হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১১৭ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
নতুন করে কোনো করারোপ ছাড়া ও উদ্বৃত্ত রেখে হাজীগঞ্জে পৌরসভার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১৭ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (৮ জুলাই) ঘোষিত বাজেটে মোট আয় ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ২৫০ টাকা এবং মোট ব্যয় ১১২ কোটি ৭০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। উদ্বৃত্ত থাকবে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ২৫০ টাকা। যা পৌরসভার ইতিহাসে বৃহত্তম বাজেট।
এ দিন বিকালে পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে পৌর মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে নবম এবং বর্তমান পরিষদের চতুর্থ ও পৌরসভার ৩৯ তম বাজেট ঘোষণা করেন। বাজেট ঘোষণার আগে বক্তব্যের শুরুতেই তিনি সম্প্রতি হাজীগঞ্জের একজন নবীন সংবাদকর্মী ও পৌরসভার কর্মচারীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে সমবেদনা জানান। এরপর তিনি পৌরসভার সামগ্রিক বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন।
পরবর্তীতে তিনি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। এবারের বাজেটে সর্বমোট আয়ের মধ্যে নিজস্ব (রাজস্ব) খাতে আয় ধরা হয়েছে, ৩০ কোটি ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে নিজস্ব রাজস্ব তহবিল ২৪ কোটি ৬২ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা এবং পানির রাজস্ব আয় ৫ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
রাজস্ব খাতে সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে নিজস্ব রাজস্ব ব্যয় ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং পানির রাজস্ব ব্যয় ৪ কোটি ৮৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
রাজস্ব বাজেটে মোট উদ্বৃত্ত থাকবে ১ কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব তহবিলে ৮৪ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা ও পানি রাজস্ব তহবিলে ৫৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
অপর দিকে উন্নয়ন খাতে আয় ধরা হয়েছে, ৮৭ কোটি ৩৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্য উন্নয়ন তহবিল ৫ কোটি ১৬ লাখ ১১ হাজার টাকা, মূলধন তহবিল ৩ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, প্রকল্প হিসাব (আইইউজিআইপি) ৭০ কোটি ৪৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ৩ কোটি ৬১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ও লোকাল গভর্ণমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স এন্ড রিকভারি প্রজেক্ট (এলজিসিআরআরপি) ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৪ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন তহবিল ৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মূলধন তহবিল ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা, প্রকল্প হিসাব (আইইউজিআইপি) ৬৯ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ২ কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার টাকা ও লোকাল গভর্ণমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স এন্ড রিকভারি প্রজেক্ট (এলজিসিআরআরপি) ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
বাজাটে উদ্বৃত্ত থাকবে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন তহবিল ৬১ লাখ ৬১ হাজার টাকা, মূলধন তহবিল ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, প্রকল্প হিসাব (আইইউজিআইপি) ৮৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ৮৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ও লোকাল গভর্ণমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স এন্ড রিকভারি প্রজেক্ট (এলজিসিআরআরপি) ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
বাজেট ঘোষনার পূর্বে বক্তব্য রাখেন, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ ও ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ জাহিদুল আযহার আলম বেপারী, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান, টিলসিসির সদস্য মো. হারুন অর রশিদ প্রমুখ। শুরুতেই পবিত্র কোরআন মাজিদ থেকে তেলওয়াত করেন, বাস টার্মিনাল জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মো. ফয়সাল আহমেদ।
বাজেট পরবর্তীতে প্রশ্নত্তোর পর্বে সংবাদকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খালেকুজ্জামান শামীম, হাছান মাহমুদ, মহিউদ্দিন আল আজাদ, মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ ও জহিরুল ইসলাম জয় প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র-২ আজাদ হোসেন, প্যানেল মেয়র-৩ রোকেয়া বেগম, কাউন্সিলর মাইনুদ্দিন মিয়াজী, আলাউদ্দিন মুন্সী, মোহাসীন ফারুক বাদল, সুমন তপদার, মো. শাহআলম, কাজী মনির হোসেন, হাজী কবির হোসেন, মো. বিল্লাল হোসেন, সাদেকুজ্জামান মুন্সী ও মো. শাহআলমসহ সুধীজন ও সংবাদকর্মীরা।
উল্লেখ্য, গত (২০২৩-২০২৪) অর্থ বছরে ১১৫ কোটি ৪ লাখ ১ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করা হয়। এবারের ঘোষিত বাজেট হচ্ছে ১১৭ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার ২৫০ টাকা। যা গত অর্থ বছরের (২০২৩-২০২৪) চেয়ে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা বেশি।

একটি অনুসরণীয় পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছি
…………আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন

