অনাকাক্সিক্ষত টানা বৃষ্টিতে হাইমচরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

হাইমচর ব্যুরো
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ফের মাথায় হাত পড়ল হাইমচরের কৃষকদের। টানা ৩ দিনের বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় সবজির মাঠে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়েছে পাকা আমন ধান, বোরো বীজতলা, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পেঁয়াজ, শসাসহ শীতকালীন ফসল।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) হাইমচরের চরভাঙ্গার কৃষক মাহমুদউল্লাহ গাজী জানান, টানা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, সিম, পাকা আমন ধান, বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গত তিনদিনের বারিবর্ষণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। কৃষকরা জানান, আলু, গম, বোরোর বীজতলা, সরিষাসহ শীতকালীন ফসলের ক্ষেতে পানি জমে গেছে। পানি না সরলে এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ৩ দিনের টানা বারিবর্ষণে হাইমচরে সরিষা ৫০ হেক্টর, মরিচ ৪০ হেক্টর, পেয়াজ ৫০ হেক্টর, রসুন ২০ হেক্টর, মসুর ডাল ৫০ হেক্টর, খেসারী ৩০ হেক্টর, শাকসবজি ১৯৫ হেক্টর জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেবব্রত সরকার বলেন, আমরা আমাদের উপসহকারী কৃষি অফিসারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে আগামীতে কৃষি প্রণোদনা বৃদ্ধি বা পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর ইতোমধ্যে কৃষকের পাশে থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য উপসহকারী কৃষি অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, এবার হাইমচরে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪০৫ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ১৪২০ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে হাইমচরের উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে অধিকাংশ এলাকার মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার বোরো বীজতলা। অনেক এলাকার রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
অসময়ের টানা বৃষ্টিতে অধিকাংশ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে আলু চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আলু অতি লাভজনক হওয়ার কারণে এবছর অনেকেই আলু চাষের দিকে ঝুঁকেছেন।
কিন্তু গত ৩ দিনের অতিবৃষ্টিতে আলুর ফসলি মাঠে পানি জমে গেছে। ফলে যেসব জমিতে পানি জমেছে ঐসব জমির আলু হবে না। আলুর উৎপাদন কিছুটা হলেও দ্রুত পচন ধরবে বলে মনে করছেন চাষীরা।
ফসলি জমির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে হাইমচরের কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মাঠকে মাঠ ফসলি জমি এখন পানির নিচে রয়েছে। এর মধ্যে যেসব ফসল এখনই ঘরে তোলার সময় হয়েছে সেইসব ফসলও ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে কৃষকদের।

০৮ ডিসেম্বর, ২০২১।