মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্
হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সাথে বৈষম্য, অসদাচরণ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষার্থীদের অবাধ মেলামেশা সুযোগ প্রদানসহ একাধিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা আক্তার। হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে কলেজের শিক্ষক মিলনাতয়নে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফাতেমা আক্তার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক ও সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, শিক্ষার গুণগত মান বিনষ্টে পাঠদানে শিক্ষকদেরকে অনীহা দেখানো, নির্বাচনী ও প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নকল সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো, এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে বৈষম্য তথা প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করেন।
এছাড়াও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সাথে অনৈতিক আচরণ, শিক্ষার্থীদেরকে সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিরুৎসাহিত করা, শিক্ষকদের এসিআর খারাপ ও বেতন বন্ধের হুমকীসহ নানা অভিযোগ উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগে কলেজের সহকারি অধ্যাপক রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও অনৈতিক আচরণের কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে অধ্যক্ষের প্রতি একটি অদৃশ্য আতংক নিয়ে শিক্ষকরা কলেজে দায়িত্ব পালন করছেন বলেও অভিযোগ করেন ফাতেমা আক্তার।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার ধারাবাহিক ফলাফল চলতি বছরে এসে থমকে দাঁড়ায়। এর জন্য ৬০ ভাগ দ¦ায়ী অধ্যক্ষ। তিনি এই শিক্ষার্থীদের একে একে তিনবার ফি নিয়ে নির্বাচনী পরীক্ষা নিয়েছেন। মোবাইল দেখে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এবং মেয়েদের লম্বা দৌড়ের খেলা চালু করেন। যা একটি মফস্বলের কলেজ হিসেবে শালীনতা ভঙ্গ হয় বলে আমরা পূর্বে নিরুৎসাহিত করতাম।
ফাতেমা আক্তার বলেন, ইচ্ছেমত শিক্ষার্থীদের অবাধে মেলামেশার সুযোগ তৈরি করেছেন, নিয়মিত পাঠদান থেকে বিরত এবং শিক্ষকদের নিরোৎসাহী করেছেন। এতে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অতিতে কলেজে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি থাকতো কিন্তু বর্তমানে ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী নিয়মিত থাকে, বাকিরা প্রায় অনুপস্থিত। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে অংশগ্রহণকারী জেলা পর্যায়ে প্রথম হওয়া দুই শিক্ষার্থীকে তিনি নিরুৎসাহীত করেছেন। পরবর্তীতে চাপের মুখে তিনি ওই শিক্ষার্থীদের বিভাগীয় পর্যায়ে এবং জাতীয় পর্যায়ে পাঠাতে বাধ্য হন।
অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি (অধ্যক্ষ) সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে কলেজের স্কাউট কক্ষে থাকেন কেন? ওই কক্ষে অফিসের নারী স্টাফ দিয়ে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত খাওয়া দাওয়ার জন্য নিয়োজিত রাখেন। কেন তিনি পুরুষ পিওন রাখেন না? সহকারী অধ্যাপক রাশেদ স্যারকে অতিরিক্ত প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা ও অন্যান্য বিলে মারুফের নাম থাকে। অথচ সে গত এক বছর সে কলেজে আসে নেই।
তিনি আরও বলেন, কলেজের দুইজন নাইটগার্ডকে দিয়ে দিনের বেলা কাজ করান। একজন স্টাফের ছেলে ও অপর এক স্টাফের স্ত্রীর নাম দিয়ে কাজ দেখানো হচ্ছে। অথচ তারা কাজ করে না। আমি ও মল্লিকা ম্যাডাম, হারুন স্যারসহ সিনিয়র শিক্ষকদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেন। মল্লিকা ম্যাডাম ও আমার কলেজ অংশের বেতন ও ঈদ বোনাস না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। এবং শিক্ষকদের এসিআর খারাপ করে দেওয়া হুমকি দেন।
ফাতেমা আক্তার বলেন, প্রতিষ্ঠান সরকারি হলেও আমরা ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর আত্মীকরণ হয় নাই। যার ফলে আমরা এমপিও সুবিধা পেয়ে থাকি। সে হিসেবে আমার বয়স ৬০ বছর পর্যন্ত আমি শিক্ষকতা করতে পারবো। অথচ তিনি গত পহেলা জুন আমার ৫৯ বছর পূর্ণ হলে তিনি আমাকে জোরপূর্বক অবসরে পাঠান। এতে আমিসহ মল্লিকা ম্যাডাম আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তিনি আমাদের প্রাপ্য বেতন ও বোনাস বন্ধ করে দিয়েছেন। এসময় কয়েকজন শিক্ষক ছাড়াও একাধিক শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
এদিকে সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, তিনি (সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা আক্তার) আমার প্রতিষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অথচ আমি জানিনা। তিনি বিধি-বর্হিভুত কাজ করেছেন। তাছাড়া ডিগ্রি পরীক্ষা চলমান থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানে ১৪৪ ধারা জারি। এর মধ্যে তিনি রিটায়ার্ড পার্সন হয়ে কিভাবে প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া সংবাদ সম্মেলন করেন এবং ওনি-তো আমাকে বলতে পারতেন?
অবসরের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী ৫৯ বছর পূর্ণ হলে তিনি অবসরকালীন ছুটিতে যাবেন। আর এক প্রতিষ্ঠানে ২টি নিয়ম চলতে পারে না। তিনিসহ নন-ক্যাডারে শিক্ষক এবং কর্মচারীসহ ১৯ জন আত্মীকরণ হয়ে গেছেন। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৩ থেকে চিঠি এসেছে। তাই, নিয়ম অনুযায়ী তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরকালীন ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
স্কাউট কক্ষের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের রেস্টরুম থাকে। আমি ওই কক্ষটি রেস্টরুম হিসেবে দিনে ব্যবহার করি এবং রাতে বাসায় থাকি। তাছাড়া ওই রেস্টরুমটি রাতে থাকার উপযোগী নয়। যেহেতু রাতে আমি থাকি না, সেহেতু ওই রেস্টরুমে রাত ১০/১১টায় খাওয়া-দাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য মিথ্যা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, তারা প্রতিষ্ঠানের খরচে বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে। এসময় অন্যান্য সকল অভিযোগ অস্বীকার এবং এর বিপরীতে বক্তব্য উপস্থাপন করে তিনি আরও বলেন, এই মূহুত্বে এসিআর দেওয়ার সুযোগ নেই। পূর্বের অধ্যক্ষগণ ওনাদের (শিক্ষক) এসিআর দিবেন। কারণ, এই প্রতিষ্ঠানে আমার চাকরির বয়স ১ বছরের কিছু বেশি। তাই, আমি এসিআর দিতে পারবো না। এই বছরের (২০২৪) পর আমি এসিআর দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল সংবাদকর্মীদের বলেন, বিষয়টি ডিজি কার্যালয় ছাড়া কারো হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। কোনো ধরনের তদন্তের প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করতে পারি।
এ বিষয়ে আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় কুমিল্লার পরিচালক প্রফেসর সোমেশ কর চৌধুরীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকর্মীদের প্রাথমিকভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো ও পরামর্শ নেয়ার আহবান জানান।
০৫ নভেম্বর, ২০২৪।