিস্টার্ড বন্টননামা দলিল অথবা দেওয়ানী আদালতে বাটোয়ারা না হওয়া পর্যন্ত কোন শরীকের নামে কোন নামজারী-জমা খারিজের প্রস্তাব না দেয়ার জন্য কানুনগো ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে নির্দেশ দেয়া হয়। এই নির্দেশনা ভূমি অফিস থেকে বিভিন্ন অফিসে নোটিশ জারি করা হয়েছে যে তাদের একক নামে কোন জমি জায়গা খারিজ না করা হয়। এছাড়া এসব জায়গা সম্পত্তি বিরোধে বাদী সিরাজুল হক শেখ চাঁদপুর পৌরসভা কার্যালয় অভিযোগ দাখিল করলে ২০১৩ সালের ২৫ এপ্রিল জরিপক্রমে সীমানা নির্ধারণ করে কাজ করার জন্য চাঁদপুর পৌরসভা আদেশ দেন। সেই আদেশও তারা অমান্য করে। যদিও ২৬নং তরপুরচন্ডী মৌজার সিএস ৩৬৫নং ও আরএস খতিয়ানভূক্ত এক্ আনা ৪.৪৮ একর সম্পত্তি আমাদের শেখ বাড়ির ও গাজী বাড়ির বংশ মালিক হয়। যার বিএস খতিয়ান সংখ্যা ২০০টি রেকর্ডভূক্ত আনুমানিক আছে। সিএস ও আর.এস খতিয়ানে ১৯১৪নং দাগে মোট সম্পত্তি ৭৪০০শতাংশ রয়েছে। নুরুল হক শেখ ও মনিরুল হক শেখকে বিএস খতিয়ান নং ১৬৮৮, দাগ নং ৫১৭৭ মোট ১২০০শতাংশ রেকর্ডভূক্ত করা হয়। ঐ খতিয়ানে তাদের অংশ বুঝিয়া দেয়া হয়েছে। তারপরও নিঃশর্তবান হয়ে ২০৪৫নং বিএস খতিয়ানে কিছু অংশ বিক্রি করে দেয় যার দলিল নাম্বার- ৬৬০৬/১৫, তারিখ: ১৫/০৯/২০১৫ইং। শুধু তাই নয়, বিবাদীরা কৌশলে মোট সম্পত্তির উন্নতমানের জায়গাগুলো জোরপূর্বক দখল করার জন্য বিএস খতিয়ানে উন্নতমানের রেকর্ডমূলে ২০৪৫নং, ৫১৭৪নং দাগে সম্পত্তিতে দাবি করে, যা সম্পূর্ণ বেআইনী। এসব অনিয়মের ব্যাখা দিয়ে মো. সিরাজুল হক চাঁদপুর পৌরসভা কার্যালয়ে অভিযোগ করেন, অবৈধভাবে প্ল্যান বহির্ভূত সীমানা নির্ধারণ না করে অবৈধভাবে কোন দালান-কোঠা না করার জন্য আপত্তি করেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৭ মে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে সার্ভেয়ার শ্রীতামসহ পৌর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলেও বিবাদীদের অসহযোগিতা কোন কাজ করতে পারেনি। এরপর বিবাদীদের অশুভ তৎপরতা বাড়লে অর্থাৎ জোরপূর্বক জমি দখল করে ভবন নির্মাণের চেষ্টা চালালে ২০১৬ সালের ১২ মে সামছুল হক শেখ চাঁদপুর পুলিশ সুপার অফিসে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। যার স্মারক নং ২৪১। একই সালের ২৭ মে একই ব্যক্তির (শাহাদাত হোসেন ফরহাদ গং) নামে চাঁদপুর সদর মডেল থানায়ও একটি অভিযোগ দায়ের করেন, যার জিডি নং ১২৪৬। এই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনের নিচতলায় সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. সেলিম আকবরের সভাপতিত্বে এক সালিসে সিদ্ধান্ত হয় পৈত্রিক ওয়ারিশ সম্পত্তি ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রেজিস্ট্রেশন বন্টননামা মূলে রেজিস্টার করে নিবে। কিন্তু সরা ওয়ারিশরা আদেশ মেনে নিলেও জায়গা-সম্পত্তি বিক্রি করে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে দখল করার জন্য বিবাদী পক্ষ শাহাদাত হোসেন ফরহাদ গং তা করতে রাজী হয়নি। এখানেও তারা আদালতে অবমাননা করেছে। এছাড়া ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সবার সম্পত্তি বিবাদী শাহাদাত হোসেন ফরহাদ সীমানা নির্ধারণ বা আপোষ বন্টন না করে জমি বিক্রি করে দেয়। যার দলিল নং ৬৬০৬/২০১৫ইং তারিখ ১৫/০৯/২০১৫ইং।
প্রকৃত সত্য ঘটনা এই যে, এলাকায় দীর্ঘ ১০/১২ ধরে এই সম্পত্তি বাদী সামছুল হক শেখকে বিভিন্ন ছলে বলে কৌশলে সামছুল হকের দখলকৃত সম্পত্তি বেদখল করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ খোঁজে কিন্তু এলাকার স্বাক্ষীদের বক্তব্যের মাধ্যমে জানা যায়, ২০৪৫ নং বিএস খতিয়ানভূক্ত ৫১৭৪ দাগে মোট ১৩ শতাংশ রেকর্ডভূক্ত হয়। সামছুল হক শেখ ৬ শতাংশের উপর বাড়ি করে দখলে আছে এবং নুরুল হক শেখ সাড়ে ৩ শতাংশ দখলে আছে। যেহেতু সামছুল হক শেখ (৮০) একজন সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.)। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করে আসছে এবং অসুস্থ থাকার কারণে এ সুযোগ নিয়ে দখলকৃত সম্পত্তি থেকে বেদখল করার জন্য ভূমিদস্যু শাহাদাত হোসেন ফরহাদ গং সন্ত্রাসী লোকবল নিয়ে হামলা চালায়। যার কারণে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁদপুর এর দরখাস্ত মামলা নং ১০৮৩/২০১৮ (১৪৫ ধারা) মামলা দায়ের করেন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাছে সুবিচার পাওয়ার একান্ত আবশ্যক। তা না হলে বড় কোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।


