স্টাফ রিপোর্টার :
অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ রোববার চাঁদপুরে প্রস্তবিত নৌ-টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
তিনি রোববার পৌনে ৩টায় চাঁদপুর স্টেডিয়ামে হেলিকাপ্টারে অবতরণ করে লঞ্চঘাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। বিকেল ৩টায় চাঁদপুর লঞ্চঘাট পরিদর্শন এবং প্রস্তাবিত টার্মিনাল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও সুধী সমাবেশে যোগদান করবেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চাঁদপুর-৫ আসনের সাংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রায় ৪ একর ভূমির ওপর বর্তমান লঞ্চঘাট শহরের মাদ্রাসা রোডে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক লঞ্চঘাট। প্রায় ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ লঞ্চঘাট নির্মাণ করা হবে। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর একনেকের সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। শহরের মাদ্রাসা রোডে বর্তমান লঞ্চঘাটটি ২ দশমিক ৪৮ একর জমির ওপর অবস্থিত। আরো দেড় একরসহ প্রায় ৪ একর জমির ওপর দ্বিতল ভবনের লঞ্চঘাট তৈরি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর নৌ-বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক ও নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, দুইতলা বিশিষ্ট আধুনিক এই লঞ্চঘাটে ৬টি নতুন পন্টুন, ৬টি গ্যাংওয়ে, নৌ থানার স্থায়ী কার্যালয়, যাত্রী বিশ্রামাগার, নিশি বিল্ডিং এলাকার উত্তর পাশ দিয়ে ২০ ফুট চওড়া রাস্তাসহ দু’টি ওয়ানওয়ে রাস্তা হবে। এছাড়া ঘাটে ৪-৫টি সিএনজি-অটোরিক্সা পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে আধুনিক লঞ্চঘাটে।
চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতেই সরকার আধুনিক মানের স্থায়ী নৌ-টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে প্রতিদিন এ পথে চলাচলকারী চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলগামী হাজার হাজার যাত্রীর সুবিধা হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় দু’শ বছর আগে ডাকাতিয়া-মেঘনা নদী ঘিরে চাঁদপুর নদী বন্দর সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন আমলে আইজি এন্ড আরসিন কোম্পানী ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে স্টিমার ঘাট এবং রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠা করে চাঁদপুর নৌ-বন্দরের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে। তখন অবিভক্ত বাংলার সাথে আসাম-বেঙ্গল সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা এ নদী বন্দরকে ঘিরেই গড়ে উঠে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, পাকিস্তান শাসনামলে স্টিমার ঘাট, রেল স্টেশন সংলগ্ন স্থানে বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনা করে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ও নৌ-বন্দর টার্মিনাল প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৯৮ সালের বন্যায় আকস্মিক ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে চাঁদপুর রেল স্টেশন ও লঞ্চঘাটের অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে নৌ ও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন সরকার পুরাতন লঞ্চ টার্মিনালের কিছুদূর পূর্ব দিকে নতুনভাবে চাঁদপুর লঞ্চঘাট নির্মাণ করে। ১৯৯৪ সালের ২০ আগস্ট মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে সৃষ্ট ঘূর্ণিস্রােতের কবলে কাত হয়ে দ্বিতল একটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। সেই সময় শতাধিক যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিরাপদ নৌ-পথ এবং নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ শহরের মাদ্রসা রোডে বিকল্প আরেকটি লঞ্চঘাট নির্মাণ করে। পরবর্তীতে বর্ষা মৌসুমের তিন থেকে চার মাস মাদ্রাসা রোডের অস্থায়ী ঘাটে লঞ্চঘাট স্থানান্তরিত হতো। একটা সময় বিকল্প এই লঞ্চঘাটের চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালের সব কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। আধুনিক লঞ্চঘাট নির্মাণের বাজেট অনুমোদন হওয়ায় চাঁদপুর লঞ্চঘাট স্থায়ীভাবে মাদ্রাসা রোডেই হয়ে যায়। মাদ্রাসা ঘাটে স্থায়ী লঞ্চঘাট নির্মিত হলে শুধু চাঁদপুরবাসীই নয়, আশপাশের জেলার নৌ-যাত্রীরাও এর সুফল পাবে। বিশেষ করে ঈদ যাত্রীদের আর হয়রানীর শিকার হতে হবে না বলে সুধীমহল মনে করছে।
- Home
- প্রথম পাতা
- আজ চাঁদপুরে নৌ-টার্মিনালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন