আজ চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন

ইলশেপাড় রিপোর্ট
আজ শনিবার (১০ অক্টোবর) বহুল আকাক্সিক্ষত চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৫২টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে (ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে) ভোটগ্রহণ করা হবে। উৎসবমুখর এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ প্রার্থীসহ ১৫টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ৫টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৬৭জন প্রার্থী চূড়ান্ত ভোটযুদ্ধে লড়ছেন। ইতোপূর্বে প্রত্যেক প্রার্থীই ভোটারদের কাছে তাদের নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজ তাদের ভাগ্য পরীক্ষা। কে হবেন নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলর?
হাইকোর্টে বার-বার অনাকাক্সিক্ষত রিট দায়ের করে নির্বাচন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার পরও এবারের নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিলো খুবই উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ। উল্লেখযোগ্য তেমন কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। কোন হাঙ্গামা বা নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। মিছিল-মিটিং হলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চালচলন ছিলো সহযোগিতামূলক। প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা চালিয়েছেন শান্তিপূর্ণভাবে।
নির্বাচনে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪শ’ ৮৭ জন পৌরবাসী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৮ হাজার ১শ’ ৪৪ জন ও নারী ভোটার ৫৮ হাজার ৩শ’ ৪৩ জন। নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে মাঠ পর্যায়ে থাকছে কয়েক পর্যায়ের নিরাপত্তা বলয়।
আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ান আনসারের সমন্বয়ে ৩টি মোবাইল ফোর্স ও ১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স। র‌্যাবের ৬টি মোবাইল টিমের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ২ প্লাটুন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন পুরো পৌর এলাকায়। আইন-শৃঙ্খলা সদস্যরা নির্বাচনী এলাকায় ভোটগ্রহণের দিনসহ পূর্ববর্তী ২ দিন ও পরবর্তী ১ দিন দায়িত্ব পালন করবেন।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১৫টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা হলেন- সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজিব, মো. মেহেদী হাসান মানিক, অলিদুজ্জামান, আজিজুন্নাহার ও মো. উজ্জ্বল হোসেন।
এদিকে চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচনে মোট ২১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বলে জানান পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান। এসব কেন্দ্রে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখছে প্রশাসন। নির্বাচনের দিন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স কেন্দ্রে অবস্থান নিবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে এবং পুলিশের সংখ্যা স্বাভাবিক কেন্দ্রের তুলনায় বেশি থাকবে।
আজকের নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৫টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ৫০ জন, আর মহিলা কাউন্সিলরের ৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ১৪ জন। সব প্রার্থীই তাদের প্রচার-প্রচারণা শেষ করে এখন জয়ের মালা নিয়ে দায়িত্ব পালনের অপেক্ষায়।
মেয়র পদে অংশ নেয়া ৩ প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. জিল্লুর রহমান জুয়েল (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আক্তার হোসেন মাঝি (ধানের শীষ) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আলহাজ মামুনুর রশিদ বেলাল (হাতপাখা)।
নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়েছেন ভোটারের। ৩ জন মেয়র প্রার্থী পৌরসভায় কাউকে দুর্নীতি করতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন। আধুনিক, নান্দনিক ও বসবাসযোগ্য চাঁদপুর গড়তে নির্বাচনী ইশতেহারে তারা রেখেছেন নানা পরিকল্পনা। নির্বাচনে অংশ নেয়া মেয়র ও কাউন্সিলর প্রত্যেক প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
তবে হাইকোর্টে বার-বার অনাকাক্সিক্ষত রিট দায়ের করে নির্বাচন বাঁধাগ্রস্ত করায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছিলেন প্রায় নিষ্প্রাণ। গত দু’সপ্তাহ যাবত ৩ মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণা প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণযোগ্য হয়েছে আজকের নির্বাচন। গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশে ৩ জনের মধ্যে সবদিক থেকেই এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত তরুণ মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল। তাঁর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইতোমধ্যেই তিনি চাঁদপুরবাসীর মন জয় করে ফেলেছেন।
এদিকে মেয়র পদে ৩ প্রার্থীই নিজেদের যোগ্য দাবি করে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তারা ৩ জনই ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ভোটাররা বলছেন, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকেই তারা শেষ পর্যন্ত মেয়র হিসেবে বেছে নেবেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ মনোনীত তরুণ মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল ব্যাপক গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও গণজমায়েতের আয়োজন করে পৌরবাসীর দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি আচরণ ছিলো অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার। তিনি নিজে বিএনপি প্রার্থীর কার্যালয়ে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সময়-অসময়ে তিনি খোঁজ নিয়েছেন বিএনপি প্রার্থীর প্রতি।
এছাড়া তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাঁদপুর পৌরসভার সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পৌরবাসীকে। তিনি চাঁদপুরকে একটি আধুনিক পৌরসভার গড়তে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং যানজট নিরসনসহ মৌলিক সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি চাঁদপুরকে নান্দনিকভাবে গড়ে তুলবেন বলে তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে আহ্বান জানান।
বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী মো. আক্তার হোসেন মাঝি সমানতালে গণসংযোগ করলেও তিনি অভিযোগ তুলছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চলাকালীন সময়ে তিনি ব্যাপক বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় তার ব্যানার ও পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে। এছাড়া ইভিএম ভোটিং পদ্ধতির ত্রুটি নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী। তবে তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য প্রত্যেক ভোটারকে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে পুরো নির্বাচনই যে ঝুঁকিপূর্ণও, তাও তিনি বলছেন।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মামুনুর রশিদ বেলাল ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, ভোটে জয়লাভের মধ্যে দিয়ে তিনি পৌরবাসীর একজন খাদেম হিসেবেই থাকতে চান। পাশাপাশি পৌরবাসীর উপর করের বোঝা কমিয়ে জনবান্ধব পৌরসভা হিসেবে গড়তে চান চাঁদপুরকে।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডে নির্ধারিত ৫২টি কেন্দ্রে মোট ৩০৫টি কক্ষ ব্যবহারের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখানে ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৪শ’ ৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৮ হাজার ১শ’ ৪৪জন এবং নারী ভোটার ৫৮ হাজার ৩৪৩ জন। এছাড়া বুধবার পৌরসভার জন্য ৬১০ সেট ইভিএম এসে পৌঁচেছে। নির্বাচনে ৫২ কেন্দ্রে ৫২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৩০৫টি কক্ষে ৩০৫ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং কক্ষপ্রতি ২ জন করে পোলিং অফিসার অর্থাৎ ৬১০ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সফিকুর রহমান ভূঁইয়ার মৃত্যুতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর করোনার কারণে কালক্ষেপণ হলেও আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চাঁদপুর পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় ১৫ বছর পর চাঁদপুর পৌরবাসী পাচ্ছেন তাদের নতুন অভিভাবক।
আজ শনিবার ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে প্রথমবারের মতো চাঁদপুর পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন, কাউন্সিলর পদে ৫০ জন এবং মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১০ অক্টোবর, ২০২০।