সোমবার (৮ জুলাই) হাজীগঞ্জ পৌরসভার বাজার পরিদর্শক খাজা সাফিউল বাসার রুজমনের উপস্থাপনায় পৌরবাসীর উদ্দেশে সাংবাদিক ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মেয়র আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, প্রায় ৩৯ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮৫ সালের ১৪ মার্চ হাজীগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে দেশের ৩২৯টি পৌরসভার মধ্যে হাজীগঞ্জ পৌরসভা প্রথম সারির একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে সুনাম রয়েছে। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় পৌরসভাকে সমৃদ্ধ করতে অনেক গুণীজন এবং আমার পূর্বসূরী মেয়রগন অনেক শ্রম ও মেধা প্রদান করেছেন। আমি আমার পূর্বসূরী সেসব গুণীজন ও আমার পূর্বসূরী মেয়রদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি আমি, পৌর পরিষদের সকল কাউন্সিলরদেরকে নিয়ে ১ম বার দায়িত্বভার গ্রহনের পর পৌরবাসি ও আপনাদের সহযোগীতায় হাজীগঞ্জ পৌরসভার সার্বিক কর্মকান্ডে নতুন সৃষ্টিশীল ও ইতিবাচক ধারা প্রবর্তনের মাধ্যমে পৌরবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণে পৌরসভার সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে পেরেছি। এজন্য আমি হাজীগঞ্জ পৌরবাসী ও আপনাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।
পৌর পরিষদ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে আ.স.ম মাহবুব-উল আলম লিপন বলেন, বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবারও শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে গত ২৯ মে বাজেট মতবিনিময় ও পরামর্শ করেছি এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেট যাতে গণমুখী, জনকল্যান কর ও বাস্তব সম্মত হয় সে ব্যাপারে আমরা টাউন লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির (টিএলসিসি’র) সদস্যবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করি এবং সবার মতামতের ভিত্তিতে খসড়া বাজেট প্রস্তুত করেছি।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃত অর্থে জনগনকে সেবা দেয়া। সে লক্ষ্যে আমি পৌর পরিষদের সদস্য ও পৌরবাসীর মতামতের প্রেক্ষিতে পৌরসভার কার্যক্রমকে ঢেলে সাজিয়েছি। মেয়র হিসেবে শুধু চেয়ার দখল নয়, আপনাদের তথা পৌরবাসীর সেবক হিসেবে সেবা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নানা সীমাবদ্ধতা ও বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন, পৌরবাসি এবং আপনাদের সহযোগিতায় আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকার উন্নয়ন অব্যাহত আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
নিন্দুকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নিন্দুকের সমলোচনা আমার কাজের অনুপ্রেরণা। আমার অফিস এবং বাসার দরজা পৌরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে খোলা থাকবে। পৌরবাসী সবসময় তাদের যে কোন প্রয়োজনে কাছে পাবে এটা ছিল আমার অঙ্গীকার। আমি আমার অঙ্গীকার ভুলিনি, পৌরবাসি তাদের ব্যক্তিগত বা এলাকার উন্নয়ন কিংবা যে কোন প্রয়োজনে আমাকে সর্বদা আন্তরিকতার সাথে পাশে পেয়েছে মর্মে আমি বিশ্বাস করি।
সাংবাদিক ও সুধি সমাজের উদ্দেশে পৌর মেয়র বলেন, আপনারা হলেন সমাজের বিবেক, আমি বিশ্বাস করি মহান রাব্বুল আলামিন সহায় থাকলে, আপনাদের তথা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং হাজীগঞ্জবাসীর দোয়া ও আশীর্বাদ থাকলে আমাকে জনগণ ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করা থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমি প্রতিনিয়ত হাজীগঞ্জ পৌরসভার কর্মকান্ডকে পৌরবাসীর আরও কাছাকাছি নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছি। পৌর এলাকায় যারা হতদরিদ্র পরিবার, তাদের সন্তানদের শিক্ষা সহায়তা, দরিদ্র অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা ইত্যাদি প্রতিনিয়ত করে আসছি। আর্ত মানবতায় সেবায় হাজীগঞ্জ পৌরসভা যাতে একটি অনুসরনীয় পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে প্রচেষ্টা আমার রয়েছে।
পৌরাবাসীর উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, আপনাদের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়ে আপনাদের সেবায় নিজেকে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি ছুটছি পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে। বাস্তবায়ন করেছি আপনাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের রাস্তা ঘাটসহ নানাবিধ অবকাঠামোগত উন্নয়ন। দিয়েছি সেবা, পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসা ও দোয়া। ভবিষ্যতেও আপনাদের এই ভালোবাসা ও দোয়া অব্যাহত থাকবে এই প্রত্যাশাই রাখছি আপনাদের কাছে।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ্র অশেষ মেহেরবানী এবং আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতায় আমি আমার পরিষদের সদস্য তথা কাউন্সিলরগণ এবং পৌরসভায় কর্মরত কর্মকর্তা- কর্মচারিদেরকে নিয়ে হাজীগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়নের সার্বিক লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। পৌরসভার কর্মকান্ডে আপনারা যেভাবে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আপনারা পৌরসভার কাজকে জনস্বার্থ বিবেচনা করে সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেজন্য মেয়র হিসেবে আপনাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ভবিষ্যতে আমরা সবাই কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে পৌরসভাকে একটি আধুনিক, সুন্দর ও বাসযোগ্য পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।

০৯ জুলাই, ২০২৪।