আজ শহীদ রাজুর ৩০তম শাহাদাতবার্ষিকী

স্টাফ রিপোর্টার
আজ ৩ ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের এ দিবসটি ছিলো অগ্নিঝরা। ওইদিন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে উঠে চাঁদপুর জেলা শহর যেন কাঁপছিলো। ৫ দিন আগে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে-লড়তে এ দিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চাঁদপুর সরকারি কলেজ শাখার তৎকালীন নেতা ও কলেজের মেধাবী ছাত্র জিয়াউর রহমান রাজু পাটোয়ারী।
১৯৯০ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২৭ নভেম্বর ঢাকায় বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. সামছুল আলম মিলন নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিক্ষোভের দাবানল জ্বলে উঠে। তারই প্রেক্ষিতে পরদিন ২৮ নভেম্বর সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ সরকারি কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। ওই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের দ্বাদশ বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউর রহমান পাটোয়ারী রাজু। মিছিলটি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে চিত্রলেখা সিনেমা হল মোড়ে আসামাত্র কোনো প্রকার উস্কানি বা উত্তেজনা ছাড়াই পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালায়। ওই সময় একটি গুলি মিছিলের সম্মুখভাবে থাকা রাজু পাটোয়ারীর নাভীর নিচ দিয়ে শরীরে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন সময় ছিলো সকাল ১১টা ২০ মিনিট। পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে আহত রাজুকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে আসা হয়। চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দিনভর চিকিৎসার পর গুলিবিদ্ধ রাজুর জ্ঞান ফিরে আসে রাত ১০টায়। ওই দিন রাজুর চিকিৎসার জন্যে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে চাঁদপুরের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়ার জন্যে হাসপাতালে ভিড় জমায়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও বয়দের ছিলো না কোনো অবহেলা। ৪১ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের পর বেশিরভাগ রক্তই দেয়া হয়েছিলো রাজুর শরীরে। দীর্ঘ চেষ্টার পরও রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যায়নি। টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৬ দিনের মাথায় ৩ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জিয়াউর রহমান রাজু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাৎক্ষণিক এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর শহরে বিক্ষোভের দাবানলের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল করিম পাটোয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম অ্যাড. আব্দুল আউয়াল, মরহুম অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম, মরহুম এম সফিউল্যাহ, অ্যাড. ফজলুল হক সরকারের হস্তক্ষেপে ওই দাবানল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
হাজার হাজার শোকার্ত মানুষের শোক মিছিল ও জানাজা শেষে চাঁদপুর সরকারি কলেজ মাঠের পশ্চিম পাশে ও শহীদ মিনারের ডান পাশে শহীদ জিয়াউর রহমান রাজু পাটোয়ারীকে সমাধিস্থ করা হয়। রাজু ছিলেন চাঁদপুর শহরের বহুল পরিচিত আজিম পাটোয়ারী (বর্তমান করিম পাটোয়ারী বাড়ি) বাড়ির মরহুম মো. ফজলুর রহমান পাটোয়ারীর বড় ছেলে এবং চাঁদপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব, চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আব্দুল করিম পাটোয়ারীর ভ্রাতুষ্পুত্রের ছেলে।
১৯৭৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজু জন্মগ্রহণ করে। মৃত্যু পর্যন্ত তার বয়স হয়েছিলো ১৬ বছর ১০ মাস ২ দিন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সে সময়কার বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরে সফরে আসলে পাটোয়ারী বাড়ির প্রতিটি ঘরে ঘরে সাক্ষাৎ ও দেখা করার পর শহীদ জিয়াউর রহমান পাটোয়ারী রাজুর মা-বা ও ভাই-বোনের সাথে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে তাদের সান্ত্বনা দিয়ে যান। ১৯৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর ও ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল চাঁদপুরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারি সফরে এসেও রাজুর পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।
শহীদ রাজুর ৩০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিকভাবে এবং শহীদ রাজু স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চাঁদপুর জেলা শাখা ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঃ সকাল ১০টায় কালোব্যাজ ধারণ ও শহীদ রাজুর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদ রাজুর পরিবারের পক্ষে থেকে আজ আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কস্থা তালতলা পাটওয়ারী বাড়ি জামে মসজিদে শহীদ রাজুর রুহের মাগফেরাত কামনা করে বাদ আছর দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
০৩ ডিসেম্বর, ২০২০।